জেদী বাচ্চাকে সামলে রাখার ১০টি টিপস

আপনার আদরের বাচ্চাটা যখন প্রথম আধো আধো কথা বলা শুরু করেছিল, তখন সে অনেক কথাই ভালভাবে আপনাকে বোঝাতে পারত না ঠিক ভাবে কথা না বলতে পারলে তাদের চাওয়া পাওয়া বোঝানার জন্য একটাই সুযোগ আছে আর তাহল হাত-পা নেড়ে বোঝান বাচ্চার এই হাত নাড়া নাড়িই হয়ত কখন আপনার মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে চিন্তা করবেন না, এটি আপনার বাচ্চার দোষ না আপনি যদি পাশের বাসার মায়ের কাছে শোনেন তার বাচ্চা সারা দিন কি করে, তবে উত্তর আসবে হয়তসারা দিন বসে আমার হাড় আর মাংস আলাদা করে

এই আচরণ পৃথিবীর অনেক বেবিরই ছিল, আছে এবং থাকবে

যাইহোক, আমরা এই আর্টিকেলে জানার চেষ্টা করব কি ভাবে আমরা বাচ্চাদের এই ধরনের আগ্রাসন কমাতে পারি

অনেক সময় আপনার বাচ্চার রেগে যাওয়ার কারণ কিন্তু ইচ্ছাকৃত না, সে চেষ্টা করেছে আপনাকে ভাল ভাবে বোঝানোর জন্য কিন্তু, কথা বলে ভালভাবে বোঝানোর উপায় নাই বলে হয়ত হাত পা চালানো শুরু করছে হাতের কাছের কাঁচের গ্লাসটা আপনি বুঝে উঠার আগেই ভেঙ্গে ফেলছে

আসলে রেগে তো আপনিও যান, কিন্তু রেগে গিয়ে তো আর গ্লাস ভাঙ্গেন না আপনি যে কাজটা করেন তা হল রাগ কমানোর চেষ্টা কারণ, আপনি খুব ভাল ভাবেই বোঝেন আমি যদি স্মার্ট ফোনটা দেয়ালে ছুড়ে মেরে ভেঙ্গে ফেলি তাহলে সমস্যা সমাধান হবে না আপনার বাচ্চাকেও ঠিক এই ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করুন

আসুন তাহলে দেখা যাক কী উপায়ে আপনি আপনার বেবির জেদ বা রাগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন

) কি হয়েছিল বাবু?

মনেকরেন, আপনার বাচ্চা একটু আগেই ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ করে এখন একটু শান্ত আর সাথে সাথে আপনি যেয়ে জেরা করা শুরু করে দিলেন আপনাকে যদি কেউ সময় এসে জেরা করা শুরু করত, আপনার মাথা ঠিক থাকত? আমি নিশ্চিত থাকত না তাহলে, আপনার বাচ্চার কাছ থেকে কি ভাবে আশা করেন, সে অনেক শান্ত গলায় আপনার প্রশ্নের উত্তর দিবে তার রাগ আবার শুরু হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত এইবার হবে নাম্বার বিশ্বযুদ্ধ আপনার কাজ হবে এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ঠোঁটের কোনায় হাসি নিয়ে প্রশ্ন করাবল, বাবু তোমার এত রাগের কারণ কি? তোমার কি মনে হয় আমি তোমার কোন কথা শুনি না?”

আপনি যখন কোন বয়স্ক মানুষকে বোঝানর চেষ্টা করেন, ঠিক ভাবে চেষ্টা করুন তাকে বোঝানোর তবে, অবশ্যই তার মানসিক পরিস্থিতি বুঝে তারপর আর তার কোনটা ভাল লাগে, কোনটা লাগে না এই বিষয় গুলো আপনি পৃথিবির যে কোন মানুষের থেকে ভাল জানেন

চেষ্টা করুন বাচ্চার সাথে কথা বলার সময় আপনার রাগ, কথা যেন দুই দিকে থাকে আপনার কথা বলার সাথে যদি রাগ প্রকাশ পায়, তাহলে বাচ্চাকে কি ভাবে শান্ত রাখবেন?

 

) মাথা ঠাণ্ডা বাবুঃ

আপনার ছোট বাচ্চাটার রাগ ঠিক নিউক্লিয়ার বোমার মত, একটু অসাবধান হলেই সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় তাই সব সময় চেষ্টা করুন, সবসময় আদর করে নাড়াচাড়া করার যদি কখন আপনার বাচ্চা অন্য কাউকে আঘাত করে, কামড়ে ধরে তাহলে প্রথমে তাকে শান্ত করুন, আর শান্ত হওয়ার পর প্রশ্ন করুনকেউ যদি তোমাকে কামড়ে দিত তাহলে তোমার কি ভাল লাগত?” আরো একটু ভাল ভাবে বোঝানর জন্য চেষ্টা করুনমনেকর, কেউ তোমার বড় ভাইকে যদি ঠিক ভাবে আঘাত করে, তাহলে তোমার বড় ভাইও কান্নাকাটি  করবে, তখন তোমার খারাপ লাগবে না?”

) রাগ রাগ খেলাঃ

আপনার বাচ্চাকে যদি দেখেন কোন ভাবেই বোঝান সম্ভাব হচ্ছে না তখন, রাগ রাগ খেলা শেখাতে পারেন আপনার বাচ্চাকে প্রশ্ন করুনবাবু, তোমার রেগে গেলে কি করতে ভাল লাগে তার লিস্ট শোনার পর এই বার আপনার পালা আপনিও একটা লিস্ট দিন যে গুল রেগে গেলে আপনি করে থাকেন এইবার আপনার বাবুর সাথে খেলা করুন কিন্তু চরিত্র বদলে নিয়ে মানে, আপনি রেগে গেলে যা করেন গুলো আপনার বাচ্চাকে করতে বলুন, আর আপনারটা আপনি নিজে কয়েক দিন ধরে চেষ্টা করুন দেখবেন আপনার বাবু আপনাকে কপি করা শুরু করছে নিশ্চয় আপনার লিস্টে রেগে গেলে তাকে কষ্ট দেয়া এই নীতি থাকবে না

) লক্ষ্মী বাবুঃ

চেষ্টা করেন আপনার বাবুর সাথে সব সময় কথা বলার আপনার বাবু যে সারা দিন ঘর মাথায় তুলে রাখে তাতো আর না মাঝে মাঝে সে ভাল কাজও করে যখন, কোন ভাল কাজ করে তাকে অবশ্যই প্রশংসা করুন যদি অন্য কারোর সাথে শেয়ার করে, তা সে খাবার হউক আর খেলনা হউক, তার প্রশংসা করুন আপনি ফোনে কথা বলছেন তখন হঠাৎ করে আপনার পাশে চিৎকার শুরু করল, আপনি হাত দিয়ে ইশারা করলেন, চুপ থাকতে সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল, অবশ্যই কথা বলা শেষ হওয়ার পর বাহ!, আমার বাবুতো একদম লক্ষ্মী হয়ে গেছেআপনার কাছে যদি এর থেকে ভাল শব্দ জানা থাকে সেই গুলো ব্যবহার করুন

) এসো ভাবি

আপনার বাবু কে শান্ত থাকা শেখাতে পারেন এই জন্য তাকে বলুনযখন তুমি রেগে যাবে সাথে সাথে চোখ বুঝে দীর্ঘ শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করো, আর ভাবতে থাক তোমার প্রিয় খাবারে স্বাদ কেমন?”

) সমান সমান

মাঝে মাঝে আপনার বাবুকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তার কোন কাজে আপনিও কষ্ট পেতে পারেন মনে করেন, আপনার পাশের বাসার বাবুটা আপনার বাবুকে গাধা বলে ডাকে আর বলার সাথে সাথে আপনার বাবু তাকে খামচানো শুরু করে এখন আর পাশের বাবু আর গাধা বলে না কিন্তু আপনার বাবু তাকে দেখলেই খামচি দিতে যায় তখন, আপনি তাকে বোঝান তুমি যদি এই খামচানো বন্ধ না কর, তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিব অথবা এই ধরনের কিছু একটা যাতে করে বুঝতে পারে যে তার খারাপ কাজে আপনারও খারাপ লাগে

) ভায়োলেন্ট গেইম, ভিডিও, টিভি সিরিজ বন্ধ করুন

আপনার বাচ্চা স্পাইডারম্যানের ফ্যান হয়ে গেছে কিন্তু সিরিজ গুলো দেখে দেখে সুতরাং, বেশি বেশি যদি মারামারির গেম খেলে অথবা ধরনের চ্যানেল গুলো বেশি দেখতে থাকে তাহলে সে চেষ্টা করবে ভাবেই বিহেভ করতে এখন চেষ্টা করুন সমস্যার মূলটাকে উপড়ে ফেলতে, বন্ধ করুন মারামারিকে উৎসাহিত করে এমন গেইম, টিভি সিরিজ ইত্যাদি বাচ্চাকে অভ্যস্ত করুন বাচ্চাদের বিভিন্ন লার্নিং গেইম অথবা টিভি শো/সিরিজে

) প্রশ্রয় না দেয়া

আপনার আদরের বাবু আজ পাশের বাসার বেবি অথবা স্কুলের ফ্রেন্ডকে খামচি দিয়েছে, আর আপনি ভাবলেন অবুঝ বাচ্চা কিছু বোঝে না পরের দিন এই বাচ্চা দেখা যাবে খেলা করার পুতুল দিয়ে আঘাত করে অন্য বাচ্চার মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে, তখনো কি বলবেন অবুঝ কিছু বোঝেনা এই ঘটনার জন্য কিন্তু আপনিই দায়ী প্রথম দিন যদি তাকে বোঝাতে পারতেন এই কাজটা খারাপ, আপনার পছন্দ না তাহলে, পরের দিন আর ঘটনা ঘটত না সুতরাং, প্রথম দিনেই সাবধান

) চিৎকার করে বাচ্চাকে থামাবেন না

মনে করুন হঠাৎ হৈ চৈ শুরু করেছে আপনার আদরের বাবুটা এবার আপনি আসলেন থামানোর জন্য কিন্তু এসে আপনিও চিৎকার করা শুরু করলেন পরে দেখা গেল, আপনার চিৎকার শুনে বাবু আগের থেকেও আরো বেশি জোরে চিৎকার করা শুরু করেছে। কিন্তু, এটা তো হওয়ার কথা ছিলনা আপনি তো এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য এসেছিলেন

১০) আপনার বাচ্চাকে কে আপনিই জেদী বানাচ্ছেন?

আপনি কোন বাসার কেউ অথবা কাজের মেয়ের ওপর রেগে গিয়ে চিৎকার করলেন অথবা রাগের প্রকাশ হিসেবে কোন কিছু ছুড়ে মারলেন। একটু পরে আপনি ঠিকি শান্ত হয়ে গেলেন, কিন্তু আপনার আদরের বাবু কিন্তু একটা হাতে কলমে শিক্ষা পেয়ে গেছে যেখানে শিক্ষক হলেন আপনি নিজেই আর শিক্ষাটা হলমাও রেগে যায় এবং সেও রাগের প্রকাশ করে, সুতরাং এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার এটা নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই

সুতরাং, আগে নিজে বন্ধ করেন, তারপর বাচ্চাকে বন্ধ করতে বলেন

বোনাস টিপসঃ আপনার নিজের জন্য

আর্টিকেল পড়া শেষ, এখন হাতের কাছে যদি ফোন থাকে তাহলে আপনার মাকে একটা কল দিন আর প্রশ্ন করুনআমি কি ছোট বেলায় তোমাকে অনেক বেশি যন্ত্রণা দিয়েছি?”

উত্তর মায়ের হাসি মাখা উত্তর আসবে হয়তনাহ, তুইত অনেক শান্ত ছিলি পাশের বাসার বাচ্চারা কত জ্বালাত তাদের মায়েদের কিন্তু, তুই অনেক শান্তশিষ্টই ছিলি

বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, আপনার বাচ্চা যেমন আপনাকে অনেক যন্ত্রণা দেয়, আপনি তার থেকে কয়েক গুণ বেশি দিয়েছেন কম দেননি এটা নিশ্চিত

আপনার বাচ্চাকে মানুষ করার জন্য আপনি যেমন অনলাইনে পড়তে এসেছেন তার কিন্তু এমন কোন উপায় ছিল না নিজে নিজেই বুঝে গেছে আপনাকে কিভাবে মানুষ করা লাগবে

এর জন্য যে বিষয়টা তিনি বেশি বেশি করতেন তাহল আপনার সাথে বেশি বেশি সময় কাটানো আপনিও চেষ্টা করুন, আপনার বাচ্চার সাথে সাথে বেশি সময় কাটাতে

আপনার বাচ্চার জন্য শুভ কামনা রইল

আর আপনিও ভাল থাকবেন

রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০