শিশুর ঔষধের গাইড

জন্মের
পর প্রায় ৫ বছর অবধি সময় পর্যন্ত বাচ্চাদের অসুখ বিসুখ একটু বেশিই হয়ে থাকে। কারণ
এ সময়ে বেবির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি ডেভেলপ হয়ে ওঠেনা।
অসুখ
হলে ওষুধ তো দিতেই হয় (অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)। তবে ওষুধ দেবারও কিছু
নিয়ম আছে যা মেনে না চললে বাচ্চার স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে যা মা হিসেবে আপনি
একদমই চান না।
তাই
আপনার বাচ্চাকে ওষুধ দেবার সময় এই ১০টি নিয়ম অবশ্যই মেনে চলুন।
১।
প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ দিন
শিশুদের
অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানো উচিৎ।শিশুর ওষুধের ডোজ খানিক
কম বা বেশি হলে তা শিশুর জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে
পারে। মা- বাবার উচিত ওষুধের
পরিমাণ, দৈনিক কতবার, কত দিন, ওষুধের নাম ও কার্যক্ষমতা জেনে তারপর শিশুকে ওষুধ
দেয়া।
আপনি
যদি পেশায় ডাক্তার না হয়ে থাকেন তবে নিজে নিজে শিশুর রোগের সমস্যা নির্ণয় করতে একেবারেই যাবেন না। সব সময় অবশ্যই
দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। ছয় মাসের নিচের বাচ্চাকে
প্রেসক্রিপশন ব্যতিরেকে কাশির ওষুধও না খাওয়ানো উত্তম।
২। মেয়াদোত্তীর্ন ঔষধ না
খাওয়ানো
ঔষধ শিশুদের জন্য সব
সময় সংবেদনশীল। স্থানীয় প্যাকেট ছেঁড়া, খোলা, মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা, যাচাই করে ওষুধ
খাওয়াতে হবে। ফার্মাসিস্টের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলুন, তিনি আপনাদের পরিবারের
সদস্যদের ব্যবহৃত ওষুধ সম্পর্কে ধারণা রাখবে। কিন্তু কখনো ফার্মাসিস্টের কথায়
বাচ্চাকে ওষুধ দিবেন না। ওষুধ প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কিনলেন কিনা দৃষ্টি রাখুন,
বিশেষত একসঙ্গে কয়েকটা ওষুধ থাকলে বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। ফার্মেসী
থেকে বের হওয়ার আগে
ওষুধ এর তারিখ ভালভাবে দেখে নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ শিশুদের জীবনের জন্য
হুমকি স্বরূপ। তাই অভিভাবকদের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন থাকতে
হবে।
এছাড়া
দুমাস আগে জ্বরের সময়ে কেনা ওষুধ বেচে গিয়েছে, তাই ওখান থেকে আবার দেবেন না।
প্রতিবার ডোজ শেষ হবার পর বেচে যাওয়া সিরাপ ইত্যাদি ফেলে দিন। তবে ক্যাপসুল বা
ট্যাবলেটগুলো মেয়াদ থাকা অবধি ব্যবহার করতে পারেন।
৩। ঔষধ খাওয়ানোর সময় মেনে
না চলা
সাধারণত
শিশুদের ওষুধ বিভিন্ন সময় মেনে খাওয়াতে হয়। সেক্ষেত্রে মা-বাবাকে অবশ্যই
প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী সময় দেখে শিশুদের ওষুধ খাওয়াতে হবে। এর অন্যথা হলে শিশুদের
জীবনের জন্য অনেক ক্ষতিকারক হতে পারে। খাবার বা দুধ পানের সঙ্গে ওষুধ
সেবনের কথা বলা হলে
বুঝতে হবে খালি পেটে এ ওষুধ পাকস্থলীকে উত্ত্যক্ত করবে অথবা এ খাবার ওষুধ শোষণে
সুফল আনে। অন্যদিকে, চিকিৎসক খাবারের আগে বা খালি পেটে কোনো ওষুধ সেবন করার
পরামর্শ দিলে বুঝতে হবে এখানে ওষুধ খাবার গ্রহণের এক ঘণ্টা আগে অথবা খাবার গ্রহণের
দুই ঘণ্টা পর সেবন করাতে হবে। কেননা খাবার শিশুর অন্ত্রে ওই ওষুধ শোষণে বাধা
সৃষ্টি করে অথবা খাবার ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়।
৪। সঠিক মাত্রায় ঔষধ সেবন না করানো
সঠিক মাত্রার ডোজ
শিশুকে খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা পদ্ধতিতে তা করা যায়। যে শিশু এখনো পান
করতে অভ্যস্ত নয়, তাকে ডোজিং সিরিঞ্জ ব্যবহার করে, প্লাস্টিক ড্রপার, ছোট ডোজিং
কাপের সাহায্যে সঠিক ডোজ খাওয়ানো যায়। কখনো রান্নাঘরের চামচ
ব্যবহার করে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। সতর্কীকরণ না থাকলে ছোট বাচ্চাকে অল্প নরম
খাবারের সঙ্গে পুরো ওষুধের ডোজ মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। তবে বেবি বোতলে মিশিয়ে কখনো
খাওয়ানো উচিত নয়। প্রতিটি লিকুইড ওষুধের সাথে এক ধরনের চামচ বা কাপ দেয়া থাকে যাতে
ওষুধের পরিমান দেয়া থাকে। সেই পরিমান অনুযায়ী বাচ্চাদের ওষুধ খাওয়াতে সুবিধা হয়।
৫। খেলার ছলে ঔষধ খাওয়াবেন
না
কখনো শিশুকে ‘দেখো দেখো
চকলেট খাবে এবার’ এ রকম বলে ওষুধ সেবন করাবেন না। এটা পরবর্তী সময়ে ব্যাক ফায়ার
হয়ে আসবে। এক সময় শিশু মজা পেয়ে বেশি মাত্রার ডোজ খেয়ে বিষক্রিয়ার শিকার হবে।
খাওয়ানোর পর পর বমি করে ফেললে দ্বিতীয়বার সেবন না করিয়ে নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট বা
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্ভব হলে মুখে খাওয়ার ওষুধ প্রয়োগের চেষ্টা করাই উচিত। প্রয়োজন না পড়লে
শিশুর ইঞ্জেকশন বা সাপোসিটরি না দেওয়াই ভালো। তাই খেতে চায় না বলে সব সময় বিকল্প
পদ্ধতি ব্যবহার করতে ডাক্তারের ওপর জোর দেবেন না।
৬। সঠিক পদ্ধতিতে ওষুধ
প্রদান
শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর
নানা পদ্ধতি আছে। ওষুধ পরিমাপক কাপ ও চামচ, মুখে ব্যবহার করার সিরিঞ্জ, ওরাল
ড্রপারস প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়। তবে তার আগে ওষুধের মাত্রা নিরূপণের দাগগুলো
অভিভাবকদের ভালো করে বুঝে নিতে হবে। সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের তরল ওষুধ
বা সিরাপ দেওয়া হয়। এর চেয়ে বেশি বয়স হলে চুষে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যায়।
ছোট্ট শিশুকে ওষুধ
খাওয়ানোর সময় একটু একটু করে ঠোঁটের কোনার দিকে দিলে ভালো, কেননা এতে করে জিবের
পেছনের দিকে তেতো স্বাদ অনুভূত হওয়ার যে সংবেদী কোষ আছে, তার সংস্পর্শ এড়ানো যায়।
৭।সকল ওষুধ শিশুদের
নাগালের বাইরে রাখুন
সকল ওষুধ শিশুদের হাতের
নাগালের বাইরে রাখতে হবে। শিশুরা যাতে সহজেই ওষুধ হাতে না পায় সে ব্যবস্থা করতে
হবে। সাধারণত ওষুধ উঁচু স্থানে, কোন বাক্সে বন্ধ করে রাখতে হবে।
শিশুরা হাতের কাছে ওষুধ পেলে খেলার ছলে খেয়ে ফেলতে পারে। ফলে শিশুদের জীবন ঝুঁকির
মুখে পরতে পারে।
পরিশিষ্ট
শিশুকে
ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা সাধারণত মা-বাবার
হাতেই ন্যস্ত থাকে। একটু
বেখেয়ালিপনা বা অসতর্কতা শিশুর জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
তাই বাচ্চাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক নিয়ম ও ডোজ ফলো
করে ওষুধ দেবেন। সুস্থ্য থাকুক আপনার সোনামণি।
আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে
বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ
করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে।
আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০