প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রন

এমন এক সময় ছিল যখন জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য কোন কৃত্রিম পদ্ধতি ছিল না। তবুও মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক পন্থায় জন্মনিয়ন্ত্রন করতো। 

এখন যদিও অনেক অপশন আছে তারপরেও বিশ্বজুড়ে অনেক দম্পতি প্রাকৃতিক উপায়েই জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আজ আপনাদের জানাবো এসব পদ্ধতির বিস্তারিত।

(১) ক্যালেন্ডার পদ্ধতি বা সেইফ পিরিয়ড মেথডঃ

সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার আগের নয়দিন এবং মাসিক পরবর্তী চারদিন নিরাপদ সময় হিসেবে বিবেচিত। এ সময়ে দৈহিক মিলন হলেও গর্ভধারণের কোনো ঝুঁকি থাকে না।  মাসিক শুরুর আগের নয়দিন এবং মাসিক পরবর্তী চারদিনই সেফ পিরিয়ড বা নিরাপদ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়।  হিসেব করেও এটি বের করা যায়। ধরুন ২৮ দিন পরপর আপনার নিয়মিত মাসিক হয়। ২৮ থেকে প্রথমে ১৮ এবং পরে ১০ বাদ দিন (২৮-১৮=১০ এবং ২৮-১০=১৮)। অর্থাৎ মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকে নবম দিন পর্যন্ত আপনি নিরাপদ, দশম দিন থেকে ১৮তম দিন পর্যন্ত আপনি ঝুঁকিপূর্ণ এবং আবার ১৯তম দিন থেকে ২৮তম দিন পর্যন্ত আপনি নিরাপদ। অনেকের অনিয়মিত মাসিক হয়। ধরুন কোনো মাসে ৪৫ দিন পর এবং অন্য মাসে ২৬ দিন পর হয়। সে ক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ১০ বাদ দিন (৪৫-১০=৩৫) এবং ২৬ থেকে ১৮ বাদ দিন (২৬-১৮=৮) অর্থাৎ মাসিক চক্রের অষ্টম দিন থেকে ৩৫তম দিন পর্যন্ত আপনি ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। বাকি সময় মোটামুটি নিরাপদ।

(২)নারীর দৈহিক তাপমাত্রা মেপে নিরাপদ সময় বের করা:

মহিলাদের দৈহিক তাপমাত্রা মেপে নিরাপদ সময় বের করা যায়। এ ক্ষেত্রে ভোরবেলা বিছানা ত্যাগের আগ মুহূর্তে মহিলাদের দৈহিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটি কিছু খাওয়ার,পান করার আগেই করতে হবে এবং প্রতিদিন একই সময়ে করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। মাসিক চক্রের প্রথমার্ধে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে। পরে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ০.২ থেকে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। ডিম্বাণু পরিস্ফুটনের সময় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়। এ সময়টা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধির তিনদিন পর আবার দৈহিক মিলন শুরু করতে পারেন।

(৩) জরায়ু মুখের মিউকাস পরীক্ষার মাধ্যমে

জরায়ু মুখের মিউকাস পরীক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ সময় বের করা যায়। এ পদ্ধতিতে একজন মহিলা আঙুলের সাহায্যে তার জরায়ু মুখের মিউকাস বা নিঃসৃত রস পরীক্ষা করতে পারেন। ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে মিউকাসের পরিমাণ ও ঘনত্ব বাড়তে থাকে। সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছানোর পর আস্তে আস্তে মিউকাসের পরিমাণ ও ঘনত্ব কমে যায়। প্রজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে এমনটা হয়ে থাকে এবং মাসিক শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করে। মিউকাসের ঘনত্ব ও পরিমাণ সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছানোর চারদিন পর থেকে দৈহিক সম্পর্ক শুরু করা যেতে পারে।

 

