supermom-logo
Go to Home
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম: উপকারিতা ও সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম: উপকারিতা ও সতর্কতা

গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর শরীর এবং মনে নানা পরিবর্তন আসে। হরমোনের পরিবর্তন থেকে শুরু করে শারীরিক গঠন এবং মানসিক স্থিতিশীলতাতেও পরিবর্তন দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় শরীরকে সুস্থ এবং ফিট রাখাটা খুব জরুরি যা ব্যায়ামের মাধ্যমে সম্ভব। ব্যায়াম শুধু শরীরকে ফিট রাখে না, এটি মা ও শিশুর সুস্থতার জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও মাত্র প্রায় ৪০% নারী ব্যায়াম শুরু করে বা ধরে রাখে। একজন গর্ভবতী মহিলাকে নিজের ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ব্যায়াম করতে সহজে উৎসাহিত করা যেতে পারে। তবে, এগুলো বাস্তবসম্মত ও নিরাপদ হওয়া আবশ্যক, এবং সেটির জন্য নিয়মিত ডাক্তারের ফলোআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ব্যায়াম নির্বাচন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে গর্ভাবস্থা আরও আনন্দময় হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের উপকারিতা:

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই উপকারী। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি গাইডলাইনস ফর আমেরিকান্সে গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পরবর্তী সময়ে ব্যায়ামের সুপারিশের ওপর জোর দেয়া হয়েছে— এতে বলা হয়েছে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার অ্যারোবিক কার্যকলাপ করতে হবে।

 নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

শারীরিক উপকারিতা:

  • কোমর ব্যথা হ্রাস: গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হলো ওজন বাড়া এবং শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তনের কারণে মেরুদণ্ডের উপর চাপ বৃদ্ধি। এ কারণেই গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ৬০% এর বেশি পেটের নিচের অংশে ব্যথার শিকার হন। সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে কোমর এবং পেটের পেশী শক্তিশালী করা যায়, যা কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি: ব্যায়াম করলে শরীরের শক্তি বাড়ে, যা প্রসবের সময় খুব দরকারি। এটি শরীরের সহনশীলতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাড়া একটি উদ্বেগের বিষয়। ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং অতিরিক্ত মেদ জমতে দেওয়া যায় না। ব্যায়াম স্বাভাবিক ওজনের, অতিরিক্ত ওজনের ও স্থূল মহিলাদের মধ্যে মোট ওজন বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়— সাধারণত প্রায় ১–২ কেজি পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।৪ ৫
  • হজমক্ষমতা উন্নত করা: ব্যায়াম হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়।
  • ঘুমের মান উন্নত করা: নিয়মিত ব্যায়াম করলে রাতের ঘুম ভালো হয় এবং শরীর সতেজ থাকে।

মানসিক উপকারিতা:

  • মানসিক চাপ হ্রাস: গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য বিষয়, কারণ এই সময়ে গর্ভাবস্থা ও প্রসবের কারণে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে এবং মন শান্ত থাকে। এটি হরমোনের নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে মানসিক শান্তি এনে দেয়।
  • মেজাজ ভালো রাখা: গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের হার ট্রাইমিস্টার অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। তবে যেকোনো সময়ই ব্যায়াম মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: ব্যায়াম করলে নিজের শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ে এবং আত্মবিশ্বাস জন্মায়।

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রকারভেদ:

গর্ভাবস্থায় কিছু ব্যায়াম নিরাপদ এবং কিছু ব্যায়াম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই, কোন ব্যায়াম করা উচিত আর কোন ব্যায়াম করা উচিত না, তা জানা জরুরি।

নিরাপদ ব্যায়াম:

  • হাঁটা: গর্ভাবস্থায় হাঁটা সবচেয়ে নিরাপদ এবং সহজ ব্যায়াম। প্রতিদিন ৩০ মিনিটের মতো হাঁটলে শরীর সুস্থ থাকে।
  • সাঁতার: সাঁতার একটি চমৎকার ব্যায়াম, কারণ এতে শরীরের জয়েন্টগুলোর ওপর বেশি চাপ পড়ে না এবং পুরো শরীর একসঙ্গে কাজ করে।
  • যোগ ব্যায়াম: গর্ভাবস্থার জন্য বিশেষ যোগাসন (যেমন- প্রিনেটাল যোগ ব্যায়াম) করা যেতে পারে। এটি শরীরকে নমনীয় করে এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়।
  • কম তীব্রতার অ্যারোবিক্স: হালকা অ্যারোবিক্স, যেমন আস্তে আস্তে নাচ বা হালকা কার্ডিও ব্যায়াম করা যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় অ্যারোবিক অনুশীলন স্বাভাবিক ও বেশি ওজনের গর্ভবতী মহিলাদের কার্ডিওরেসপিরেটরি সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।Top of Formর

