বেবির অসময়ের খাওয়া আর ঘুমের সাথে তাল মিলাতে পারছেন না?

বেবির অসময়ের খাওয়া আর ঘুমের সাথে তাল মিলাতে পারছেন না?

রাত ১১ টা বাজে, আপনি ঘুমানোর জন্য বেডে চলে এসেছেন কিন্তু, ঘুমানোর কোন উপায় নেই

হয়তো পাশের রুমে আপনার ভাতিজা-ভাতিজিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন আপনার ভাবি। বা হয়তো পাশের ফ্ল্যাটের কেউ, যার বেডরুম আর আপনার বেডরুম একদম কাছা কাছি।

কিন্তু, বাচ্চার দুই চোখে কোন ঘুম নেই সে এখন তার খেলনা গুলো নিয়ে খেলা করায় ব্যাস্ত মন যে এখন ভীষণ ভাল, সেটা তার মনখোলা হাসি শুনেই বোঝা যায়

আপনার ভাবীও ঠিক আপনার মত ঘুমাতে পারছেন না কিন্তু, তার আবার সকাল বেলা উঠে অফিসে যাওয়া লাগবে, এখন যদি ঘুমাতে না পারেন তাহলে সকাল সকাল উঠবেন কি করে?

ঘুম যখন আসছে না, তখন আপনি শুয়ে শুয়ে ভাবছেন, “আমার বেবিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিডিউল মেনে চলা বেবি হিসাবে তৈরি করব

তারপর আপনার কোল জুড়ে আসল সেই আদরের বেবি বেবির বয়স কয়েক মাস হওয়ার পর আপনার বুঝতে বাকি রইল না যে, কি কারণে ভাবি ঐ রাতগুলোতে ঠিক সময়ে ঘুমাতে পারেনি

আপনার যখন ঘুমানোর সময়, বেবি তখন জেগে থাকে কারণ, বেবি সারা দিন ঘুমায় আর আপনি যখন ঘুমাতে যান তখন বেবি খেলনা নিয়ে ব্যাস্থ আপনার অবস্থা এখন ঠিক আপনার ভাবির মত কিন্তু, আপনার ভাবি আপনার মত এত সচেতন ছিলেন না

তাই তিনি বেবির উপর সব কিছু ছেড়ে দিয়ে, বেবির রুটিনকেই তার নিজের রুটিন বলে মেনে নিয়েছিলেন

আপনি এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, একটা শিডিউল তৈরি করার জন্য যা হবে, আপনার এবং বেবির দুই জনের জন্যই একদম পারফেক্ট

উপরের গল্পটা যদি, আপনার জীবনের সাথে মিলে যায় তাহলে সমাধানের জন্য নিচের টিপস গুলো পড়তে পারেন যদি আপনি আর্টিকেলের রুলস মেনে একটা শিডিউল তৈরি করতে পারেন, তাহলে আপনার রাত ১১ টার সময় যখন আপনার ঘুম আসে, আপনার বেবিরও আসবে

আপনার বেবি হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রুটিন মেনে চলা বেবি

 

রাত এবং দিনের পার্থক্যঃ বেশি ভাগ বাচ্চাই দিন এবং রাতের মধ্যে যে একটা পার্থক্য আছে এইটা বুঝে উঠেতে পারে না আপনি হয়ত দেখলেন দিনের বেলায় বাচ্চা সারাটা সময় টানটান হয়ে ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু রাতের বেলায় সে জেগে আছে তাকে আপনার সুবিধার রুটিন সাথে অভ্যস্ত করে তোলার সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল দিন রাতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া

সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে তার কাপড় পরিবর্তন করে দিন এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠিক একই ভাবে দিনের বেলায় ঘর উজ্জ্বল রাখারা ব্যবস্থা করেন ঘরে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোবাতাস আসার ব্যবস্থা থাকে আর রাতের বেলায় ঘরের পরিবেশ ঠিক রাতের মত করে রাখুন কখন রাতে বেশি রাত পর্যন্ত উজ্জ্বল আলো না জ্বালায়ে রাখাই ভাল রাতে ঘরের পরিবেশ থাকবে হালকা আলো এবং শান্ত রাতে খাওয়ানোর সময় যত পারেন কম কথা বলেন

