বাচ্চা স্কুলের টিফিন না খেয়েই ফেরত আনছে? তাহলে এই ২টি রেসিপি ট্রাই করুন

কতটা সময়ই না বাচ্চারা স্কুলে থাকে!

এই সময়টায় ওর পুষ্টিচাহিদা মেটাবার জন্য আপনি টিফিন দিয়ে দিলেন। আর বাচ্চা না খেয়ে বা অর্ধেক খেয়ে ফেরত নিয়ে আসল। আপনি হয়তো বাচ্চাকে বকাঝকা করলেন। অথবা নিজের রান্নার স্বাদ হয়নি ভেবে মন খারাপ করে ফেললেন।

এটা করবেন না!

স্কুলের টিফিন না খেয়ে বা অর্ধেক খেয়ে ফেরত আনা অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রেই কমন।

স্কুলে থাকা কালীন সময়ে এমন ধরণের খাবার টিফিন রাখা উচিত যে খাবার অত্যন্ত মুখরোচক, এবং উচ্চক্যলরি যুক্ত যাতে শিশু অল্প খেয়ে পর্যাপ্ত ক্যলরি তথা পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় শিশুর টিফিন বক্সটা একটু সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেই কিন্তু শিশুর সেই খাবারের প্রতি আকর্ষণ আসেআর সব সময় একই খাবার না দিয়ে মাঝে মাঝে একটু ভিন্ন রকম খাবার দেয়া যেতে পারে না হয় বাচ্চার খাবারের প্রতি একঘেয়েমি চলে আসতে পারে

তো বাচ্চাকে হরেকরকম টিফিন দেয়ার জন্য হরেক রকম রেসিপিও চাই। আর আজ আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ৩টি সুস্বাদু এবং পুস্টিকর টিফিন রেসিপি।

পনিরের চিজ বলঃ

উপকরনঃ

·         মুরগী/ গরুর মাংস

·         পেয়াজ কুচি

·         গরম মশলা

·         আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা গরু, ধনে গুড়া

·         লবণ

·         পনির

·         ডিম

·         বিস্কিটের গুড়া

·         পাউরুটি

·         তেল

তৈরি পদ্ধতিঃ

প্রথমে মাংসকে কিমা করে নিনমাংসগুলো সকল মশলা দিয়ে মাখিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিন হাড়িতে তেল দিয়ে তাতে পেয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে উঠিয়ে নিন অই তেলে মাংস দিয়ে ভালো করে নেড়ে ঢেকে রাখুন মাংস সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে যাবে মাখামাখা হয়ে আসলে তাতে জিড়া গুরা আর পেয়াজ দিয়ে নেড়ে উঠিয়ে নিন

এবার অন্য ১টি পাত্রে পানি নিন তাতে পাউরুটি ভিজিয়ে সাথে সাথে উঠিয়ে চেপে চেপে পানি ফেলে নিন অন্য পাত্রে পনির ঝুরি করে নিন আরও একটি পাত্রে ডিম ফেটিয়ে রাখুন

এবার মাংস আর পনির একসাথে মিশিয়ে নিন ভালোভাবে চাইলে ধনে পাতা মিশাতে পারেন এবার পাউড়ুটির শক্ত অংশ ফেলে দিয়ে নরম অংশ গুলো চটকে নিন এবার পাউড়ুটি হাতে নিয়ে ছোট্ট রুটির মত তৈরি করে মাংস পনিরের কিমা মাঝে দিয়ে বল বানিয়ে নিন। বলটি ডিম ডুবিয়ে নেবার পর বিস্কিটের গুড়াতে গড়িয়ে নিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিন। তেল আগে থেকেই গরম করে জ্বাল কমিয়ে রাখবেন তারপর একটি একটি করে ভেজে নিন। সস দিয়ে পরিবেশন করুন।

পুষ্টিগুণঃ

পাউড়ুটি, বিস্কিট এর গুড়াতে রয়েছে শর্করা যা শিশুর শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করবে, শিশুকে করে তুলবে প্রাণবন্ত।  শিশুর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও শর্করার জুড়ি নেই। মাংস ডিম রয়েছে প্রোটিনের পুষ্টি প্রোটিন দেহের ক্ষয় পূরণ করে। শিশুর ব্রেইন ডেভল্পমেন্ট এও প্রোটিনের চাহিদা থাকে।  সেই সাথে পনির যোগাবে খাবারে ভিন্ন স্বাদ এবং স্নেহের চাহিদা। তাই স্কু্লে বাচ্চাদের জন্য এটি হতে পারে টি মুখরোচক খাবার।   

ডিম মুরগীর স্যান্ডুউইচঃ

বাচ্চারা সব সময় বাইরের বার্গার, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে। তাই বাচ্চার টিফিন যদি এমন কোন খাবার দেয়া যায় তবে সেই খাবারটি বাচ্চারা সাদরে গ্রহণ করবে। তাই তৈরি করে দিতে পারেন স্যান্ডউইচ সে জন্য যে সকল উপকরন লাগবে তা হলঃ

