জেনে নিন বাচ্চার প্রথম বছরে পুষ্টি উপাদান কি কি দরকার

একটি সন্তান জন্মের পর থেকেই শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের কথা মনে রাখতে হবে, কারন যে শিশুটি আগামি প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেই শিশুটির দরকার হবে সুস্থ, সবল ভাবে নিজেকে তৈরি করা। আর সেই জন্য দরকার হবে জন্মের পর থেকে সঠিক খাদ্যভভাস এর। আর শিশুর খাদ্য কি ধরণের হলে ১টি শিশু সুষম খাদ্য পাবে তা প্রথম  থেকেই জানতে হবে সন্তানের অভিবাবক কে। আসুন জেনে নেই বয়স ভেদে খাবারের ধরন কেমন হওয়া উচিত।

জন্ম থেকে ৬ মাসঃ মায়ের এক ফোটা দুধের দাম কখন ও পরিশোধ করার মত নয়। কারন মায়ের দুধ এর মধ্যেই আছে, জন্মের পর ১টি শিশুর জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব কিছু। তাই শিশু জন্মের পর শিশুর অন্য কোন খাবার গ্রহনের দরকার পরে না, শুধুমাত্র মায়ের দুধই পর্যাপ্ত হয়ে থাকে।

জন্ম থেকে ৬ মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ দেয়াকে বলা হয় এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং। অর্থাৎ এসময় অন্য কোন খাবার ( মধু, পানি, ফর্মুলা দুধ) বাচ্চার মুখে দেয়া যাবে না। শিশুর জীবন ধারনের জন্য মায়ের দুধই উৎকৃষ্ট সুষম খাদ্য। একে বলা হয় পারফেক্ট সুষম খাবার।

শাল দুধঃ শিশু জন্মের পর পর মায়ের বুক থেকে এক ধরণের হলুদ রঙ এর আঠালো দুধ বের হয়, যা শাল দুধ নামে পরিচিত। অনেকে এই দুধ বাচ্চাকে খেতে দেন না। কিন্তু এই দুধ বাচ্চার জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারি এবং এই দুধ অল্প খেলেও শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি লাভ করে থাকে। প্রথম ৩ থেকে ৪ দিন অতিরিক্ত আঠালো থাকে এবং পরে ১০ দিন খানিকটা আঠালো ভাব দেখা যায়। এই পুরো সময়টাই শাল দুধ।শাল দুধকে শিশুর প্রথম টিকা বলা হয়।

মায়ের দুধ কেন দিবেন শিশুকে ঃ মায়ের দুধ এ রয়েছে এমন সব উপাদান যা শিশুর হজম, পুস্টী পূরণ, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

·         মায়ের দুধ এ প্রচুর পরিমান আমিষ রয়েছে। এই প্রোটিন শিশুর হজম যোগ্য প্রোটিন। যা গরুর দুধ থেকে অনেক হাল্কা তাই শিশু সহজে হজম করতে পারে।

·         মায়ের দুধে রয়েছে রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এন্টিবডি যা শিশুকে সারা জীবন অধিক রোগ প্রতিরোধ এ সাহায্য করে। যে শিশুরা ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ গ্রহন করে বড় হয়েছে তারা অন্য শিশুর চেয়ে ১০-১৫% বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে বেঁচে থাকে।

·         মায়ের দুধ শিশুর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক কারন এতে একটি পাতলা শিশু খাবার এবং খুভি সহজে হজম উপযোক্ত সব ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ উপাধানে ভরপুর। তাছাড়া মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর বুদ্ধির বিকাশও সঠিক হয়।

·         হজম শক্তি বাড়ায় এবং শিশুর পেট পরিষ্কার রাখে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্,নিউমোনিয়া, ইনফেকশন, এল্যারজি, প্রাপ্ত বয়সে ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ হওয়ার প্রবনতা কমে যায়

·         মায়ের দুধ এ রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন যা খুব সহজে শিশুর দেহে ছড়িয়ে যায়।অন্যান্য খাবার থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন অনেকটা দেরিতে হজম হয়।

মায়ের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে এরকম আরো অনেক তথ্য আছে যা শিশুর জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ দেয়া উচিত।

এবার আসি মায়ের দুধ কি শুধু শিশুর জন্যই উপকারী?? না, এটি স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য ঠিক ততটাই উপকারী। কিভাবে, আসুন কারন গুলো জেনে নেই।

·         সন্তান জন্ম হবার পরে শিশুকে দুধ দেবার সময় মায়ের শরীরের যে হরমোনাল পরিবর্তন হয় তা জরায়ু থেকে রক্ত ক্ষরণ দ্রুত বন্ধ করতে সহায়তা করে।

·         মায়ের দুধ কিছুক্ষন পর পর দিলে মাসিক বিলম্বিত হয়, এবং পরবর্তী গর্ভধারণ প্রবনতা কমে আসে।

·         মা এবং শিশুর মধ্যে মানুসিক একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।

·         অনেক সময় সন্তান জম্মের পর মায়েরা বিষণ্ণতায় ভোগেন। এই রোগ নিরাময়ের প্রধান উপায় হল মাতৃ দুগ্ধ প্রদান।

·         বাচ্চা দুধ নিতে থাকলে মায়ের ব্রেস্ট ক্যন্সার এর প্রবনতা কমে আসে অনেকটা।

·         গরভকালীন সময়ে মায়েদের ওজন বেড়ে যায়, একমাত্র মায়ের দুধ প্রদান পারে মাকে ওজন বৃদ্ধি থেকে বিরত রাখতে।

তাছাড়া মায়ের দুধ গরম করতে হয় না, ধুল-বালি পরার কোন সম্ভবনা থাকে না। সব কিছু মিলিয়ে মায়ের দুধ ঝামেলা মুক্ত ১টি খাবার।

আর যদি কোন মা বাচ্চাকে দুধ দিতে না পারে তবে সে ক্ষেত্রে ফরমুলা দুধ দিতে হবে। গরুর দুধ দেয়া যাবে না।

এই সময় শুধু মাত্র ভিটামিন ডি এর জন্য বাচ্চাকে রোদ এ দিতে হবে। সকালের রোদটা বাচ্চাদের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পুরন করে থাকে।

৬ মাস থেকে ১ বছরঃ মায়ের দুধ এর পাশা পাশি এই সময় বাচ্চাকে নিত্য নতুন খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। ৬ মাস শেষ করে ৭ মাস এর শুরুতে বাচ্চাকে প্রথম যে খাবার টা দেয়া হয় তাকে বলে ওয়েনিং ফুড। এসময় বাচ্চাদের হজম শক্তি বরদের মত থাকে না, তাই এমন খাবার বেছে নেয়া উচিত যা বাচ্চাদের জন্য সহজ পাচ্য। বাচ্চার প্রথম খাবার টি হবে মায়ের দুধ এর সাদৃশ্য। একটু মিষ্টি, হাল্কা গরম। ফল এর মধ্যে কলা দেয়া যেতে পারে। তবে টক ফল দেয়া যাবে না। টক ফল এ রয়েছে আসেটিক এসিড যা বাচ্চাদের এই বয়সে হজম হয় না। তাছাড়া এই সময় সবজি দিয়ে তৈরি করা খিচুরী দিতে পারেন আপনার বাচ্চাকে।সে ক্ষেত্রে ডাল ও চাল এর পরিমান সমান রাখা উচিত। এবং সাথে সবজি, মাছ, মাংস, ডিম মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে।

খাবার শুরু করুন আয়রন জাতীয় খাবার দিয়ে। এই আয়রন জাতীয় খাবার শিশুর বৃদ্ধি এবং মস্তিস্ক বিকাশ করতে সহায়তা করে।মুরগীর একটি কলিজা মেখে খাওাতে পারেন শিশুকে। অথবা মাছ খুব নরম করেও দিতে পারেন শিশুকে।

ডিম ১টি প্রতিদিন দেয়া যেতে পারে, তবে লক্ষ্য রাখবেন সেটি যেন ভালোভাবে সেদ্ধ করা থাকে। এই বয়সে বাচ্চাকে বাইরের খাবার যতটা কম দেয়া যায় তাতেই ভালো। বাচ্চা যদি কিছু না খায় তবে ফর্মুলা খাবার প্রদান করতে হবে।

আপনার সন্তান আপনার জন্য আশীর্বাদ। তাই সন্তান সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে কিনা, সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব আপনার। সুস্থ থাকুক প্রতিটি শিশু।