supermom-logo
Go to Home
স্তন্যদানকারী মায়ের খাদ্যাভ্যাস

স্তন্যদানকারী মায়ের খাদ্যাভ্যাস

ভূমিকা

শিশু জন্মের পর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত তার একমাত্র খাদ্য হলো মায়ের বুকের দুধ। এই দুধের উপাদান ও মান অনেকটাই নির্ভর করে মায়ের শরীরের পুষ্টি ও তার খাদ্যাভ্যাসের ওপর। এটি শুধু শিশুর শক্তির উৎসই নয়, বরং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং মানসিক নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। বুকের দুধ উৎপাদনের গুণমান ও পরিমাণ সরাসরি মায়ের খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। তাই দুগ্ধদানকালীন সময়ে মায়ের খাদ্য শুধু তাঁর নিজের স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, শিশুর সুস্থতা ও ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে ব্রেস্টফিডিং

বাংলাদেশে ব্রেস্টফিডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে বুকের দুধ দেওয়ার একটা শক্তিশালী সংস্কৃতি রয়েছে। বাংলাদেশের শিশুরা প্রথম বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খায়। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট হেলথ সার্ভে (BDHS) ২০১১ অনুযায়ী, প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ার পরামর্শ পূরণ করে ৬৪ শতাংশ শিশুই। সাথে সাথে, কমপ্লিমেন্টারি খাবার খুবই অল্প বয়সে শুরু করা হয়।

সরকার, বিভিন্ন এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ব্রেস্টফিডিং প্রচার ও প্রসারে কাজ করে, কারণ এটি শিশুর মৌলিক স্বাস্থ্য, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বুকের দুধ সবার জন্য, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারদের জন্য, সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং নিশ্চিত পুষ্টি উপাদান। UNICEF এর মতে,  বাংলাদেশে প্রায় দুই মাসের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৮৫% শিশুই শুধুমাত্র বুকের দুধ খায়। কিছু শিশু পানি (৬%), অন্য দুধ (৭%) এবং বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার (২%) খায়। বাংলাদেশে বোতল/ফিডার দিয়ে দুধ দেয়াও সাধারণ; প্রায় ৫ জনের মধ্যে ১ জন (৬-৯ মাস বয়সী শিশু) বোতলে/ফিডারে দুধ খায়।

 

স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য কেন অতিরিক্ত ক্যালোরি দরকার?

ডেলিভারির পর মায়ের শরীরের জন্য দরকার হয় অনেক শক্তি যাতে মায়ের শরীর ভালভাবে দুধ তৈরি করতে পারে। যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের জন্য দিনে সাধারণ চাহিদার চেয়ে বেশি আরও কিছু ক্যালরি দরকার। সাধারণত, নিজের যত্নের জন্য যেসব ক্যালরি দরকার, তার ওপর অতিরিক্ত প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ ক্যালরি খেলেই হয়। এই অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরকে শক্তি দিয়ে দুধ তৈরি করতে সাহায্য করে।

এই বাড়তি শক্তির  উৎস হল মায়ের দৈনন্দিন খাদ্য। যদি মায়ের খাদ্য পর্যাপ্ত না হয়, শরীর নিজের সঞ্চিত পুষ্টি ব্যবহার করে দুধ উৎপাদন করে, যা মায়ের স্বাস্থ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। সুতরাং এসময় সুষম ও পর্যাপ্ত খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।

প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি, সকালে নাশতা কখনোই এড়ানো যাবে না। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে মা অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন, কারণ শরীর দুধ তৈরি করতে অনেক ক্যালরি ব্যয় করে। তাই, প্রতিদিন তিনবার মূল খাবারের পাশাপাশি দুই বা তিনবার হালকা খাবার (স্ন্যাকস) গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে, সকালের নাশতা কখনই বাদ দেওয়া যাবেনা। সকালের নাশতার কিছু বিকল্প হলো: ফলের স্মুথি, বাদাম, সবজির রোল, স্যান্ডউইচ বা ফলের প্ল্যাটার। এসব খাবার শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে, পাশাপাশি দুধের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

 

স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য কিছু প্রধান পুষ্টি উপাদান ও তাদের গুরুত্ব

প্রসবের পর মা ও শিশুর সুস্থতা ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, শিশুদের সুস্থ বিকাশ, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দরকার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। শিশুর জীবন শুরু থেকেই সঠিক পুষ্টির অভাব হলে তার বৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই, নতুন মায়ের খাদ্যাভ্যাসে নিচের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত করলে মা সুস্থ থাকবে এবং শিশুও সমানভাবে সুস্থ ও শক্তিশালীভাবে বেড়ে উঠবে।

১. প্রোটিন: এটি বুকের দুধের প্রধান উপাদান। শিশুর কোষ বৃদ্ধি, মাংসপেশি গঠন ও টিস্যু পুনর্গঠনে প্রোটিন অপরিহার্য। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় একজন মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খেতে হবে। এতে মায়ের নিজের পেশী ক্ষয় হবে না, এবং শিশুর জন্য পুরোপুরি পুষ্টি নিশ্চিত করা যাবে। বর্তমানে প্রাপ্ত Dietary Reference Intakes (DRI)অনুযায়ী, স্বাভাবিক সুস্থ মহিলাদের (প্রসবের ০ থেকে ৬ মাস) তাদের শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য দিনে গড়ে প্রায় ১.০৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তাই, প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

প্রতিদিনের ব্যায়ামের পাশাপাশি নিজের ডায়েটে পর্যাপ্ত প্রোটিন যোগ করলে বেশি চিনি, বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার ও অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকিং থেকে বিরত থাকা যায়। প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডাল, মাছ, ডিম, বাদাম ও দুধ বেশি করে খেতে হবে যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং সুস্থভাবে সন্তানকে দেখাশোনা করা যায়।

উৎস: মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, ছোলা, সয়াবিন, দুধ ইত্যাদি খাদ্য প্রোটিনের প্রধান উৎস।

 ২. ক্যালসিয়াম: শিশুর হাড় ও দাঁতের বিকাশে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। পাশাপাশি মায়ের হাড়কেও ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এটি।  মায়ের দুধে সর্বদাই এটি থাকে, কিন্তু মা পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করলে মায়ের হাড় ক্ষয়ের সম্ভবনা বেড়ে যায় এবং শিশুরও ক্যালসিয়ামের অভাব পুরোপুরি পূরণ হয় না এবং রিকেটসের ঝুঁকি বাড়ে।

শরীরে ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বেশি অংশ অর্থাৎ  ৯৯% ই হাড়ে থাকে। আর মাত্র ১%, থাকে রক্তে ও নরম টিস্যুতে। এই ক্যালসিয়াম শরীরের উন্নয়ন, হাড় ও দাঁত গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য খুবই জরুরি। এটি শরীরের কোষ, পেশী ও হরমোনের কাজকর্ম সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। সুতরাং, পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ শরীর ও মন ভালো রাখতে অবশ্যই অপরিহার্য।

উৎস: ছোট মাছ, বিশেষ করে কাঁটাসহ মাছ ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস। তাছাড়া কাঠবাদাম, কুমড়োর বীজ, তিল, পালং শাক, ব্রকলি, শালগম, দুধ, পনির, দই ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। তবে ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।

৩. আয়রন: আয়রন মায়ের প্রসব-পরবর্তী রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে অপরিহার্য। আয়রন মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে এবং অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। শিশুরা মায়ের দুধের মধ্যে থাকা আড়াই শতাংশ পর্যন্ত আয়রন শোষণ করতে পারে। অন্যদিকে, আইরন ফোর্টিফায়েড সিরিয়ালের ক্ষেত্রে মাত্র ৪ থেকে ১০ শতাংশ আয়রন শোষিত হয়। এজন্য, মায়ের খাদ্য তালিকায় আরও বেশি করে আয়রনের উৎস নিশ্চিত করা দরকার।

