প্রসবোত্তর মায়েরা যে ৫ ধরণের মানসিক সমস্যা ফেস করেন

গর্ভাবস্থায় অবস্থায় অনাগত সন্তানকে নিয়ে মায়ের যতটা আনন্দ ও উৎকণ্ঠা থাকে অনেকসময় দেখা যায়  সন্তান জন্মের পর মায়ের মধ্যে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস নেই।

প্রসবোত্তর অনেক মায়েরাই এধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৩ শতাংশ প্রসবোত্তর মায়েরা  নানাধরনের বিষন্নতায় ভুগতে থাকেন।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের মানসিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

প্রসবোত্তর মানসিক সমস্যা হওয়ার কারণসমূহ:

·        কম বয়সে মা হওয়া,

·        প্রসবোত্তর মায়েদের মস্তিষ্কের নিউরনে নানা ধরনের পরিবর্তনের ফলে ,

·        পূর্বে যদি মায়ের  মানসিক অসুস্থতা থাকে,

·        মায়ের পরিবারের মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস থাকলে ,

·        সদ্যজাত সন্তানের যত্নের জন্য মায়ের ওপর যে চাপ থাকে তার কাড়নস্বরূপ দুশ্চিন্তা ,

·        মানসিক চাপ,

·        প্রথম সন্তান ছেলে না হওয়ায় পরিবারের বয়স্কদের তির্যক কথাবার্তা ,

·        দাম্পত্য অশান্তি,কলহ ইত্যাদি।

 

কখন বুঝবেন একজন প্রসবোত্তর মা বিষন্নতায় ভুগছেন:

·        অস্থির ও মনমরা হয়ে থাকলে ,

·        সারাক্ষণ কান্নাকাটি করলে ,

·        খেতে না চাওয়া বা পরিমানে বেশী খেতে চাওয়া ,

·        কম ঘুম যাওয়া বা ঘুমের পরিমান বেড়ে যাওয়া ,

·        উদ্যমহীন হয়ে পড়া ,

·        মনোযোগের অভাব ,

·        অতিরিক্ত চিৎকার, চেঁচামেচি করা ,

·        হঠাৎ হঠাৎ ভুলে যাওয়া ,

·        বন্ধু ও পরিবার থেকে নিজেকে দূরে রাখা ,

·        সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ,

·        সবসময় নিজেকে অপরাধী ভাবা ,

·        ঘনঘন মাথাব্যথা  ও পেটে নানা সমস্যা দেখা দেয়া ,

·        কোন কাজে উৎসাহ না পাওয়া ইত্যাদি

প্রসব পরবর্তী মায়েরা যে ৫ ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন :

১. বেবি  ব্লু (Baby Blue)

শতকরা ৫০-৭০ ভাগ মা এ সমস্যায় ভোগেন। প্রসবের তিন-চার দিন পর অসুস্থতা দেখা দেয়।

লক্ষণসমূহ:

§  মায়ের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া

§  ক্ষণে ক্ষণে মনের আবস্থার পরিবর্তন হওয়া ,যেমন: এই খুশি, এই দুঃখ

§   মাঝে মধ্যে অকারণেই কেঁদে ফেলা

§  সবসময় চোখমুখে কেমন ঘোলা ঘোলা ভাব।

§  অনিদ্রা

§  সন্তানের প্রতি মনোযোগের অভাব

§  যেকোনো বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করা

§  হঠাৎ হঠাৎ অধৈর্য  হয়ে পড়া

§  এ অবস্থার জন্য চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন নেই।  কয়েক দিনের মধ্যেই প্রসূতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

 

২. পোস্টপার্টাম সাইকোসিস  (Postpartum Psychosis)

প্রসবোত্তর মানসিক সমস্যার মধ্যে এ রোগটিই মানুষের কাছে বেশি পরিচিত। প্রতি হাজারে এক থেকে দু’জন প্রসূতি মা এ রোগে আক্রান্ত হন। সাধারণত প্রসবোত্তর প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তায় এ রোগটি দেখা দেয়।

লক্ষণসমূহ:

§  ঘুম না হওয়া,

§  যখন তখন বিরক্তি প্রকাশ,

§  মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া,

§   খাওয়া-দাওয়া ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীন,

§  আবোল-তাবোল বলা,

§  হঠাৎ বাড়ির বাইরে এদিক-ওদিক চলে যেতে চাওয়া,

§  অযথা ভয় পাওয়া,

§  সন্তানের যত্ন না নেয়া,

§  ননবজাতক সম্পর্কে ভ্রান্ত বিশ্বাস

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সাইকোথেরাপি, সামাজিক সচেতনতার উন্নয়ন ও এন্টিসাইকোটিক ঔষুধ দ্বারা এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক চিকিৎসা (ইসিটি) ব্যবহার করা যেতে কয়েক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যায়।  কিছু কিছু রোগীর অসুস্থতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে।

