এই ৫টি ক্ষেত্রে গর্ভধারণের আগে আরেকবার ভেবে দেখুন

পরিবারের বয়স্করা বলে থাকেন, আগে বাচ্চা হওয়া নিয়ে এত টেনশনের কিছু ছিল না। বাচ্চা হওয়ার আগে জানাও যেত না যে নারীটি গর্ভবতী ছিল! হতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গল্পগুলো সত্য আবার এটাও কিন্তু সত্য যে চিকিৎসার অভাবে অনেক নারীর অকাল গর্ভপাতের কারণে রক্তপাতে মৃত্যু সহ সন্তান প্রসবকালেও অনেক মা মারা যেতেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হওয়ার কারণে আজকে আমরা বাচ্চা হওয়ার সময় মায়ের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পেরেছি। তবে এটা জানেন কি গর্ভধারণের আগেই যে শারীরিক কিছু পরীক্ষা করানো এবং কোনো অসুখ থাকলে তার চিকিৎসা নিয়ে তারপরেই মা হওয়া উচিত? এমন কিছু অসুস্থতা আছে যেগুলো থাকলে গর্ভধারণ মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে সেই মায়ের জন্য। এবং গর্ভের সন্তানের জন্য তো বটেই। সুতরাং গর্ভধারণ করার আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন এমন কোনো অসুস্থতা আছে কীনা আপনার।

জেনেটিক সমস্যা

মানুষের জিনের ভিতরেই যে বংশগতির কুল ঠিকুজি লেখা থাকে এটা কিন্তু খুব বেশী দিন ধরে আবিষ্কৃত হয় নি। জিনের বৈশিষ্ট্য জানার কারণে কিছু রোগের কারণও খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন থ্যালাসেমিয়া। কোনো এক অজানা কারণে রক্তের লোহিত কণারা মারা যাচ্ছে এমনটা আর ভাবা হয় না। থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক রোগ। মা অথবা বাবার অথবা দুজনেই যদি এই রোগ বহন করেন তাহলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হয়। মা বাবার একজন এর ক্যারিয়ার হলে সেটা মাইনর থ্যালাসেমিয়া হিসাবে সন্তানের শরীরেও আসে। কিন্তু মা-বাবা দুজনই এর ক্যারিয়ার হলে তা বেটা থ্যালাসেমিয়া নামে আরো সিরিয়াস ফর্মে জন্মগত ভাবেই শরীরে থাকে। এটা আসলে এমন একটা অসুখ যাতে রক্তের হিমোগ্লোবিনের ফর্মটা স্বাভাবিক না। আর সে কারণেই লোহিত রক্ত কণিকা অনেক বেশী ধংস্ব হয়। যার ফলে চুড়ান্ত রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। কিছুদিন পর পর রোগীকে ব্লাড দিতে হয়। বোন ম্যারো ট্রান্সফার নামে একটা চিকিৎসাও আছে এর। এরকম কোনো জেনেটিক সমস্যা থাকলে গর্ভধারণ নারীর মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। থ্যালাসেমিয়া বা যে কোনো রক্তের সমস্যা সমাধান না করে বাচ্চা জন্ম দেয়া সম্ভব নয়।

 

যৌনবাহিত রোগ
যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ায় বলে একে যৌন বাহিত রোগ বলে। যেমন এইডস যৌন বাহিত রোগ। সিফিলিস, গনোরিয়া আমাদের দেশে কমন যৌনবাহিত রোগ। আক্রান্ত পুরুষের বীর্য বা নারীর যৌনাঙ্গের রস থেকে এসব রোগ ছড়ায়। অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ থেকে এমনটা হতে পারে।এমন কোনো রোগের ভাইরাস যদি শরীরে থাকে আর সে নারী যদি গর্ভবতী হয় তাহলে সেটা খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি সেটা গর্ভের সন্তানের শরীরেও ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া এসব রোগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরো রিপ্রডাক্টিভ সিস্টেম অসুস্থ হয়ে যায়।  যার প্রভাব জরায়ু সহ পুরো শরিরেই পড়ে। ধরণের রোগের চিকিৎসা না করিয়ে বাচ্চা নেয়ার চিন্তা পরিহার করতে হবে।