বুকের দুধে স্বাভাবিকভাবে এ পুষ্টি উপাদানটি কম থাকে। তাই শিশুকে ৬ মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হয়। তবে মা যদি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার কম খান তাহলে নিজে রক্তশূন্য হয়ে পড়বেন এবং গর্ভাবস্থা পরবর্তী শারীরিক ক্ষয়পূরণ সম্ভব হবে না। পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ না করলে মায়ের রক্তস্বল্পতা, মাথা ঘোরা ও অবসাদভাব এবং সেই সাথে শিশুরও স্নায়বিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে।

উৎস: আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মাছ (যেমন শিং, মাগুর, টাকি), মাংস (বিশেষ করে কলিজা), ডিম, শিম, মটরশুঁটি, পালংশাক, ব্রকলি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ, খেজুর, কলা, ডালিম, আপেল ইত্যাদি। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।  

 ৪. বিভিন্ন ভিটামিন

  •  ভিটামিন A: সাধারণত, শিশুরা জন্মের সময় তাদের শরীরে খুব বেশি ভিটামিন-এ সংরক্ষণ করা থাকে না। তারা মূলত বাহ্যিক উৎসের ওপর নির্ভর করে, বিশেষ করে মায়ের দুধের ওপর।৮ শিশুর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মায়ের খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে বুকের দুধ থেকে এ পুষ্টি উপাদান শিশুর শরীরে স্থানান্তরিত হয়। তাই শিশুর ভিটামিন-এ এর অভাব পূরণের জন্য মা কে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন-এ যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। নয়ত শিশুর শরীরে এর ঘাটতি দেখা দিবে।

উৎস : গাজর, কুমড়া, লাল শাক, পালং শাক, পাকা আম ও পাকা পেঁপে সহ রঙিন শাকসবজি, ডিম, মাছের তেল ইত্যাদি।

  •  ভিটামিন D: ভিটামিন-ডি এর অভাবে শিশুরা রিকেটস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এতে হাড়গুলো নমনীয়তা হারিয়ে দুর্বল হয়ে যায়, বিকৃতি ঘটে এবং ভাঙনও হতে পারে। এটি শিশুর গঠন ও বৃদ্ধির জন্য খুবই ক্ষতিকর। শিশুর এই অভাব পূরণের জন্য দুগ্ধদানকারী মায়ের এ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

উৎস : সূর্যের আলো, ডিমের কুসুম, মাশরুম, পনির, কড লিভার অয়েল, মাছের তেল  

ইত্যাদি।

  • ভিটামিন C: এটি মা ও শিশুর শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি শিশুকে অন্ধত্ব এবং স্কার্ভির মতো রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ১৯ বছরের বেশি বয়সী ও বুকের দুধ দিচ্ছেন এমন মায়েদের জন্য, প্রতিদিন কমপক্ষে ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া জরুরি। তবে, এটি নিরাপদ এর সর্বোচ্চ সীমা হলো ২০০০ মিলিগ্রাম।১০

     উৎস: কমলা, মাল্টা, লেবু, পেয়ারা, কাঁচা আম, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি।

  •  ভিটামিন B-কমপ্লেক্স: স্তন্যদানকারী মায়েদের শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি  মায়ের শক্তি বাড়াতে ও প্রসব পরবর্তী ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে এবং শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ ও লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে। শিশুদের মধ্যে ভিটামিন বি১২-এর অভাব বৃদ্ধিতে সমস্যা এবং বিকাশে দেরি হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ও মানসিক বিকাশের পথেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।১১

     উৎস : গম, বাদাম, ডিম, ডাল, দুধ, পনির, মাছ, মাংস, মুরগি, এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য। 

৫. পানি ও পানীয়

মায়ের বুকের দুধের বড় অংশ পানি দিয়ে তৈরি। তাই মা পর্যাপ্ত পানি পান না করলে দুধের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। প্রতি ২ থেকে ৪ ঘণ্টা পরে বুকের দুধ খাওয়ানো শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। তাই, প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খেতে হবে। দুধের উৎপাদন ধরে রাখতে পানি খুবই জরুরি। পাশাপাশি, দুধ, ফলের রস এবং স্যুপ খেতে হবে।

 

শিশুকে বুকের দুধ দিচ্ছেন এমন মায়েদের জন্য স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের আইডিয়া

নিচের এই স্ন্যাকসগুলো দ্রুত ও সহজে তৈরি করা যায়, আর খুব সহজে শরীরে শক্তি যোগায়:১২

  • তাজা ফলের সাথে কিছু বাদাম
  • কম ফ্যাট ও কম শর্করা যুক্ত দই
  • কম শর্করা যুক্ত ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল বা মিউজলি, আর কম ফ্যাটের দুধের সঙ্গে সবধরণের হোলগ্রেইন সিরিয়াল
  • দুধের তৈরি যেকোনো পানীয় বা চিনি ছাড়া ফলের জুস

যেকোনো সময় এই পুষ্টিকর স্ন্যাকসগুলো খাওয়া ভালো। 

কোন খাবার খাওয়া উচিত

  • বিভিন্ন রঙের শাকসবজি ও ফলমূল।
  • পূর্ণ শস্য যেমন লাল চাল, ওটস, গম।
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (মাছ, ডিম, মুরগি, ডাল)।
  • বাদাম ও বীজ।
  • স্বাস্থ্যকর তেল যেমন অলিভ অয়েল, সরিষার তেল।

কোন খাবার সীমিত খাওয়া বা এড়িয়ে চলা উচিত

  • সামুদ্রিক মাছ: মাছ প্রোটিনের এক দুর্দান্ত উৎস এবং এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। তবে, বুকের দুধ দিচ্ছেন এমন মহিলাদের মাছের পরিমাণ ও ধরন নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বেশিরভাগ মাছের মধ্যে মার্কারি থাকে, যা মা খেলে তার শরীর থেকে দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে চলে  যায়। এটি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অতএব, মাছ খাওয়ার সময় সতর্কতা জরুরী।১৩
  • ক্যাফেইন: ক্যাফেইন দুধের মাধ্যমে মা থেকে শিশুর মধ্যে হালকা পরিমাণে পৌঁছে যায়। সাধারণত মা যদি কম পরিমাণে ক্যাফেইন খান, তখন এটি শিশুর জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর হয় না। একদিনে ৩০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ক্যাফেইন মানে প্রায় ২ থেকে ৩ কাপ কফি।১৩
  • “ডায়েটিং”বা কম খাওয়া: ব্রেস্টফিডিংয়ের সময় ডায়েট করলে দুধের পরিমাণ ও গুণমান কমে যেতে পারে। গর্ভাবস্থার ওজন কমানোর জন্য, বেশি চর্বি এবং চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া সীমিত করা যেতে পারে। হালকা হাঁটা বা সাঁতার কাটার মতো মাঝারি ধরনের ব্যায়াম সপ্তাহে তিন বার করলে ভাল।২  তবে অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি, ভাজাপোড়া ও বেশি তেলযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত ঝাল ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চললেই ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।
  • অ্যালকোহল: বুকের দুধে যেকোনো মাত্রার অ্যালকোহল শিশুর জন্য অনিরাপদ।১৪ অ্যালকোহলের কারণে শিশুর দেহে কখনোই সঠিকভাবে বিকাশ হয় না। এটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই, শিশুকে দুধ খাওয়ালে অবশ্যই অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।

 

স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য একটি সম্ভাব্য খাদ্য তালিকা

সকালের নাস্তা

  • দুধের সাথে ওটস বা চিড়া।
  • ১টা সেদ্ধ ডিম।
  • মৌসুমি ফল (যেমন কলা, পেয়ারা)।

সকালের হালকা খাবার

  • বাদাম, আখরোট বা ভেজানো ছোলা।
  • এক গ্লাস দুধ বা ফলের স্মুদি।

দুপুরের খাবার

  • ভাত বা গমের রুটি।
  • মাছ/মুরগি
  • ডাল।
  • এক প্লেট শাকসবজি।
  • সালাদ।
  • এক টুকরো ফল।

