বাচ্চাকে ফিডারে খাওয়াতে হলে পরিচ্ছন্নতার এই ১০টি ধাপ মেনে চলুন

বাচ্চার জন্য
ছয়মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া আর কিছুই দরকার নেই। আর দুবছর পর্যন্ত ব্রেস্টফিড করা
হলে বাচ্চার গ্রোথ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
তবে মায়ের দেহে
কোন কারণে যদি যথেষ্ট পরিমাণ দুধ তৈরি না হয়, অথবা মায়ের অসুস্থতা বা চাকরি ইত্যাদি
কারনে যদি বাচ্চাকে বুকের দুধ দিতে না পারেন, তবে ডাক্তাররা অনেক সময় ফিডারে করে
দুধ দেবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কৃত্রিম ব্যবস্থার
সীমাবদ্ধতা তো থাকবেই তাইনা? তাই বটল ফিডিং করাবার সময় আপনাকে অবশ্যই নিচের ১০টি বিষয় খেয়াল
রাখতে হবে। না হলে বাচ্চা ঘনঘন অসুখে আক্রান্ত হতে পারে।
১) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
জন্মের পরপরই শিশুদের ডায়রিয়া ও বমির জন্য যে ভাইরাসটি
দায়ী, তার নাম হলো রোটা ভাইরাস। অপরিষ্কার ফিডার ও নিপলের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। তাই শিশুর জন্য ব্যবহৃত
ফিডার বা বোতল,নিপল,চামচ ইত্যাদি সব গরম পানিতে সিদ্ধ করে ধুয়ে সঠিকভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিন।
২)সঠিক ও সুবিধাজনক পদ্ধতি অবলম্বন
শিশুর আরাম হয় এমনভাবেই শিশুকে রেখে ফিডারে দুধ খাওয়ান। আপনি ও আপনার সন্তানের
সুবিধার কথা মাথায় রেখে এমন জায়গা নির্বাচন করুন যাতে শিশু মনোযোগ সহকারে দুধ খেতে
পারে। দরকার হলে বালিশ বা কুশন দিয়ে শিশুর মাথা খানিকটা উঁচিয়ে রাখুন যাতে শিশুর
আরাম হয়।
৩) শিশুর প্রতি মনযোগী হন
ফিডারে দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর প্রতি বিশেষ মনযোগী হন। শিশুর খাওয়ার মাঝে মাঝে
বিরতি দিন, তাকে ঢেঁকুর তোলার সময় দিন, তা না হলে শিশু অস্বস্তি বোধ করবে ও বমি
করতে চাইবে।
৪) ধৈর্য্য ধরুন
প্রথম অবস্থায় শিশু ফিডারে খেতে না চাইতেই পারে, তাতে মাকে হাল ছেড়ে দিলে চলবে
না। ধীরে সুস্থে চেষ্টা করলেই শিশু আস্তে আস্তে এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
৫) ফিডারের দুধ গরম করার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
বাচ্চাকে ফিডারে দুধ খাওয়ানোর আগে পরীক্ষা করুন দুধ বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা
কিনা? অনেক সময় মাইক্রোওয়েভে গরম করতে
গিয়ে বুঝতে পারেন না যে দুধ কতটা গরম হল। সেক্ষেত্রে সামান্য একটু হাতে নিয়ে পরখ
করে দেখতে পারেন অথবা গরম পানির বাটিতে ফিডার রেখেও দুধ খানিকটা প্রয়োজন মত গরম
করে নিতে পারেন।
৬) আলাদা ব্রাশ ব্যবহার করুন
ফিডার ও নিপল দুটোই পরিষ্কার
করার জন্য আলাদা ব্রাশ পাওয়া যায়। নিপল কখনোই খোলা
রাখবেন না। ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানি ঝরিয়ে, নিপলের ওপরে ঢাকনা দিয়ে রাখুন।
৭) পরিষ্কার পদ্ধতি
ফিডার প্রতিদিন দুইবার গরম পানিতে
ফুটাবেন। এতে রোগ-জীবাণু সব মারা যাবে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফিডার প্রথমে তরল সাবান,
