বাচ্চাকে টিভি আর গেমসে অভ্যস্ত করছেন? পরিণামটাও জেনে নিন তাহলে!

শিশুদের টিভি দেখা থেকে বিরত রাখা অনেকটা অসম্ভব। সাধারণত বাবা-মা, ভাই বোনের
সাথে শিশুরা টিভি দেখে থাকে। আজকাল এমন
অবস্থা হয়েছে যে, টিভি দেখতে না দিলে অনেক শিশু কান্না জুড়ে দেয়, আর টিভি চালু
করলেই শিশু শান্ত। অনেক মায়েরা টিভি দেখতে দেখতে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করে। কোন
একটি বিশেষ গান অথবা বিজ্ঞাপন চালু হলে শিশু খাবার খায়, কিন্তু যেই গান বন্ধ হয়ে যায় তার সাথে শিশুর খাওয়া
বন্ধ হয়ে যায়। আপনি কি জানেন এই অতিরিক্ত টিভি দেখা একপর্যায়ে
আসক্তিতে পরিণত হতে পারে যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
শহরগুলোতে মাঠের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে শিশুরা খেলাধুলা করার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এই অবসর সময় কাটানোর জন্য
শিশুরা টিভি অথবা ভিডিও গেইমের উপর নির্ভর হয়ছে। কিন্তু শিশুদের শারীরিক
ও মানসিক গঠনের জন্যে খেলাধুলা করাটা বেশ জরুরী। এই ভিডিও গেইম এবং টিভি শিশুর মারাত্নক
ক্ষতি করছে। ভাবছেন কীভাবে? আসুন তাহলে জেনে নিন টিভি এবং ভিডিও গেইম কীভাবে আপনার
শিশুর ক্ষতি করছে।
১। সময় নষ্ট করা
মূলত টিভিতে ২ বছরের ছোট শিশুদের জন্য কোন শিক্ষানীয় কিছু
দেখায় না। ছোট শিশুদের জন্য টিভি দেখা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। টিভি দেখা
সময়টিতে আপনার শিশুকে অন্য কোন কাজ যেমন ছবি আঁকা অথবা লেগো খেলা ইত্যাদি করতে
দিন। টেভি অথবা ভিডিও গেইমের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে এইগুলো তার মানসিক
বিকাশে সহায়তা করবে।
২। ওজন বৃদ্ধি
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশুরা দিনে চার ঘণ্টা বেশি সময়
টিভি দেখে তাদের ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি থাকে। তিনভাবে তাদের ওজন বৃদ্ধি পায়।
এক দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা (কোন শারীরিক কর্মকান্ড না করা)। দুই টিভি দেখার সময়
অতিরিক্ত ক্যালরি খাবার যেমন চিপস, চকলেট, ক্লোড ড্রিংক্স গ্রহণ। তিন খাবার
সঠিকভাবে হজম না হওয়া।
৩। অনিয়মিত ঘুম
অতিরিক্ত টিভি দেখা শিশুদের ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। বিশেষ
করে রাতে টিভি দেখার কারণে অনিয়মিত ঘুমের চক্রের মধ্যে পড়ে যায় শিশুরা।
৪। চোখের সমস্যা
আজকাল অনেক শিশুকে চোখে চশমা পড়তে দেখা যায়। এত ছোট বয়সে
চশমা পড়ার মূল কারণে রয়েছে অতিরিক্ত টিভি দেখা এবং ভিডিও গেইম খেলা। খুব কাছ থেকে
টিভি দেখা অথবা টানা ভিডিও গেইম খেলার ফলে চোখের সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক সময়
মাথাব্যথা দেখা দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ঘণ্টার পর
ঘণ্টা টিভি দেখে, তাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার ঝুঁকি বেশি!