বিকেলের নাস্তা

  • ফলের জুস/স্মুদি।
  • বাদাম বা মুড়ি।

রাতের খাবার

  • ভাত/রুটি।
  • ডাল ও সবজি।
  • মুরগি/মাছ।
  • ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ।

 

শেষ কথা

দুগ্ধদানকালীন সময়ে মায়ের খাদ্য শুধু মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, বরং শিশুর ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা যদি সুষম খাবার গ্রহণ করেন তাহলে মায়ের দুধে বেশিরভাগ ভিটামিন, খনিজ ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমানও বাড়ে এবং শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তাই খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ নিশ্চিত করলে মায়ের শক্তি বজায় থাকবে এবং শিশুও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। কুসংস্কার বা ভুল ধারণা বাদ দিয়ে, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত খাদ্য তালিকা অনুসরণ করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর।

তথ্য সুত্র need to know icon

১∙ Guidelines for Complementary Feeding in Bangladesh, Bangladesh Breastfeeding Foundation  https://www.unicef.org/bangladesh/sites/unicef.org.bangladesh/files/2018-10/Guidelines%20for%20CF.pdf

২∙ Meal Plans for Breastfeeding Moms: Nutrition While Nursing, SEASON  https://www.seasonhealth.com/blog/meal-plans-for-breastfeeding-moms 

৩∙ Diet and Breastfeeding, DANONE One Planet, One Health https://www.danone.in/nutrition-for-all/first-1000-days/first-2-years-life/diet-breastfeeding/ 

৪∙ Rasmussen B, Ennis M, Pencharz P, Ball R, Courtney-martin G, Elango R. Protein Requirements of Healthy Lactating Women Are Higher Than the Current Recommendations. Curr Dev Nutr. 2020 May 29;4(Suppl 2):653. doi: 10.1093/cdn/nzaa049_046. PMCID: PMC7257931.

https://pmc.ncbi.nlm.nih.gov/articles/PMC7257931/ 

৫∙ https://inshapemummy.com/blogs/breastfeeding-milk-supply/the-importance-of-protein-while-breastfeeding?srsltid=AfmBOoqQNFEUg8EhnEuJmPBE_fwbheAksagA-n09uMDvYMRKJFKgJjh1

৬∙ Calcium Supplementation Guidance for Postpartum Mothers, VINMEC

https://www.vinmec.com/eng/blog/guidelines-for-postpartum-calcium-supplementation-for-pregnant-women-en

৭∙ https://www.lllc.ca/iron-and-breastfeeding  

৮∙ https://www.who.int/tools/elena/interventions/vitamina-postpartum

৯∙ Vitamin D Supplementation and Breastfeeding, Infant Risk Centre  https://infantrisk.com/content/vitamin-d-supplementation-and-breastfeeding

১০∙ Vitamin C and Breastfeeding, breastfeeding.support  https://breastfeeding.support/vitamin-c-breastfeeding/

১১∙ Lweno ON, Sudfeld CR, Hertzmark E, Manji KP, Aboud S, Noor RA, Masanja H, Salim N, Shahab-Ferdows S, Allen LH, Fawzi WW. 2020. Vitamin B12 is low in milk of early postpartum women in urban Tanzania, and was not significantly increased by high dose supplementation. Nutrients 12(4): 963.

১২∙ Breastfeeding and diet, NHS

https://www.nhs.uk/baby/breastfeeding-and-bottle-feeding/breastfeeding-and-lifestyle/diet/

১৩∙ https://www.cdc.gov/breastfeeding-special-circumstances/hcp/diet-micronutrients/maternal-diet.html

১৪∙ https://www.mayoclinic.org/healthy-lifestyle/infant-and-toddler-health/in-depth/breastfeeding-nutrition/art-20046912