বাচ্চাকে সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা শেখানোর টিপস

কথায় আছে “দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা দরকার”। দাঁতের সমস্যা শিশুদের জন্য আমাদের দেশে একটি অন্যতম সমস্যা। শিশু অবস্থা থেকেই যদি দাঁতের সঠিক যত্ন নেয়া না যায় সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে বাচ্চাদের দাঁতের বিভিন্নরকম রোগে ভুগতে হয়। সেই প্রেক্ষিতে শিশু অবস্থা থেকেই পিতা মাতাকে বাচ্চার প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হয়। শিশুদের দাঁত ওঠার আগে ও পরে চাই উপযুক্ত যত্ন । দাঁতের শুরুটা আরম্ভ হয় সঠিকভাবে দাঁত মাজা থেকে।আর ছোটবেলা থেকেই বাবা মার উচিৎ বাচ্চা যত্নের কে সঠিকভাবে দাঁতের পরিচর্যা শেখানো।

 

বাচ্চাদের দাঁত মাজায় লক্ষণীয় বিষয়ঃ

বাচ্চাদের দাঁত মাজা শেখানোর ক্ষেত্রে বাবা-মাকে যেসকল ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

 

১।আনুমানিক ৪৫ ডিগ্রি কোণে ব্রাশটাকে সমান্তরালে রাখতে হবে যাতে ব্রাশের অর্ধেকটা মাড়িতে আর অর্ধেকটা দাঁতে থাকে।

২।প্রথমে উপরের পাটির বাইরের দিক্ টা হালকা ভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডান দিকে এবং বাঁ দিকে পেছনের দাঁত মাজুন

৩।নিচের পাটির দাঁতের বাইরের দিকটা একইভাবে মাজতে শেখান।

৪।ব্রাশ টাকে আড়াআড়ি ভাবে উপরের পাটি বাঁ নিচের পাটির দাঁতের ভেতরে মাজার চেষ্টা করাতে হবে।

৫।উপরের এবং নিচের দাঁতের ধারালো অংশে ব্রাশ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করা শেখাতে হবে।

৬।দাঁত মাজা হয়ে গেলে ব্রাশ দিয়ে আলতো ভাবে জিভ পরিষ্কার করা শেখাতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাড়ি বা দাঁতের গোঁড়ায় বেশি চাপ না পড়ে।

 

কিভাবে বাচ্চাকে দাঁত মাজা শেখাতে হবেঃ

সাধারনত ছয় মাস বয়সে বাচ্চাদের দাঁত উঠা শুরু হয়। দুই-আড়াই বছরের মধ্যে দুধের দাঁত অনেক গুলোই উঠে যায়। ছয় বছরের মধ্যে দুধের দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত উঠতে শুরু করে। এই পর্যায়ে শিশুদের দাঁতের উপযুক্ত পরিচর্যা নেয়া উচিৎ। বাচ্চাদের ব্রাশ করা শেখাতে প্রাথমিক ভাবে যে সকল দিকগুলো বাবা-মাকে লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো হলঃ

 

১। বাচ্চাদের প্রথমে খেলার ছলে দাঁত মাজানো শেখাতে হবে। নতুন কোনও জিনিস বাচ্চারা সহজে মানিয়ে নিতে না পেরে কান্নাকাটি ও করতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় বাচ্চাদের কখনও জোর করা উচিৎ নয়। বরং ধীরে ধীরে খেলার ছলে নিজেদের সাথে বাচ্চকে দাঁত মাজা শেখাতে হবে।

 

২। দাঁত ওঠার সময় বাচ্চারা অধিক সমস্যায় পড়ে থাকে। জ্বরের সাথে দাঁতের মাড়ি ব্যথা করতে পারে। এই সময় ঠাণ্ডা জলে তুলো ভিজিয়ে মুখের বাইরে এবং মাড়িতে হালকা ভাবে বুলাতে হবে।

 

৩। দাঁত ওঠার সময়টাতে ঠাণ্ডা দই এবং ম্যাস করা ফল খেতে দেয়া যেতে পারে।

 

৪। দাঁত ভাল করে ওঠার আগে এক টুকরো গজের কাপড় আঙুলে জড়িয়ে মাড়ি পরিষ্কার করতে হবে।

 

৫। বাচ্চার বয়স ৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত বড়দের টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবেনা। কারণ এতে ফ্লুরাইড থাকে যা বাচ্চার দুধ দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাচ্চার দুধদাঁত পড়া শুরু হবার আগ পর্যন্ত ওকে ফ্লুরাইডবিহীন বেবি জেল টুথপেস্ট দেবেন।

 

৬। বাচ্চাদের বাবা-মা নিজেদের সাথে ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেহেতু বাচ্চারা খুব অনুকরনপ্রিয়, বাবা-মা থেকেই বাচ্চারা প্রথম শিখবে।

 

 

 

বাচ্চাদের দাঁত মাজার অভ্যাস গড়ে তোলার উপায়ঃ

 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের দাঁত মাজার অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। শিশু অবস্থায় বাচ্চাদের উৎকৃষ্ট সময় দাঁত মাজা শেখানোর অভ্যাস গড়ে তোলা। দাঁত ব্রাশে বাচ্চাদের অভ্যস্ত করে তোলার প্রাথমিক উপায়ঃ

 

১। দিনে দুইবার দাঁত মাজার সাথে সাথে বাচ্চাদের কোনও কিছু খাওয়ার পর মুখ ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

 

২। বাচ্চার সাথে বাবা মার ও দাঁত ব্রাশ করতে হবে যাতে বাচ্চারা অনেক বেশি দাঁত ব্রাশ করতে উৎসাহী হবে।

 

৩। একটি নির্দিষ্ট সময় পর থেকেই বাচ্চাকে নিজে ব্রাশ করতে দিন। অবশ্য টুথপেস্ট যাতে গিলে না ফেলে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

৪। চকলেট, মিষ্টি, স্নেক্স, ফাস্টফুড এসবের প্রতি বাচ্চারা অনেক বেশি আকর্ষিত হয়ে থাকে। বাবা মাকে অবশ্যই এসব্ খাবারের প্রতি নজরদারি হতে হবে যাতে ফাস্টফুডে বাচ্চা অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে । এসব খাবার দাঁতের জন্য খুব বিপদজনক। তাই এসব খাওয়ার সাথে সাথে মুখ ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

 

৫। বাচ্চারা যেন রাতে খাওয়ার পর পরই ঘুমিয় না পড়ে সেই দিকে বাবা-মাকে অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের দাঁত ব্রাশ করে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

পরিশিষ্ট:

 

ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের দাঁতের যত্ন নেয়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা একজন সচেতন বাবা-মা হিসেবে আপনি কি অবগত? ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের দাঁতের সমস্যা থাকলে তা পরবর্তীতে বিভিন্নরকম দাঁত ও মাড়ির যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। বাবা-মার একটু যত্ন বাচ্চাদের সুস্থ দাঁত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা বাচ্চাদের সারাজীবন সহাস্য থাকতে সাহায্য করবে। উপযুক্ত পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ সর্বদা নেয়া উচিৎ।

 

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০