আপনিও কি বাচ্চা নেবার পর দাম্পত্য জীবনটাকেই হারিয়ে ফেলেছেন?

একটি শিশুর আগমনে একটি পরিবারে বয়ে যায় আনন্দের ধারা। নতুন শিশুকে নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। সকাল থেকে রাত সে কী খাবে, কখন ঘুমাবে, কখন গোসল করবে এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তখন নতুন মা। নিজের যত্ন নিতেই তার সময় বের করা মুশকিল হয়ে যায়। তার ওপর শিশুর কোনো অসুখ হলে তো কথাই নেই। সারা রাত সন্তানের মাথার পাশেই কেটে যায় মা-বাবার। নতুন নতুন বাবা-মা হওয়ার পর তাই অনেক দম্পতির ভিতরে তৈরি হয় দূরত্ব। সন্তানের যত্নআত্তি করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চলে আসে স্থবিরতা। নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক হওয়াটা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আবার একসঙ্গে সময় কাটানোও হয়ে ওঠে না। যার ফলে দুজনের বোঝাপড়ার ভিতরেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। নতুন শিশুকে লালন পালন করার মধ্যেই নিজেদের জন্য সময় বের করে নিতে হয়। বাচ্চা হওয়ার পর দাম্পত্য জীবন স্বাভাবিক রাখার কিছু টিপস দেখে নিতে পারেন এখানে।

স্বামীর সহযোগিতা

দাম্পত্য জীবন কখনো একার চেষ্টায় সুন্দর হয় না। স্বামী স্ত্রীর উভয়ের চেষ্টায় একটি দাম্পত্য জীবন হতে পারে অনাবিল আনন্দের। দুজনের ভিতরেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজ করলে অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায়। নয়তো শুধু ঝামেলাই বাড়ে। বাচ্চা হওয়ার পর একজন নারীর জীবন হুট করে বদলে যায়, অনেক বড় এক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পথ চলতে হয় তার। কোনো মা যদি শুধু গৃহিণীও হয়ে থাকেন তবুও তার সময় হয় না নিজের দিকে একটু তাকাবার। বাচ্চার বাবা সেটা না বুঝলে তৈরি হয় মন কষাকষি। স্বামী সারাদিন বাইরে কাজ করে এসে যদি মনে করেন তার স্ত্রী সারা দিন ঘরেই ছিল তাই তার কোনো পরিশ্রম হয় নি তাহলে তা নতুন মায়ের প্রতি অন্যায় আচরণ হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে একটি শিশুর পরিচর্যা আসলে একা করাটাও অনেক কঠিন। এসব ক্ষেত্রে তাই স্বামীর সহযোগিতা খুব বেশী আশা করেন নারীরা। বাচ্চা হওয়ার পর এমনিতেই অনেকের মন খারাপ থাকে শরীরের পরিবর্তন আর জীবন যাপনের পরিবর্তনের কারণে। সে সময় স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া যে কোনো সহযোগিতা মায়েদের জন্য টনিকের মতো কাজ করে। আর স্বামী সহযোগিতা না করলে নতুন মায়ের হয়ে যায় মন খারাপ। আর সে থেকেই দাম্পত্য জীবনে ছেঁদ ঘটে। বাচ্চা হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধুমাত্র নারী-পুরুষের ভিতরকার সম্পর্ক থাকে না। তাদের মাঝখানে থাকে একজন শিশু যার ভালো মন্দের দায়িত্ব তার মা-বাবার উপর নির্ভর করছে। একজন মা যদি দেখেন তার বাচ্চার বাবার তার দিকে বা নতুন শিশুর দিকে তেমন মনোযোগ নেই তাহলে সেটার প্রভাব স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উপরেও পড়বে। বাচ্চার কিছু ছোট ছোট কাজ সময় বাবা করে দিলে মায়ের যেমন একটু বাড়তি সময় মেলে তেমনি মায়ের ভালোও লাগে এই ভেবে যে তার স্বামী তাদের কেয়ার করেন। আমাদের দেশের অনেক নতুন বাবা ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না যে নতুন শিশুর সাথে যে তার দাম্পত্য সম্পর্কও জড়িয়ে আছে। অনেক ক্ষেত্রে দাম্পত্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে স্ত্রীকেও দোষারোপ করেন কেউ কেউ। এমনটি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং বাচ্চার বাবা ব্যাপারটি না বুঝলে নিজে অথবা বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ কারো মাধ্যমে তাকে তার নতুন দায়িত্বগুলো বুঝাতে হবে। মায়ের শরীর মন ভালো না থাকলে সে যেমন বাচ্চাকে সুন্দর শৈশব উপহার দিতে পারবে না তেমনি দাম্পত্য সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হবে। তাই ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলে সুন্দর দাম্পত্য নিশ্চিত করতে হবে।  

 

