সহজে কনসিভ করতে চান? তাহলে এই ১০টি বিষয় এড়িয়ে চলুন

গাইনি ডাক্তারদের কাছে প্রায়ই এমন কিছু দম্পতি আসেন যারা পরিবারে নতুন সদস্যকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কিন্তু কেন যেন গর্ভধারণ হচ্ছে না। ভয়ের কথাই বটে। যদি কোনো রকম পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি ব্যবহার না করলেও গর্ভধারণ না হয় তাহলে সেই নারী মানসিকভাবে ভেঙে পড়তেই পারেন। ভাবতে পারেন আমার কি তবে বাচ্চা হবে না? এই টেস্ট সেই টেস্ট করে অনেক ক্ষেত্রেই জানা যায় যে তাদের কারো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তাহলে কেন গর্ভধারণ হচ্ছে না? অনেক সময় এমনটা ঘটে। কিছু ব্যাপারে সচেতন থাকলে সহজেই গর্ভধারণ করা যায়। বাচ্চা পেটে আসলে চারপাশ থেকে সবাই পরামর্শ দিতে শুরু করে। আর সেটাই স্বাভাবিক! কারন নতুন শিশুর আগমনের কথা শুনে সবাই খুব প্রফুল্ল হয়ে ওঠে এবং ভালো পরামর্শগুলো দিয়ে থাকে। কিন্তু সহজে গর্ভধারণ করার জন্য কি কি বিষয় এড়াতে হবে সেটা খুব কম মানুষই জানে। চলুন দেখে নিই কি কি বিষয় এড়িয়ে যাওয়া উচিত গর্ভধারণ করতে চাইলে।



অতিরিক্ত শারীরিক মিলন



সাধারণত মনে করা হয় বেশী বেশী শারীরিক মিলন গর্ভধারণে সাহায্য করবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন অন্য কথা। বেশী শারীরিক মিলন অনেক সময় গর্ভধারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণটা খুব সিম্পল। প্রতিদিন একবার বা দিনে কয়েকবার শারীরিক মিলন ধীরে ধীরে মিলনের চাহিদা কমিয়ে দেয়, আবার অন্যদিকে পুরুষের বীর্যের পরিমাণ কমে আসে। মাঝে মাঝে এমন হয় যে নারীর ডিম্বাণু প্রস্তুত হয় সময় অবসাদের কারণে আর তারা শারীরিক মিলনে লিপ্ত হন না। যার ফলে গর্ভধারণও ঘটে না। গর্ভধারণের চেষ্টা করতে চাইলে শারীরিক মিলন করতে হবে একদিন পর পর, এর ফলে দুজনেরই মিলনে চাহিদা থাকবে এবং ডিম্বাণু যখন প্রস্তুত হয় সেই সময়টাও ফস্কে যাবে না। তাই অতিরিক্ত শারীরিক মিলন বা বেহিসেবি শারীরিক মিলন পরিহার করতে হবে।



কম শারীরিক মিলন

 

নারীদের ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার একটা সময় থাকে, একেক নারী সেটা একেকদিন ঘটে। ধরা হয়, পিরিয়ড সাইকেল শুরুর সাত দিন পর থেকে যে কোনো দিন ডিম্বাণু প্রস্তুত হয়। আর পিরিয়ড শুরু হওয়ার সাত দিন আগেই সেই সম্ভাবণা শেষ হয়ে যায়। তার মানে পিরিয়ডের মাঝের ১৪ দিনের ভিতরে যেকোনো দিন ডিম্বাণু প্রস্তুত হতে পারে। শুধুমাত্র সেই ১৪ দিন শারীরিক মিলনে লিপ্ত হলেই গর্ভধারণ হয়ে যাবে এমন নাও হতে পারে। একেকজনের শরীর একেক রকম, আর যেকোনো কারনেই ডিম্বাণু প্রস্তুত হওয়ার সময় পাল্টে যেতে পারে। তাই শুধুমাত্র সেই সময়টায় সেক্স না করে, একদিন পর পর সেক্স করাই গর্ভধারণে উত্তম পন্থা।



লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা

 

বাজারে যেসব লুব্রিকেন্ট কিনতে পাওয়া যায় তার অধিকাংশই পুরুষের বীর্যের জন্য ক্ষতিকারক। কোনোভাবেই এসব লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। বীর্যপাতের পর শুক্রানুগুলো নারীর ডিম্বাণুর দিকে ধেয়ে যায়। এই যাওয়াটাকে বাধাগ্রস্থ করে লুব্রিকেন্ট। লুব্রিকেন্টের প্রয়োজন পড়লে অলিভ অয়েল, বেবি অয়েল বা ডিমের সাদা অংশও ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই বাজারের লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যাবে না।