উপকরনঃ

·         পাউরুটি পিস

·         ডিমঃ টা

·         মুরগী মাংস কুচি করা কাপ

·         সয়া সস টেবিল চামচ

·         টমেটো সস টেবিল চামচ

·         বেকিং পাউডার

·         পেয়াজ কুচি

·         ধনে জিরা গুড়া অল্প পরিমানে

·         ধনে পাতা

·         পানি

·         ঘি চা চামচ

তৈরি পদ্ধতিঃ

প্রথমে ১টি পাত্রে তৈল দিয়ে তাতে পেয়াজ কুচি ছেড়ে দিন। একটু লাল হয়ে আসলে তাতে ধনে গুড়া এবং জিরা গুড়া ছেড়ে দিন। অল্প একটু পানি দিয়ে মশলা কষিয়ে নিন। তাতে মুরগীর কুচি করে করে রাখা মাংস গুলো দিয়ে নাড়তে থাকুন।আরো একটু পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে ২টা ডিম, সয়া সস, টমেটো সস, ধনে পাতা একটু বেকিং পাউডার (লবণ যদি দরকার হয়),দিয়ে নাড়তে থাকুন। পানি পুরোপুরি শুকিয়ে এলে ১চা চামচ ঘি দিয়ে ভাজা ভাজা করে উঠিয়ে নিন।

এই সেন্ডুয়িচ এর সাথে আপনি চাইলে যে কোন ধরণের সবজি ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবজি গুলো কুচি করে কাটতে হবে যেন তা মাংস ডিম এর সাথে সহজে মেশে যায় সেদ্ধ হয়।

এবার ১টি ডিম অন্য পাত্রে ফেটিয়ে নিন। এবার পাউরুটি ডিম এর মধ্যে দিয়ে মাখিয়ে নিন। অন্য টি কড়ায়ে তেল দিয়ে হাল্কা করে ভেজে উঠিয়ে রাখুন। কিছুটা ঠাণ্ডা হলে তাতে তৈরি করে রাখা মাংসের পুর ভিতরে দিয়ে সেন্ডুউয়িচ এর আকারে কেটে নিন। ডেকোরেশন এর জন্য শশা কাঁচা টমেটো দিয়ে পরিবেশন করুন।

পুষ্টিগুণঃ

দেখাতেই পাচ্ছেন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন যা শারিরীক বৃদ্ধি কোষের গাঠনিক কাজ সম্পাদন করে তাই বাড়ন্ত শিশুদের জন্য এটি অপরিহার্য খাবার উপাদান তাছারাও প্রোটিন রক্ত ধারা প্রবাহে বাহক হিসেব কাজ করে থাকে, ডি,এন, আর,এন, এর গাঠনিক উপাদান হিসেবেও কাজ করে থাকে। পাউরুটি শর্করার ১টি ভালো উৎস। শরীরে শক্তি সঞ্চয় করা সময়মত কাজে লাগানো শর্করার কাজ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে তেল এবং ঘি। এই তেল ঘি বাচ্চাদের শরীর এর তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে। চর্বি চামড়ার রুক্ষতা দরীভুত করতে সহয়তা করে, পাশাপাশি খাবারের স্বাদ কে বাড়িয়ে তোলে।আর যদি বাচ্চাকে সবজি দেয়া যায় তবে তো ষোলআনা। ভিটামিন আর মিনারেলস এর প্রাচুরজ্য থাকে এই সবজি তে। রয়েছে কাঁচা টমেটো যাতে রয়েছে এন্টিওক্সিডেন্ট যা অনেক ধরণের রোগ থেকে বাচ্চাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

পরিশিষ্ট

শুরুতেই বলেছিলাম, টিফিন না খাবার সমস্যা অনেক বাচ্চার মধ্যেই আছে। এর জন্য দায়ী হতে পারে বাচ্চার জাঙ্কফুড খাবার অভ্যাস যা আসলে তার রুচি নষ্ট করে দেয়। অথবা হয়তো বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণ খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছেনা তাই তার খিদে কমে গিয়েছে। আর প্রতিদিন এক ধরণের খাবার দিতে থাকলে তো বাচ্চার খাবার ইচ্ছেই চলে যাবে। তাই এসব কিছু খেয়াল করে বাচ্চার টিফিনে ভ্যারাইটি বজায় রাখুন। সুস্থ্য থাকুক আপনার সোনামণি।

বাচ্চার টিফিন বা যেকোনো খাবার তৈরি করার আগে সবার আগে আপনার হাত ধুয়ে জীবানুমুক্ত করা চাই। এর জন্য জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। আর রান্নায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং বাচ্চার টিফিন পট ওয়াটার বটল এসব ডিশওয়াসিং লিকুইড বা বার দিয়ে ধুয়ে নিন। এসব করার কারণ একটাই, জীবাণুর সংক্রমণ হওয়া থেকে বেবিকে বাচিয়ে রাখা।