মধ্যমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ কপারটি করানোর সুবিধা-অসুবিধা

মধ্যমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ কপারটি করানোর সুবিধা-অসুবিধা

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও তার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আমাদের সবার মধ্যে অনেক কনফিউশন থাকে। কোন সময়ে কোন পদ্ধতিটি আমাদের জন্য ভালো হবে আর কোনটা খারাপ প্রভাব ফেলবে এগুলো নিয়ে আসলে চিন্তিত হওয়া খুব স্বাভাবিক। কারণ মধ্যমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী সব জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহন করার পর অনেক সময় বিভিন্ন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। তাই যে কোনো পদ্ধতি ব্যবহারের আগে এর উপকারিতা ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।মধ্যমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে কপারটি(Copper T) আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় একটা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। আজ এই আর্টিকেলে মধ্যমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি কপারটি করানোর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বলবো।

কপারটি করানোর সুবিধাঃ

(১) ব্যবহার করা সহজ। এটি সহজে প্রতিস্থাপন করা যাই তাই ঝামেলাও কম।

 (২)একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আপনি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। প্রতিদিন মনে করতে হয় না।

 (৩) এটার আরও একটি উপকারিতা হল এটি যৌন সঙ্গমে বাধা সৃষ্টি করে না।

 (৪) বুকের দুধ কমে না বরং সন্তান আছে এমন মায়েদের জন্য এটি উচ্চমাত্রাই সহনীয়

(৫) আরেকটি বড় সুবিধা হল আপনি চাইলে যে কোন সময় এটি খুলে ফেলতে পারবেন।

(৬) আপনি এটি খুলে ফেলার পর গর্ভধারনের ক্ষমতাফিরে পাবেন।

(৭) তুলনামূলক সাশ্রয়ী। কম খরচে বহুদিন জন্মনিরোধ করা যায়

কপারটি করানোর অসুবিধাঃ

অতিরিক্ত রক্তস্রাবঃ কপারটি করানোর অন্যতম একটি অসুবিধা হল মাসিকে অতিরিক্ত রক্তস্রাব হওয়া। এর কারণ হিসেবে জরায়ুর হঠাৎ আকার পরিবর্তন হতে পারে। তাই সবার উচিৎ জরায়ুর আকার বুঝে কপারটি লাগানো।

পিরিয়ডে বাধাঃ শুধু অতিরিক্ত রক্তপাত নয় অনেক মহিলার কপারটি করানোর পর পিরিয়ডে বাধা বা অনিয়মিত পিরিয়ড হয়েছে বলে দাবী করেন। এ ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ হসপিটাল বা আপনি যেখান থেকে কপারটি করিয়েছেন সেখানে যোগাযোগ করুন।

তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়াঃ কপারটি করানোর কারনে পেটে ব্যথা হতে পারে। সেটা কপারটি লাগানোর সময়, কিছু পরে বা পিরিয়ডের সময়। কারণ হিসেবে কপারটি জরায়ুর তুলনায় বড় হওয়া, কপারটির অংশ বিশেষ বের হয়ে আসা বা জরায়ি ছিদ্র হয়ে যাওয়া ইত্তাদি কারণগুলো ধরা যাই। তাই পেটে ব্যথা অনুভূত হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

অ্যালার্জিঃ কপারটি লাগানোর পর অ্যালার্জি জনিত সমস্যা খুব রেয়ার তবে যাদের তামা ইউজ করলে অ্যালার্জির সমস্যা হয় তাদের ক্ষেত্রে কপারটি লাগানোর পর চুলকানি  ও রাশেস দেখা যাই। এমন সমস্যায় পড়লে ডাক্তারের কাছে যান আর কপারটি অপসারণ করুন। অথবা আপনি তামার পরিবর্তে নন কপার আইইউডি(IUD) লাগাতে পারেন।

জরায়ু ছিদ্র হয়ে যাওয়াঃ কপারটি করানোর সময় জরায়ু ছিদ্র হয়ে যাওয়ার ঘটনা খুব কম। যদি কপারটি করানোর সময় জরায়ু ছিদ্র হয়ে যাই তাহলে আপনার জরায়ুতে যন্ত্রণা, রক্তপাত বা সুতা না পাওয়া এই সমস্যাগুলো দেখা যাবে। আর এই সব সমস্যা দেখা দিলেও দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেন।

অনাকাংক্ষিত গর্ভধারণঃ কপারটি খুব কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় অনাকাংক্ষিত গর্ভধারণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাই।  যেমন কপারটি স্থানচ্যুত হলে বা আংশিক বের হয়ে আসলে গর্ভধারণ হতে পারে।

কপারটি নেবার নিয়ম

কপার-টি একটানা ৪ বছর রাখা যায় এবং ৪ বছর পর খুলে ফেলে আবার নতুন একটি লাগাতে হয়৷ হরমোন নিঃসরণ ইন্ট্রাইউটেরাইন কন্ট্রাসেপটিভ ডিভাইস প্রতি ১২ মাস পরপর পরিবর্তন করে দিতে হয়৷  ৩ মাস পর পর ক্লিনিকে এসে পরীক্ষা করে দেখতে হয় ডিভাইসটি যথাস্থানে আছে কিনা৷

কপারটি লাগানোর পর প্রথম কয়েক মাস সুতা ঠিক জায়গায় আছে কিনা মাঝে মাঝে পরীক্ষা করুন৷ মাসিকের সময় বিশেষভাবে লক্ষ রাখুন, কারণ এসময় কপারটি বেরিয়ে আসতে পারে৷ নির্দিষ্ট সময়ে ঋতুস্রাব না হলে যদি মনে করেন গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে তবে বিলম্ব না করে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন৷

- লিখেছেনঃ রুমানা রহমান


আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০