৫। বোকা করে তুলে
টিভি শিশুর চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। টিভিতে খুব
কম অনুষ্ঠান আছে যা শিক্ষানীয়, যা শিশুর চিন্তার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে।
টিভিতে এমন অনেক কিছুই দেখানো হয় যা বাস্তবাতার সাথে অসামঞ্জস্য।
৬। আচরণে অসামঞ্জস্যতা
মারামারি বা ধ্বংসাত্মক অনুষ্ঠান বেশি দেখার
ফলে শিশুর উগ্র
স্বভাব ও আচরণগত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা
থাকে। এমনিকি এটি তাদের মধ্যে সহিংস আচরণ তৈরি করে। পড়ালেখায় অমনোযোগী করে তোলে।
৭। অনুকরণ করা
শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তারা যা দেখে তাই অনুকরণ করে থাকে। যার ফলে টিভিতে তার প্রিয় চরিত্র যা করে, তাই করার চেষ্টা করে। যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন সুপারম্যানের চরিত্র দেখে অনেক শিশু ছাদ থেকে উড়ার চেষ্টা
করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারায়। আবার কিছু
শিশু টিভিতে ভয়ংকর, অবাস্তব কাহিনী দেখে ভীত হয়ে যায়।
৮। অসামজিক হওয়া
অতিরিক্ত ভিডিও গেইম খেলা
শিশুদের নেশায় পরিণত হয়। যা
তাদের অসামজিক হিসেবে গড়ে তোলে। গেইম খেলার নেশায় শিশুরা বাইরের সমাজ জগৎ থেকে
দূরে সরে যায়।
৯। একা হয়ে পড়া
বন্ধুর তৈরির সবচেয়ে উপযুক্ত
সময় হল শৈশবকাল। আর এইসময়টি বন্ধুদের না দিয়ে ভিডিও গেইমের দেওয়ার কারণে আপনার
শিশু একসময় বন্ধুশূন্য হয়ে পড়ে।
১০। মানসিক বিকারগ্রস্ত
হওয়া
ভিডিও গেইমের আসক্তি
অতিরিক্ত হয়ে গেলে একসময় তা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শিশুরা সারাক্ষণ নতুন নতুন
ভিডিও গেইম এবং তার ভার্সনের কথা চিন্তা করতে থাকে। এক পর্যায়ে এটি মানসিক সমস্যার
কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমেরিকান এ্যাকাডেমি অফ
পেডিয়াট্রিসের মতে, দুই বছরের ছোট শিশুদের টিভি দেখতে দেওয়া উচিত নয়। দুই বছরের
বেশি শিশুদের দিনে এক থেকে দুই ঘন্টা বেশি টিভি দেখতে দেওয়া উচিত নয়। মস্তিষ্ক
উন্নয়নের উপযুক্ত সময় এই শিশুকাল। টিভি, এবং ভিডিও গেইম তাদের চিন্তা ক্ষমতা নষ্ট
করে দেয়।
ভাবছেন কীভাবে টিভির এই কুফল থেকে আপনার শিশুকে
রক্ষা করবেন? এরজন্য রয়েছে কিছু উপায়।
১। প্রথমে শিশুর রুম
থেকে টিভিটি সরিয়ে ফেলুন। যেসব শিশুর রুমে টিভি থাকে, তাদের টিভি দেখার প্রতি
আগ্রহ বেশি থাকে।
২। কখন শিশুদের একা একা
টিভি দেখতে দিবেন না। এতে সহিংস ও যৌন বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখার ঝুঁকি তৈরি হয় শিশুদের।
৩। বাইরের খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ তৈরি করুন।
৪। ছোট থেকে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ভিডিও গেইম খেলার নেশা কমে যাবে।
৫। অনেকে বাবা মায়েরা শিশুদের টিভি দেখতে দেখতে খাবার খাওয়ান। এই অভ্যাস একবার তৈরি হলে তা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই টিভি দেখার পরিবর্তে গান শোনা অথবা অন্যকিছু করার মাধ্যমে
খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
৬। টিভি দেখার একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিন। কিংবা টিভি দেখাটাকে পুরষ্কার হিসেবে প্রদান করতে পারেন। যেমন পরীক্ষা ভাল নম্বর পেলে অথবা দ্রুত পড়া শেষ করা হলে টিভি
দেখার অনুমতি দেওয়া হবে।
৭। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কৃতি কর্মকান্ডে যেমন নাচ, গান, ছবি আঁকার সাথে শিশুকে
সম্পৃক্ত করুন। এতে শিশু অবসর সময় কম পাবে। ব্যস্ত থাকার কারণে টিভি অথবা ভিডিও গেইমে সময় কম দেবে।
শিশুকে সময় দিন। তার সাথে খেলা করুন। গল্প পড়ে শোনান। এই ছোট ছোট কাজগুলো আপনার শিশুকে টিভি দেখা এবং ভিডিও গেইম খেলা
থেকে বিরত রাখবে।
সর্বাধিক জনপ্রিয় আর্টিকেল
-
বাচ্চাকে কথা বলা শেখাবার টিপস
-
বাচ্চার সাথে খেলার আইডিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না? এই ৭ টি ট্রাই করুন
-
কোন বয়সে বাচ্চার কি করতে পারা উচিৎ- বেবি এবিলিটি চার্ট
-
বাচ্চাকে টিভি আর গেমসে অভ্যস্ত করছেন? পরিণামটাও জেনে নিন তাহলে!
-
জেদী বাচ্চাকে সামলে রাখার ১০টি টিপস
-
মা আর বেবির বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলার ৫টি টিপস।
-
বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা ডেভেলপ করার ১০টি টিপস