মেনে নেয়ার মানসিকতা

কিছু ব্যাপার আছে যা প্রাকৃতিক। যা চাইলেই মানুষ এড়াতে পারে না। বাচ্চা হওয়ার পর নারী শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে। যা নিয়ে অনেকে এত মন খারাপ করেন, বা লজ্জা পান যে স্বামীর সাথে ঠিক মতো মিশতে পারেন না। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মা হওয়ার মতো একটি বড় পরিবর্তনের কারণে অনেক কিছুই আর আগের মতো থাকবে না, এটা মেনে নিতে হবে। যেমন আগের মতো চাইলেই স্বামী-স্ত্রী কোনো ঝামেলা ছাড়াই এক সাথে সময় কাটাতে পারবেন না। সময় সবার আগে শিশুকেই গুরুত্ব দেয়াটাই যুক্তিযুক্ত। বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিড করানো এবং বাচ্চার যত্নের কারণে রাত জাগার কারণে অনেক নারী সময় শারীরিক ভাবে মিলিত হতে অনাগ্রহ বোধ করেন অবসাদ থাকে তখন সারা দেহ জুড়ে। এতে অস্থির হওয়া যাওয়ার কিছু নেই। আবার সব কিছু আগের মতোই হয়ে যাবে। বিষয়গুলো মেনে নেয়ার পাশাপাশি হাল ছেড়ে দিলেও কিন্তু চলবে না। নিজের সর্বোচ্চ যত্ন নেয়ার চেষ্টা রাখতে হবে নিজের মাঝে। সব সময় যদি ভাবতে থাকেন আমার দাম্পত্য সম্পর্ক বুঝি হারিয়েই যাচ্ছে তাহলে কিন্তু এই ভাবনাটাই আপনাকে চালিত করতে থাকবে। সময়টা অল্প কিছুদিনের। ধৈর্য্য ধরে দেখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।

নিজের জন্য আলাদা সময়

দাম্পত্য জীবনে সুখ পেতে চাইলে নিজের দিকেই আগে মনোযোগ দিতে হবে। স্বামীর সাথে সময় কাটানোর আগে নিজের সাথে কিছু সময় কাটানো নিয়ে ভাবুন। নিজের শারীরিক বা মানসিক উন্নতির জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় ইয়োগা করা। পারলে ইয়োগা ক্লাসে যোগ দিন। এতে আত্মবিশ্বাস, মনোযোগ, মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবেন। আর সেই সাথে ফিরে পেতে পারবেন আগের শরীর। সাঁতার কাটাও সময় অবসাদ কাটাতে খুব ভালো সাহায্য করবে। ঘর থেকে বেরুতে সময় অনেক ক্লান্তি কাজ করে। সেক্ষেত্রে পাল্টে ফেলুন পোশাকের ডিজাইন। এমন কোনো পোশাক নির্বাচন করুন যা খুব সহজেই চট করে পড়ে বাইরে চলে যাওয়া যায়। সকাল দিকে এমন কোনো কিছুতে সময় দিতে চাইলে স্বামীর সাহায্য চান। যেন সে সময়টা বাচ্চার দেখাশোনা করতে পারেন তিনি।

নিজেদের জন্য আলাদা কিছু সময়

বাচ্চা হওয়ার পর পরিকল্পনা ছাড়া দাম্পত্য সম্পর্কের উন্নতি সম্ভব নয়। নিজেদের জন্য আলাদা করে সময় বের করতে চাইলে সেটার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সপ্তাহের একদিন স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য আগেই বার ঠিক করে রাখুন। হতে পারে সেটা ছুটির দিনের আগের রাত। কারন তাতে পরদিন সকালে একটু দেরীতে ঘুম ভাঙলেও সমস্যা নেই রাতের খাবারের পর একসাথে কোনো মুভি দেখতে পারেন অথবা স্রেফ গল্প করেই কাটাতে পারেন সময়। সব সময় যে বাচ্চাকে নিয়েই কথা বলতে হবে তা কিন্তু নয়। সময়টা শুধু নিজেদের ব্যাপারে কথা বলুন বা যা ভালো লাগে। মোট কথা, মনের জানালাটা খুলে দিন সঙ্গীর সামনে, মা হলেও আপনি একজন ব্যক্তি। আপনার অনুভূতি, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আপনার আবেগ যা আপনার দাম্পত্য জীবনের সুরে মিশে গেছে সেগুলো প্রকাশ করুন। দাম্পত্য জীবন নতুন করে ট্র্যাকে আসতে সময় লাগবে না!   

শারীরিক সম্পর্ক
বাচ্চা হওয়ার পর শিশুর যত্ন এবং তার উপস্থিতির কারণে অনেক দম্পতিই শারীরিক মিলন থেকে বিরত থাকেন। আবার অনেক নারী শারীরিক ভাবে চাহিদাও কম বোধ করতে পারেন, যেহেতু ক্লান্তি কাজ করে শরীরে। তবে সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শারীরিক মিলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শিশুকে নিয়ে যে বিছানায় ঘুমানো হয় শারীরিক মিলনের সময় সে বিছানা ব্যবহার না করাই ভালো। এতে অস্বস্তির ব্যাপারটা থাকবে না। আবার শিশুকে একা ঘরে রেখে পাশের ঘরে গেলেও মায়ের মনোযোগ শিশুর ঘরের দিকেই থাকবে। এজন্য একটা এক্সট্রা ম্যাট্রেস ব্যবহার করতে পারেন ফ্লোরে। যেন প্রয়োজনের সময় সেটা ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত বা স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও জরুরী। দুধ-ডিম বা মাংসজাত প্রোটিন সময় নারীর শারীরিক চাহিদা তৈরিতে সাহায্য করে।  

পরিশিষ্ট

দাম্পত্যের সত্যিকারের মাধুর্য অনেকে কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পরই খুঁজে পান, এটা জানেন কি? ভেবে দেখুন তো কেন? মানুষের সম্পর্ক হাজার বছর ধরেই এই নিয়মেই চলে আসছে। প্রথমে দুটি দুরকমের মানুষের এক হওয়া এবং তার পর তাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে জন্ম নেয় নতুন প্রান। এর সরল সৌন্দর্য উপভোগ করুন নিজেদের সব কিছু দিয়ে। দাম্পত্য জীবন বলতে কি আলাদা কিছু আছে? এই তো মানুষের জীবন। যা যুগ যুগান্তর ধরেই এমন ছিল, আশা করা যায় পরেও থাকবে!  

আমাদের কল সেন্টারে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার ০৯৬১২-২২২-৩৩৩

 

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল