কোন বয়সে বাচ্চার কি করতে পারা উচিৎ- বেবি এবিলিটি চার্ট

শিশুর
মানসিক এবং দৈহিক বিকাশ ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তার জন্য বাবা-মা সদা চিন্তিত থাকেন। অনেকেই
আবার অন্যদের বাচ্চার সাথে নিজের বাচ্চার তুলনা করে চিন্তিত হয়ে পরেন।
কিন্তু
বাচ্চার বয়স অনুযায়ী আচরণ বা সক্ষমতা জানা থাকলে আপনি অযথা টেনশনের হাত থেকে বেচে
যাবেন। অন্যদিকে সত্যিই যদি বাচ্চার বিকাশে কোন অসুবিধা থেকে থাকে তাও ঠিক সময়ে
বুঝতে পারবেন।
আসুন
জেনে নেই বাচ্চারা কোন বয়সে কী করতে পারা উচিৎ।
১ মাস
নবজাতক
শিশুর জন্য ঘুম একটি অতি পরিচিত শব্দ। শিশুর প্রথম এক মাস বয়সে বেশির ভাগ সময় শিশু
ঘুমিয়ে কাটিয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশী কিছু করা শিশুর আয়ত্তে থাকে
না। কিন্তু কিছু ব্যাপার শিশুরা এক মাস বয়সেই করা উচিৎ। যেমনঃ গালে বা মাথায় হাত
বোলালে সেদিকে মাথা ঘোরানো, উভয় হাত মুখের দিকে আনা, পরিচিত গলার আওয়াজ বা শব্দ
শুনলে সেদিকে ঘোরা, স্তন চোষা এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া। এ সকল কিছু প্রতিটি শিশুর এই
বয়সে করতে পারা উচিৎ।
এই বয়সে বাচ্চাদের পর্যাপ্ত যত্নের প্রয়োজন। বাচ্চাকে অনেক যত্নের সাথে নাড়াচাড়া করানো, সব সময় পাশে থাকা, নির্দিষ্ট
সময় পর পর বুকের দুধ খাওয়ানো, হালকা গান গেয়ে ঘুম পাড়ানো ইত্যাদি বাবা-মায়ের খুব
সতর্কতার সাথে করতে হয়।
৬ মাস বয়সে
ছয় মাস বয়সে শিশুদের
কার্যক্ষমতা একটু একটু বাড়তে থাকে। এই বয়সে শিশুরা উবু হয়ে শুয়ে থাকলে মাথা ও বুক উপরে তুলতে পারা উচিৎ। শিশুরা এই বয়সে বিভিন্ন জিনিস ধরার চেষ্টা করে এবং ধরে ঝাঁকাতে চেষ্টা করে। এই বয়সে শিশুরা দুদিকে ঘাড় ঘোরাতে
পারে। অন্যের সাহায্য নিয়ে বসতে পারে। শিশুদের এক ধরণের প্রবণতা তৈরি হয় সেটি হল হাত ও মুখ দিয়ে সব জিনিস যাচাই করার চেষ্টা। এমনকি শিশুরা ধীরে ধীরে শব্দ ও মুখের ভাব অনুকরণ করা শুরু
করে। শিশুরা নিজের নাম শুনলে বা পরিচিত মুখ
দেখলে এক ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায়।
১২ মাস বয়সে
১২ মাস বা এক
বছর বয়স হতে শিশুরা তাদের প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতা কিছুটা পাড় করে আসে। এই বয়সে
শিশুরা আস্তে আস্তে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করে। কারও সাহায্য ছাড়া বসার চেষ্টা করা,
হামাগুড়ি দেওয়া ও দাঁড়িয়ে যাওয়া, কিছু ধরে পা বাড়ানো ইত্যাদি শিশুরা এই বয়স থেকেই
শুরু করে। এই বয়সে শিশুর মুখে বুলি ফুটতে শুরু করে। শিশুরা শব্দ এবং কথা বলার
চেষ্টা করে এবং কিছু বললে বোঝার চেষ্টা করে। শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার প্রবনতা শুরু
হয় এই বয়সেই। সাথে সাথে শিশুরা খেলতে এবং হাততালি দিতে ভালবাসে। এই সময়
শিশুরা আঙ্গুলের ব্যবহার করা শুরু করে। বুড়ো আঙ্গুল বা তর্জনী দিয়ে কোন জিনিস তোলার
চেষ্টা করে। পাশাপাশি কোন জিনিস ধরা যেমন কাপ, চামচ এসব মুখে দিয়ে কামড়ানোর চেষ্টা
করে।
দুই বছর বয়স পর্যন্ত
দুই বছর বয়সে
বাচ্চারা অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। এই বয়সের শিশুরা সব কিছু নিজে নিজেই করার
চেষ্টা করে। শিশুরা ভালভাবে হাঁটা শুরু করে এই বয়সেই। এর সাথে উঁচুতে চড়া এবং
দৌড়ানো এসবে বেশি আগ্রহ দেখা যায়। কোন জিনিষ বা ছবির নাম বললে (যেমন- নাক,
কান) সেটার দিকে দেখানোর
অভ্যাস এই বয়সেই শুরু হয়। ১৫ মাস বয়স থেকেই শিশুরা কয়েকটা কথা একসাথে বলতে পারে।
বাবা-মায়ের সাধারন নির্দেশগুলো শিশুরা পালন করে থাকে।এই বয়সে শিশুদের হাত এবং
আঙ্গুল চলা শুরু করে। হাতে পেন্সিল বা রঙ পেন্সিল পেলে সেটা দিয়ে আঁকাআঁকি শুরু
করে। দুই বছরের শিশুরা সাধারণত গল্প বা গানে মজা পাওয়া শুরু করে। অন্যদের ব্যবহার
অনুকরণ করে এবং নিজে নিজে খাওয়া শুরু করে।
তিন
বছরের সময়
তিন বছর
বয়সের শিশুরা সহজে হাঁটতে পারে, দৌড়ানো, উপরে চড়া, পা ছোঁড়া এবং লাফানো ইত্যাদি
খুব সহজেই করতে পারে। সাধারণ জিনিসপত্র ও ছবি চিনতে পারে এবং আঙ্গুল দিয়ে চিহ্নিত
করতে পারে। পাশাপাশি বাচ্চারা দুই বা তিন শব্দ দিয়ে বাক্য রচনা করতে শুরু করে।
নিজের নাম ও বয়স বলতে পারে। এছাড়াও একটু বুদ্ধিদীপ্ত বাচ্চারা বিভিন্ন রঙের নাম
বলতে পারে, সংখ্যা বুঝতে পারে। বিভিন্ন খেলনার বায়না করা এবং সেসব দিয়ে খেলা করা
শুরু করে। এই বয়সের বাচ্চারা বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গির
মাধ্যমে ভালবাসার প্রদর্শন করে থাকে।
পাঁচ বছর বয়সে
পাঁচ বছর
বয়সী বাচ্চারা অনেক কিছুই নিজে নিজে করতে পারে। এই বয়সি বাচ্চারা
সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে চলাফেরা করতে পারে। সম্পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে এবং বাক্যে
বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার করতে পারে। বিপরীত শব্দের (যেমন মোটা এবং পাতলা, লম্বা এবং
বেটে) অর্থ বোঝা এবং তার ব্যবহার করার চেষ্টা করে। অন্য শিশুদের সাথে খেলতে শুরু
করে এবং কারও সাহায্য ছাড়াই পোশাক পড়তে
পারে। সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। পাঁচ থেকে দশটা জিনিষ গুনতে পারে। নিজের
হাত নিজে ধুতে পারা সহ অনেক বাচ্চা নিজেই গোসল করতে চেষ্টা করে।
পরিশিষ্ট
সময়ের সাথে
সাথে বাচ্চারা একটু একটু করে সব শিখতে থাকে। এটি অনেকটা প্রাকৃতিক উপায়েই হয়ে
থাকে। যদি শিশুরা সঠিক সময়ে সঠিক সামর্থ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় তা হলে বাবা-মায়ের
অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে বাবা -মাকে
অনেক বেশী সতর্ক ও সচেতন হতে হয়। বাবা-মায়ের সঠিক পরিচর্যাই পারে শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে
তুলতে।
আমাদের কেয়ার লাইনে
ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল
৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু
বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে।
আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার
০৮-০০০-৮৮৮-০০০
সর্বাধিক জনপ্রিয় আর্টিকেল
-
বাচ্চাকে কথা বলা শেখাবার টিপস
-
বাচ্চার সাথে খেলার আইডিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না? এই ৭ টি ট্রাই করুন
-
কোন বয়সে বাচ্চার কি করতে পারা উচিৎ- বেবি এবিলিটি চার্ট
-
বাচ্চাকে টিভি আর গেমসে অভ্যস্ত করছেন? পরিণামটাও জেনে নিন তাহলে!
-
জেদী বাচ্চাকে সামলে রাখার ১০টি টিপস
-
মা আর বেবির বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলার ৫টি টিপস।
-
বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা ডেভেলপ করার ১০টি টিপস