ধূমপান

ধূমপান বিষপান। শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ধূমপান করে থাকেন। গর্ভধারণের জন্য ধূমপান প্রতিকূল অবস্থা তৈরি করে, এমনকি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির জন্য ধূমপান দায়ী অনেক ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুর দিকে না আসতে পারার ফলে অনেক সময় ডিম্বাশয় বা ডিম্বনালীতেই ভ্রূণ বেড়ে উঠতে থাকে এবং এর যথাযথ চিকিৎসা না হলে সেই নারীর ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। ধরণের প্রেগন্যান্সি টেকানো যায় না। সিগারেটের ক্ষতিকারক উপাদান ডিম্বনালীকে অমসৃণ করে দেয় যার ফলে ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে আসতে পারে না, সেখানে আটকে যায়। গর্ভধারণ করার পরিকল্পনা করার সময়ই ধূমপান পরিহার করতে হবে।



জাঙ্কফুড

 

জাঙ্কফুড সব সময়ই এড়িয়ে যাওয়া ভালো। কিন্তু অনেক সময় মুভি দেখা বা অবসর সময় কাটানোর সময় জাঙ্কফুড খাওয়া হয়ে যায়। এটা সচেতন ভাবে বাদ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে গর্ভধারণে বিলম্ব হতে পারে। জাঙ্কফুডে খুব বেশী চিনি আর ফ্যাট থাকে যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তাই এটা জাঙ্কফুডকেনাবলে দিয়ে একটু ফল বা দুধ খেতে হবে।



ক্র্যাশ ডায়েট



যদি টেলিভিশনে বা বিলবোর্ডে দেখা স্লিম ফিট শরীর এর স্বপ্ন মাথায় থাকে তাহলে অনেকে হুট করে ডায়েট করে ওজন কমান। নানা ওষুধও সেবন করেন। গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময় ধরণের চেষ্টা করা যাবে না। হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমে গেলে শরীরের হরমোনাল ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রভাবিত হয় নারীর জন্মদানের ক্ষমতাও। বরং গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময় সুষম খাবার খেতে হবে। শর্করা, আমিষ, স্নেহ জাতীয়, সব ধরণের খাবার খেয়ে শরীরকে তৃপ্তি দিতে হবে যেন শরীর প্রস্তুত হয়।

 

লং জার্নি



গর্ভধারণের প্রক্রিয়ার ভিতরে লং জার্নি না করাই ভালো। জার্নিতে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এতে শারীরিক মিলনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হতে পারে। দৌড়ঝাঁপের কারণে যদি গর্ভধারণ হয়ে থাকে সেটাও মিসক্যারেজের সম্ভাবণা তৈরি হয়। একেক জন নারীর শরীর একেক রকম, তাই সাবধানতাই প্রেসক্রাইব করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

 

অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম



এই সময়টায় যথা সম্ভব নিয়মকানুন মেনে জীবন যাপন করতে হবে। অর্থাৎ খাওয়ার সময় খাওয়া, গোসলের সময় গোসল এসবে গাফিলতি করা যাবে না। যদি প্রতিদিন অতিরিক ব্যায়াম করা বা ভারি কাজ করার অভ্যাস থাকে কারো সেটা পরিহার করতে হবে। গর্ভধারণ করে ফেললে কিন্তু ধরণের কাজ করা যাবে না, তাই সেটা আগে থেকেই শুরু করুন। নতুবা গর্ভধারণ হলেও গর্ভপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়।



ইচ্ছামতো ওষুধ সেবন

কারো নিয়মিত কোনো ওষুধ খেতে হলে তা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই খেতে হবে। আর মাথা ব্যথা, বা হালকা জ্বরের জন্য আমরা যে নিজেই একটা প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলি এটা করা যাবে না। ক্যাফেইন আছে এমন ওষুধ খেলে গর্ভধারণ যেমন পিছাতে পারে তেমনি গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। সুতরাং ওষুধ সেবনে সাবধান।

গর্ভধারণ করা একটা অনেক বড় দায়িত্বের বিষয়। অনেক বাঁধা নিষেধের ভিতরে থেকেই একজন নারী সুন্দর সুস্থ্য একটি শিশু পেটে পারেন। আর নিয়ম কানুন না মানলে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হবে সেটা আমরা সবাই জানি। গর্ভধারণের সময় এই নিয়মগুলো মানলে নারীর আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায় বহুগুণ। সামনে তার আরো অনেক দায়িত্ব, সেটার বোধ জাগ্রত হয় এই গর্ভধারণের সময়ই। তাই বিষয়গুলো এড়াতে পারলে সহজেই গর্ভধারণ করা তো যাবেই সেই সাথে একটা ট্রেনিং হবে হবু মায়ের

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০