বর্জনীয় ব্যায়াম:

  • উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম: যে ব্যায়ামগুলোতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যেমন দৌড়ানো বা লাফানো, সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
  • ভারী ওজন তোলা: ভারী ওজন তুললে পেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ক্ষতিকর হতে পারে।
  • পেটের ওপর চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম: সিট-আপ বা ক্রাঞ্চেসের মতো ব্যায়াম করা উচিত না।

ব্যায়াম শুরুর আগে সতর্কতা:

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম শুরু করার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • ডাক্তারের পরামর্শ: যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক ব্যায়াম নির্বাচন করতে সাহায্য করবেন।
  • শারীরিক অবস্থা: যদি আগে থেকে কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, তাহলে ব্যায়াম শুরু করার আগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ক্লান্ত লাগলে বিরতি: শরীর ক্লান্ত লাগলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রাম নিতে হবে। অতিরিক্ত ক্লান্তি শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

ব্যায়ামের সময় লক্ষণীয় বিষয়:

  • সঠিক ভঙ্গি: ব্যায়াম করার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা খুব জরুরি। ভুল ভঙ্গিতে ব্যায়াম করলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান: ব্যায়ামের সময় যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা উচিত, যাতে শরীর পানিশূন্য না হয়ে যায়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস: ব্যায়ামের সময় সঠিক নিয়মে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া জরুরি। এতে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক থাকে।

কখন ব্যায়াম বন্ধ করতে হবে:

কিছু লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়াম বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • তলপেটে ব্যথা
  • মাথা ঘোরা
  • শ্বাসকষ্ট
  • যোনিপথে রক্তপাত
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা মা ও শিশু উভয়ের জন্য অনেক উপকারী। তবে, ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক নিয়ম মেনে ব্যায়াম করা জরুরি। সঠিক ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন আপনাকে একটি সুস্থ এবং আনন্দময় গর্ভাবস্থা উপহার দিতে পারে।

তথ্য সুত্র need to know icon

  1. Cooper, D. B., & Yang, L. (2023, April 17). Pregnancy and exercise. (https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK430821/ )
  2. U.S. Department of Health and Human Services . Physical activity guidelines for Americans . 2nd ed . Washington, DC : DHHS ; 2018 . Available at: https://health.gov/paguidelines/second-edition/
  3. Wang SM, Dezinno P, Maranets I, Berman MR, Caldwell-Andrews AA, Kain ZN. Low back pain during pregnancy: prevalence, risk factors, and outcomes. Obstet Gynecol 2004; 104 (1): 65 – 70.
  4. Choi J, Fukuoka Y, Lee JH. The effects of physical activity and physical activity plus diet interventions on body weight in overweight or obese women who are pregnant or in postpartum: a systematic review and meta-analysis of randomized controlled trials . Prev Med 2013; 56: 351 – 64.
  5. Muktabhant B, Lawrie TA, Lumbiganon P, Laopaiboon M. Diet or exercise, or both, for preventing excessive weight gain in pregnancy. Cochrane Database of Systematic Reviews 2015, Issue 6. Art. No.: CD007145. DOI: 10.1002/14651858.CD007145.pub3.
  6. Lewicka M., Wójcik M. Charakterystyka negatywnych emocji występujących u kobiet w ciąży wysokiego ryzyka. Eur. J. Med. Technol. 2013; 1:60–67. [Google Scholar]
  7. Bouzari Z., Rad M.N., Tayebi E., Khah F.K., Hajiahmadi M. Depression risk factors in different trimesters of pregnancy in Iranian women. Womens Health Gynecol. 2016;2:1–5. [Google Scholar]
  8. South-Paul JE, Rajagopal KR, Tenholder MF. The effect of participation in a regular exercise program upon aerobic capacity during pregnancy. Obstet Gynecol 1988; 71: 175 – 9.