 () স্তন্যদানের সময়ঃ
সন্তান প্রসবের পর মা যদি বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তবে সেই সময় নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে অনেকদিন মাসিক বন্ধ থাকে। তাই সে সময়ও জন্মনিয়ন্ত্রক ছাড়া মিলন তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই পদ্ধতি ব্যবহারে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয় –

• আপনার সন্তান প্রসবের পর কোন মাসিক না হয়ে থাকলে।

• আপনি আপনার সন্তানকে বুকের দুধ এবং শুধু মাত্র বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন কিনা

• আপনার বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে

এ পদ্ধতির কার্যকারিতা কমে যায় যদি –

• আপনি শিশুকে বুকের দুধ না খাইয়ে তাকে অন্য খাবার বা পানীয় দেন।

• আপনার সন্তানের বয়স ছয় মাস হলে।

()উইথড্রয়িং মেথডঃ

এটা জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি। এক্ষেত্রে স্বামী মূল ভূমিকা পালন করে থাকেন।  এই পদ্ধতিতে শুক্রানু স্খলনের চরম মুহূর্তে স্বামী নিজেকে মিলিত অবস্থা থেকে সরিয়ে ফেলেন যাতে নিঃসৃত শুক্রানু বাইরে পরে। এ বিষয়ে খুব সচেতন থাকা উচিৎ কারণ একফোঁটা শুক্রানু ক্ষরণ থেকেও গর্ভধারণ হতে পারে।

প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সুবিধাঃ

·        এ পদ্ধতিতে হরমোন ট্যাবলেট বা কোনো ডিভাইস ব্যবহার করতে হয় না।

·        সন্তান নিতে ইচ্ছুক দম্পতিরা তাদের নিরাপদ সময় ও ঝুঁকিপূর্ণ সময় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

·        এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই

·        বেশিরভাগ মহিলারাই এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন যদি তারা সঠিকভাবে মাসিক চক্রের দিনগুলো গননা করতে পারেন।

 

·        স্বামী-স্ত্রীর মতামত ও সম্পৃক্ততার উপরই এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। এত দুই জনের মধ্যে বিশ্বাস ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাবে।

প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতির অসুবিধাঃ

·        প্রায় ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যর্থ।এই পদ্ধতি সঠিক ভাবে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তার নিশ্চয়তার জরিপ করে দেখা গেছে যে প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহারকারী প্রতি ৪ জন মহিলা মধ্যে ১ জন গর্ভবতী হয়ে যেতে পারেন।

·        যাদের অনিয়মিত মাসিক হয় তাদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কার্যকর

·        যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধে অক্ষম।

·        স্ত্রী ও স্বামীর সহযোগিতা ছাড়া এই পদ্ধতি অকার্যকর।

·        আপনি চাপে থাকলে, অসুস্থ হলে, ভ্রমন করলে বা আপনি যদি কোনরকম হরমোন জাতীয় ঔষধ খান, তাহলে গর্ভবতী হওয়ার শারীরিক ইঙ্গিতগুলো পরিবর্তন হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যর্থ হতে দেখা যায়।  

·        ইমার্জেন্সি গর্ভনিরোধ পিল খেলেও এই সমস্যা হয়। আপনি যদি ইমার্জেন্সি গর্ভনিরোধ পিল খেয়ে থাকেন, তাহলে দুই মাসিক চক্র পার হয়ে যাওয়ার পর পরপ্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।

   পরিশিষ্টঃ

সাধারনত হিসেবে গন্ডগোল করে ফেলা, অনিরাপদ দিবসেও ঝুঁকি নেয়া, অনিয়মিত মাসিক হওয়া এসব কারনে এই পদ্ধতি ব্যর্থ হতে পারে। তাই সঠিক হিসেব জেনে নেয়ার জন্য ১ম বার চিকিৎসকের ণাপন্ন হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত,যৌন সংক্রমনের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় প্রতিবার শারীরিক মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা। জন্মনিয়ন্ত্রনের অন্যান্য উপায়গুলো গর্ভধারন রোধ করলেও যৌন সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে না।

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০