আপনি যদি এইটা কিছু দিন চালিয়ে যান তাহলে সে বুঝতে শিখবে রাত হল ঘুমানোর  জন্য আর দিন হল খেলা করা এবং আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলার জন্য

রুটিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেনঃ আপনি প্রতিদিনের জন্য একটা আনুমানিক বেডটাইম রুটিন তৈরি করে ফেলতে পারেন মনেকরেন, আপনি প্রত্যেকদিন রাত ৯টায় বাচ্চাকে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন তবে অবশ্যই আপনার বাচ্চার দিকে খেয়াল রেখে তারপর এই সময়টা ঠিক করবেন এই ভাবে যদি আপনি প্রত্যেকদিন চেষ্টা করেন প্রথেম দিকে আপনার বাচ্চার বুঝতে একটু কষ্ট হবে কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই দেখবেন সে আপনাকে বুঝতে শুরু করছে

আপনি কতটা নিয়মিত তার উপর নির্ভর করছে বাচ্চা রুটিনে অভ্যস্থ হয়ে যাবে অথবা না প্রত্যেক দিন আপনার চেষ্টা চালিয়ে যান, দেখবেন একসময় আপনার বাচ্চা বুঝতে শিখে গেছে এখন রাত ঘুমানোর সময় এই শেখানো ব্যাপারটাকে যত পারেন সিম্পল করে রাখেন আপনি নিচের গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন, ভাল ফলাফল পাবেনঃ

·        রাতে ঘুমানর ড্রেস অথবা একটা পায়জামা পরিয়ে দেন এবং প্রত্যেকদিন ঐ ধরনের কাপড় পরাতে পারেন যেন ঐ কাপড় পরার পর সে বুঝতে পারবে তার ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে

·        আপনি হয়ত বাচ্চার কথা বোঝেন না, কিন্তু সে আপনার কথা বোঝে এবং বোঝার চেষ্টা করে আপনি রাতে ঘুমানোর আগে গল্প বা ঘুমপাড়ানি গান শোনাতে পারেন

·        ঘুমানোর আগে বুকের দুধ খাওয়ান

·        বেডে শোয়ানোর পর অবশ্যই বলুনশুভ রাত্রি বেবিঅথবা “Good Night” অথবা এই ধরনের আপনার কোন শব্দ বলতে পারেন প্রতিদিন যখন ঐ সব শব্দ গুলো সে শুনবে, বুঝবে এখন ঘুমানোর সময়

প্রথম দিকে হয়ত রাতে বুকের দুধ খাওয়ার সাথে সাথে বাচ্চা নাও ঘুমাতে পারে অথবা, এমন হতে পারে বুকের দুধ খেতে খেতে সে ঘুমিয়ে গেছে অনেক সময় এটা অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় এটা তাকে সেখাবে কি ভাবে নিজে নিজে ঘুমাতে হয়

বাচ্চার ইঙ্গিতঃ কখন চেষ্টা করবেন না, নিজের রুটিনের সাথে বাচ্চার ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতে বরং, বাচ্চাকে আগে বুঝতে শিখুন তার দেয়া ইঙ্গিত গুলো থেকেই ভাল ভাবে বুঝতে পারবেন তার কোনটা ভাল লাগে, কোনটা খারাপ লাগে

আপনার বাচ্চা কি বোঝাতে চায় এইটা বুঝতে আপনার একটু সময় লাগবে একটা নোট করে রাখতে পারেন আপনার বাচ্চা কখন ক্লান্তি অনুভব করে, ক্ষুধা পায়, অথবা কখন সে খেলা করতে চায় আপনি যদি ২ সপ্তাহের মত এই ভাবে লিখে রাখতে পারেন, তাহলে পরবর্তীতে রুটিন করতে আপনার সুবিধা হবে

যখন আপনি তার ইঙ্গিতের ধরন বুঝতে পারবেন, তার মানে কখন কোনটা তার দরকার এইটা বুঝতে শিখে গেছেন যেমন, আপনার বাচ্চা হয়ত ক্ষুধা লাগার সাথে সাথে এক ধরনের ইঙ্গিত করে যখন ঐ ইঙ্গিত করবে সাথে সাথে আপনি তাকে খাওয়াতে পারনে, কোন ধরনের কান্নাকাটি ছাড়াই