গুঁড়া পাউডার বা ফিডার পরিষ্কারক তরল দিয়ে ব্রাশের সাহায্যে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
এর পরে ফিল্টারের পানি বা ফুটানো ঠান্ডা পানিতে শেষবার ধুয়ে ঢাকনা লাগিয়ে রাখুন।আর
ফিডার ফুটানোর আগে অবশ্যই পরিষ্কারক দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। দুধ লেগে থাকা ফিডার
পানিতে ফুটাবেন না।
৮) একসাথে
কয়েকটি ফিডার ব্যবহার করুন ও নির্দেশাবলী মেনে চলুন
এক ফিডারেই বারবার দুধ খাওয়ালে
তা পরিষ্কার রাখা মুশকিল। তাই এক সাথে কয়েকটি ফিডার ব্যবহারে রাখুন। এক বেলা একটি
ফিডারে দুধ খাওয়ালে পরের বেলা জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার অন্য একটি ফিডারে দুধ খাওয়ান। প্রতিটি
ফিডারের নিপল তিন থেকে চার মাস পরেই বদলে ফেলুন। আর ফিডার ব্যবহার করুন সর্বোচ্চ এক
বছর পর্যন্ত। খেয়াল রাখুন, ফিডারের গায়ে ছেপে দেওয়া দুধ পরিমাপের দাগগুলো যাতে মুছে না যায়। কারণ, দুধের কৌটাতে যে চামচ থাকে, তার
সঙ্গে ফিডারের পরিমাপক দাগগুলোর যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়া,একেক বয়সের শিশুর জন্য একেক পরিমাপের দুধ বানাতে হয়।
দুধ বানানো জানার জন্য দুধের কৌটার গায়ে নির্দেশাবলি ভালোভাবে পড়ুন। নির্দিষ্ট বয়সের
শিশুর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে গুঁড়া দুধ ও পানি ব্যবহার করতে হয়। তা না হলে শিশুর পানিশূন্যতা
বা পেট খারাপ হতে পারে।
৯) ব্রাশ
গুলো পরিষ্কার রাখুন
মায়েরা সাধারনত ফিডার পরিষ্কারের ব্যাপারেই সচেতন থাকেন, কিন্তু একথা ভুলে
গেলে চলবে না যে ফিডারের পাশাপাশি ব্রাশগুলোও
প্রায়ই পরিষ্কারক দিয়ে ধুয়ে পানি শুকিয়ে রাখতে হবে। দুধের গন্ধ লেগে থাকলে এতে ক্ষুদ্র পোকামাকড় বা তেলাপোকাও
লাগতে পারে। ফিডার ও নিপলের ব্রাশ পরিষ্কার করার পরে শুকিয়ে ঢাকনাওয়ালা বক্সে ভরে রাখুন।
এতে পোকামাকড়ের ভয় থাকবে না।
১০) ফিডার
কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন
ফিডার ও নিপল কেনার সময় ভালো
কোম্পানি ও পণ্যের মেয়াদ দেখে কিনুন। আজকাল বিভিন্ন রকম কার্টুনের
ছবি দেওয়া ফিডার কিনতে পাওয়া যায়। এতে শিশুর খাবারের
প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। তবে কখনোই জোর করে খাওয়াতে যাবেন না।
পরিশিষ্ট
আজ জানলেন বাচ্চাকে ফিডারে করে দুধ
খাওয়াতে চাইলে কী কী নিয়ম ফলো করতে হবে। মা চাকরিজীবি হবার কারণে অথবা মায়ের স্বাস্থ্যগত
কারণে বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণ বুকের দুধ না পেলে ডাক্তাররা কৌটার দুধ দেবার পরামর্শ দিয়ে
থাকেন।
এছাড়া কখনই নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে বাচ্চাকে ফিডার
খাওয়ানো শুরু করবেন না। মনে রাখবেন, মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই।
আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে। আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০