জরায়ুর সমস্যা
বাচ্চা ধারণে জরায়ুর সুস্থতা অপরিহার্য। জরায়ুতে যদি কোনো সমস্যা থাকে মা হওয়ার সময় সেটা মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। কারণ এই সেই থলে যেখানে বাচ্চাটি নয় মাস নয়দিন ধরে বসবাস করে। জরায়ুতে জন্ম নেয়া একটি মাংসপিন্ডের কথা শুনতে পাওয়া যায় প্রায়ই। ফ্রাইবয়েড। এটি জরায়ুর পেশীতে লেগে থাকে। এবং পাঁচ মাসের গর্ভবতীর মতো পেটের আকৃতি করে দেয়ার মতো বড়ও হয় এটা অনেক ক্ষেত্রে। বাচ্চা হওয়ার সময় জরায়ুতে ফ্রাইবয়েড থাকলে তা অতন্ত্য ঝুকিপুর্ণ। সময় ফ্রাইবয়েড আর গর্ভের বাচ্চার ভিতরে গ্রোথের প্রতিযোগিতা লেগে যায়। এতে রক্তপাত হয় গর্ভবতী নারীর। রক্ত্যশুন্যতা হতে পারে এসব থেকে। আর জরায়ু মুখ যদি ফ্রাইবয়েডের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, সিজারিয়ান করে খুব দ্রুত বাচ্চা বের করে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না। ধরণের সমস্যা থাকলে চিকিৎসা করিয়ে এরপর বাচ্চা নিতে হবে।  

 

হৃদ রোগ

মানুষের শরীরের সবচেয়ে একটিভ অঙ্গ হলো হার্ট। এই হার্টের কাজ শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখা। রক্ত প্রবাহে চুল পরিমাণ এদিক ওদিক হলেই ঘটে যায় বিপত্তি। হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে সবই বন্ধ। সাধারণত হৃদ রোগের ঘটনা আমরা বয়স্কদের ভিতরেই দেখে থাকি। কিন্তু অনেকের কম বয়সেও এটা হতে পারে। বিভিন্ন হৃদপিণ্ডের কয়েকটা ভাগ আছে। সেখানকার কোনো একটাতে কোনো রকম অসঙ্গতি থাকলে সেটাকে হৃদ রোগ বলে। এমন কোনো রোগ যদি মায়ের থাকে সেটা তার জন্য জীবনের ঝুঁকি হতে পারে যখন সে গর্ভধারণ করে। গর্ভধারণের জন্য সুস্থ হার্ট থাকা জরুরী। অতিরিক্ত চাপ নিতে হয় তখন হার্টের। কোলেস্টোরেল বেশী থাকলে হার্টের বারোটা বেজে যায়। সরু রক্তনালীগুলো আরো সরু হয়ে পড়ে চর্বির কারণে। থেকে স্ট্রোক পর্যন্ত হয়। হৃদপিণ্ডে ছোট ছিদ্র থাকলে যমে-মানুষে টানাটানি হয়। এরকম কোনো রকমের হার্ট ডিজিজ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে। এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চা নিতে হবে।  


গর্ভপাতের সমস্যা

অনেক নারীর একের পর এক মিস ক্যারিজ হতে থাকে। বাচ্চা পেটে আসে ঠিকই কিন্তু সে বাচ্চা বাঁচে না। গর্ভপাত হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এটা তিনমাস গর্ভের পড়ে ঘটে যা খুব বেদনাদায়ক এবং শারীরিক ভাবেও যন্ত্রণার। একবার মিসক্যারিজ হলে অনেকে ভাবেন দ্রুত আরেকবার কনসিভ করে ফেলতে। কিন্তু কয়েকবার এমন ঘটার পর তাদের হুশ ফিরে আসে। তখন ডাক্তারের শরাপন্ন হন তারা। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দেরী করা ঠিক না। গর্ভপাতের সঠিক কারণ জানতে হবে এবং চিকিৎসা করতে হবে।

 

অনেক সময়ে ভ্রুন জরায়ুর বাইরে বেড়ে ওঠে [এক্টপিক প্রেগন্যান্সি] এক্ষেত্রে গর্ভপাত হয়ে যাবার পর আবার প্রেগন্যান্ট হবার আগেই আপনাকে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে আপনি আবার গর্ভধারণ করতে পারবেন কি না।

সমস্যা যদি সমাধান করা সম্ভব না হয় তাহলে বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা শুধু মাত্র নিজেকে কষ্ট দেয়া। এছাড়া এরকম মিসক্যারিজের সময় অতিরিক্ত রক্তপাতে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা এসব ক্ষেত্রে খুবই রিস্কি।

 

পরিশিষ্ট

যারা জানেন তাদের এমনতর রোগ আছে চিকিৎসা ছাড়া বাচ্চা নেবেন না তারা সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন হতে পারে যে আপনি জানেনই না আপনার কোনো সমস্যা আছে, গর্ভধারণের পর টের পেলেন তা। সেক্ষেত্রে মহাবিপদ হতে পারে। সবচেয়ে ভালো উপায় বাচ্চা নেয়ার আগে কিছু পরীক্ষা করানো। একেবারেই সুস্থ শরীর থাকলে তেমন প্রয়োজন নেই, কিন্তু কোনো অসুস্থতার লক্ষন থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে কিছু টেস্ট করিয়ে নিতে হবে, যে, আপনি আসলে গর্ভধারণ করতে সুস্থ আছেন কিনা। তাহলেই অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় এড়ানো সম্ভব।

 

আমাদের কল সেন্টারে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার ০৯৬১২-২২২-৩৩৩