বাচ্চার রুটিনঃ আপনার বাচ্চা এর মধ্যেই তার নিজস্ব রুটিনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে, এর মধ্যে আপনি যদি আপনার পছন্দ মত রুটিনে তাকে অভ্যস্ত করে তুলতে চান, তাহলে ঝামেলা বৃদ্ধি পাবে ছাড়া আর কিছু না আপনি যখন আপনার বাচ্চার  সময়কে গুরুত্ব দিবেন তখন সে বুঝতে শিখবে কোন সময়ে কোন কাজ

একটা রুটিন আপনাকে সাহায্য করবে কোন সময় তার ঘুমানোর এবং খাওয়ার সময় অথবা দেখা যাবে, আপনি যখন তাকে খাওয়ানর চেষ্টা করছেন, তখন আপনার বাচ্চা ঘুমাতে চায়

এ কথা সত্য যে, একটা বাচ্চার সাথে তাল মিলিয়ে চলা অনেক কষ্টের এই খানে আপনি শুধু চেষ্টা করতে পারেন যেমন আপনি প্রত্যেকদিন বিকালে ঘুরতে বের হতে পারেন, হতে পারে সেটা কোন খেলার মাঠে গেলেন, অথবা কোন বন্ধুর বাসায় ভ্রমণ আপনার বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া সাথে অভ্যস্থ করে তুলুন

যারা জীবনে প্রথম বারের মত মা হয়েছেন তাদের কাছে এই বাচ্চার রুটিনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ সুতরাং, আপনার বন্ধু, পরিবার অথবা ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন

বাচ্চার পরিবর্তনঃ প্রথম বছরে বাচ্চার অনেক পরিবর্তন আসবে যেমন ওজন প্রায় তিন গুনের মত বেড়ে যাবে, বসতে পারবে, হামা গুড়ি দিতে পারে, এমন হতে পারে যে হাটা শিখে যাবে

অনেক সময় আপনার বাচ্চা অন্য বাচ্চাদের থেকে দ্রুত ঐ সব দক্ষতা অর্জন করে ফেলবে এই দ্রুত পরিবর্তনের সাথে নিজেকে তাল মিলিয়ে নিতে গিয়ে আপনার অবস্থা প্রায় যায় যায়

তার এই দ্রুত বেড়ে ওঠাকে আমারা কয়েকটা ধাপে ধাপে ভাগ করতে পারিঃ

·        ২ সপ্তাহ

·        ৩ সপ্তাহ

·        ৬ সপ্তাহ

·        তিন মাস

·        ৬ মাস

এই সময়ে সে অনেক বেশি বেশি সময় ঘুমাবে, অথবা রাতে ঘুম থেকে উঠে যাবে আপনি হয়ত এই ব্যাপারটাও খেয়াল করবেন যে সে আগের থেকে বেশি ক্ষুধার্ত থাকে

আপনি হয়ত অনেক সময় হতাশ হয়ে যাবেন যে আপনার অনেক কষ্ট করে বানানো রুটিন বাচ্চার সাথে মিলছে না এইটা খুবই স্বাভাবিক কারণ আপনার বাচ্চার পরিবর্তন হচ্ছে অনেক দ্রুত গত ছয় মাসে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে

যদি দেখেন আগের রুটিনের সাথে সব কিছু মিলছে না, তাহলে রুটিনে পরিবর্তন আনুন তার নতুন নতুন দক্ষতার সাথে তাল মিলিয়ে যেমন আপনার বাচ্চা এখন বসতে পারে সে গোসলের সময় চেষ্টা করবে বসে গোসল করার জন্য সে হয়ত এমন কিছু চাইবে যা তাকে গোসল করার সময় সোজা রাখে এই জন্য তাকে আপনি বাথ সাপোর্ট দিতে পারেন

পরিশিষ্ট

আপনার বাচ্চার সুবিধা মত, তার বয়স এবং দক্ষতার সাথে মিল রেখে রুটিন করন

আমরা শুধু দেখিয়ে দিয়েছি কি ভাবে রুটিন করবেন এবং আপনার বাচ্চাকে কি ভাবে একটা রুটিনের সাথে অভ্যস্থ করে তুলবেন তবে এই রুটিনের সাথে অভ্যস্থ হয়ে চলা এবং বাচ্চার সুবিধা মত রুটিন করা, দুইটাই তখনই সম্ভব যখন আপনি বাচ্চার সাথে বেশি বেশি সময় সময় দিবেন

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০