সময়মতো শিশুকে টিকা দিন

সময়মতো শিশুকে টিকা দিন

তিন-চার দশক আগে শিশুকে টিকা দেওয়া নিয়ে সচেতনতা বাংলাদেশে কমই ছিল।
আর এখন টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যায় জন্ম থেকেই। জন্মের পরপরই সরকারিভাবে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় চলে আসে শিশু। মৌলিকভাবে টিকাদানের পেছনের ধারণাটি হলো, অতি অল্প পরিমাণে সজীব বা নির্জীব জীবাণু শরীরে প্রবেশ করিয়ে নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করা।

সরকারিভাবে টিকা নেওয়ার সুযোগ:


সরকারি ও সরকার-নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রগুলোতে টিকা নেওয়া যায়। এ টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া যায়। টিকার একটি কার্ড থাকে, যাতে যে টিকা দেওয়া হলো এবং ভবিষ্যতে দেওয়া হবে, তার সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করা থাকে। যেসব টিকা এসব কেন্দ্রে দেওয়া হয় সেগুলো হলোঃ

 

নবজাতক (শূন্য বয়সে): বিসিজি, পোলিও।

 

৬ সপ্তাহ বয়সে:ডিপিটি,হেপাটাইটিস-বি,হিব(ক্ষেত্রবিশেষে)-প্রথম ডোজ


১০ সপ্তাহ বয়সেঃডিপিটি,হেপাটাইটিস-বি,হিব(ক্ষেত্রবিশেষে)-দ্বিতীয় ডোজ


১৪ সপ্তাহ বয়সেঃডিপিটি,হেপাটাইটিস-বি,হিব(ক্ষেত্রবিশেষে)-তৃতীয় ডোজ

 

৯ মাস বয়সেঃহাম।


উল্লেখ্য, বিসিজি হচ্ছে যক্ষ্মার টিকা, ডিপিটি ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ও ধনুষ্টঙ্কারের টিকা, হেপাটাইটিস-বি এক ধরনের জন্ডিসের টিকা এবং হিব (এইচআইবি) হলো এক ধরনের নিউমোনিয়া বা মেনিনজাইটিসের টিকা। পর্যায়ক্রমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এসব টিকা বিনামূল্যে নেওয়া যায়।

 

অন্যান্য টিকা:


কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে শিশুর সার্বিক সুরক্ষার জন্য আরও কিছু টিকাদান কার্যক্রম বর্তমানে চালু আছে। এগুলো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে এবং কিছু বেসরকারি টিকাদান কেন্দ্রে নগদ অর্থের বিনিময়ে দেওয়া যায়। ছয় সপ্তাহ বয়সে শিশুকে দেওয়া যায় রোটারিক্স নামের রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার টিকা। এটি চার সপ্তাহ পর পর দুইবার খাওয়াতে হয়।


শিশুর এক বছর বয়স পার হওয়ার পরপরই দেওয়া যায় জলবসন্তের টিকা। একই সময়ে দেওয়া যায় হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসের টিকা, যা ছয় মাস পর আবার দিতে হয়। হামের টিকা আগে দেওয়া না থাকলে এ সময় দেওয়া যায় এমএমআর টিকা। এটি মামস, হাম ও জার্মান হামের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। মেয়েদের জন্য এ টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় জার্মান হাম হলে তা নবজাতকের বিকলাঙ্গতার কারণ হতে পারে।
আগে হামের টিকা দেওয়া থাকলে এমএমআর একটু পরে অর্থাৎ ১৫ থেকে ১৮ মাসের সময় দিতে হবে। ১১-১২ বছর পর টিকাটি পুনরায় দিতে হবে। দুই বছর পূর্ণ হলে আরও কয়েকটি টিকা দেওয়ার সময় হয়। টাইফয়েডের টিকা এ সময় দেওয়া যায়। তিন বছর পরপর এটি পুনরায় দিতে হয়।


নিউমোকক্কাসের প্রতিরোধী টিকাও এ সময় দিতে হয়। মেনিঙ্গোকক্কাস প্রতিরোধী মেনিনজাইটিসের টিকাও এ বয়সে দিতে হয়। ডুকোরাল নামে রয়েছে কলেরা ও আরও কিছু প্রতিরোধক টিকা। দুই থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত এটা দিতে হয় তিন ডোজ। ছয় বছরের বেশি হয়ে গেলে দুই ডোজ এক মাস অন্তর দিতে হয়।

মিলিত টিকা:


শিশুর বয়স অনুযায়ী প্রযোজ্য বিভিন্ন টিকা একসঙ্গে মিলিয়েও দেওয়া যায়। ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টঙ্কার, হেপাটাইটিস-বির টিকা একটি ভায়ালে ইনজেকশন হিসেবে পাওয়া যায়। এর সঙ্গে হিব টিকা মিলিয়ে দেওয়া যায়। আবার এসবের সঙ্গে পোলিও ইনজেকশন মিলিয়ে হেক্সা নামের টিকাও রয়েছে। এসবের বাইরে আছে জলাতঙ্কের টিকা, যা শুধু পাগলা কুকুর কামড়ালে পাঁচ ডোজ নিতে হয়।