 

৩. পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpartum Depression)

১০-১৫% ভাগ মা প্রসবোত্তর বিষণ্ণতায়  ভোগেন। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩০% নারী শিশুজন্মপূর্ব বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন এবং এরা যদি তখন প্রয়োজনীয় সাহায্য ও চিকিৎসা না পান তবে এদের প্রায় ৫০% প্রসবোত্তর বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন। সাধারণত প্রসবের দুই সপ্তাহ পর এ সমস্যা শুরু হয়।

লক্ষণসমূহ:

§  মায়ের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়  

§  সব কিছুতে কেমন যেন উদাস উদাস থাকে।

§  অত্যন্ত ক্লান্তবোধ করা

§  অহেতুক দুশ্চিন্তা করা

§  বিষাদগ্রস্থ থাকা

§  খাওয়াতে অরুচি

§  ঘুমাতে কষ্ট

§  পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া

§  সন্তানের প্রতি কোনো আগ্রহ না থাকা

§  প্রসূতির মনে এমন ভ্রান্ত বিশ্বাস জন্ম নিতে পারে যে সদ্যজাত
সন্তানের কোনো শারীরিক বা মানসিক খুঁত আছে, সন্তানটি তিনি মানুষ করতে পারবেন না, অতএব একে মেরে ফেলাই ভালো। প্রসূতি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন।

এধরনের মানসিক রোগের  আক্রান্ত প্রসূতি মায়েদের জন্য বিষন্নতা বিরোধী ঔষধ এবং থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। যদি এই রোগ তীব্র আকার ধারণ করে , তবে রোগীকে ইলেকট্রিক শক থেরাপি দিয়ে থাকেন ডাক্তার। 

৪. পোস্টপার্টাম এনক্সাআইটি (Postpartum Anxiety)

শতকরা ১০ ভাগ প্রসূতি মায়েরা এধরনের মানসিক রোগে ভুগতে থাকেন।

লক্ষণসমূহ:

§  চরম উদ্বেগে থাকা

§  কোন কারন ছাড়াই চরম অস্বস্তিবোধ হতে থাকা

§  শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট

§  বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি

§  মাথা ঘোরা

§  নির্জীব থাকা

§  শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

§  নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা

§  পাগল হয়ে যাওয়ার ভয় বা মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত হওয়া

পোস্টপার্টাম এনক্সাআইটিতে আক্রান্ত মায়েদের কাছ থেকে শিশুকে কিছু দিনের জন্য একটু দূরে রাখায় শ্রেয়।

এধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত মায়েদের  চিকিৎসা হিসেবে স্বাস্থ্যকর নিরিবিলি জায়গা থেকে কয়েকদিন কাটিয়ে আসলে এ রোগ থেকে দ্রুত পরিত্রান পাওয়া যায়।

৫. পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (Post-Traumatic Stress Disorder)

সন্তান প্রসবের পর ১-৬%  প্রসূতি নারী এ সমস্যায় আক্রান্ত হন। স্বাভাবিক প্রসবের পরিবর্তে অপরিকল্পিত সিজারিয়ান, সন্তান জন্মানোর মুহূর্তে হঠাৎ মায়ের জটিল কোন সমস্যা দেখা দেয়া, শিশু জন্মানোর তীব্র শারীরিক কষ্ট পাওয়া, জন্মানোর পর সন্তানকে যদি আইসিতে রাখা হয়, ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যার কারনে প্রসূতি মা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হন।

লক্ষণসমূহ:

§  সন্তান জন্মের মুহূর্তগুলো দু:স্বপ্ন হয়ে প্রতিনিয়ত দেখা দেয়া

§  বিষন্নতা

§  অনিদ্রা

§  উদ্বেগ এবং হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই আতঙ্কিত হয়ে পড়া

§  বাস্তবতা এবং জীবন থেকে নিজেকে দূর সরিয়ে রাখা

§  অতীতে কোন দূর্ঘটনায় পুনরায় স্মৃতি ফিরে আসা এবং ভয়ে নিজেকে সিঁটিয়ে রাখা

ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত মায়েদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া খুব প্রয়োজন। যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে প্রসূতি মা দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

পরিশিষ্ট:

সন্তান প্রসবের পর মানসিক সমস্যার ঝুঁকি  থাকে বেশি। এ কারণে গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতীকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে হবে। দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে ফেলতে হবে। সদ্যপ্রসূতির শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, সদ্যজাত শিশুর যত্নে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করতে হবে। আর  সর্বোপরি তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই সন্তান ও মায়ের সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন প্রত্যাশা করা সম্ভব।

রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০

 

অনুসন্ধান এর বিষয়

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল