আপনার বেবি কি যথেষ্ট পরিমাণ বুকের দুধ পাচ্ছে? বুঝে নিন সহজেই

শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নেই। একজন শিশু জন্মের পর প্রথম যে খাবারটি মুখে নেয়, সেটিই হল মায়ের বুকের দুধ। আর এই বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে মায়েদের মনে আসে নানা প্রশ্ন। প্রায় সব মায়েদের মনে প্রথম যে সন্দেহটি কাজ করে তা হল, তার শিশুটি ঠিকমত দুধ পাচ্ছে তো?
একজন মায়ের এইধরণের সন্দেহ অমূলক নয়। শিশু তার মনের ভাব মুখে প্রকাশ করতে পারে না, যার কারণে একজন মাকে সবসময় সর্তক থাকতে হয়। সাধারণত শিশু জন্মের এক ঘন্টার মাঝে একবার দুধ খাওয়ানো উচিত। এইসময় শিশুর মায়ের দুধ টেনে খাওয়ার ক্ষমতা খুব বেশি থাকে। তাই জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করা উচিত। এরপর কি করে বুঝবেন আপনার শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কিনা? কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝে নিতে পারেন আপনার শিশুটির দুধ খাওয়া প্রয়োজন আছে কিনা। এইরকম সাধারণ কিছু লক্ষণ হল,
কান্না করা
ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া শুরু করা
চারপাশে মাথা ঘোরানো
কোন কিছু (আঙ্গুল, কাপড় ইত্যাদি) চোষা শুরু করা ইত্যাদি।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে সাধারণত মায়েরা শিশুকে দুধ দিয়ে থাকেন। এই লক্ষণ দেখে বুঝলেন আপনার শিশুটির ক্ষুধা লেগেছে কিনা, কিন্তু সে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পাচ্ছে কিনা সেটি নিশ্চিত হবেন কীভাবে? এটি বুঝিয়ে দেবে আপনার সন্তান নিজেই। কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শিশুটি পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পাচ্ছে কিনা। আজ এমনি কিছু লক্ষণের কথা আপানদেরকে জানাবো।
১। ঢোক গিলে খাওয়া
শিশু জন্মের পর দুধ টেনে খাওয়ার ক্ষমতা বেশি থাকে। যখন শিশুটি ঘন ঘন স্তন টান দেবে, এতে জমাট বাঁধা দুধ সহজেই শিশুর মুখে চলে আসবে। শিশু যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পাবে, তখন সে ঘন ঘন ঢোক গিলবে দুধ পান করার জন্য। পর্যাপ্ত পরিমান দুধ যদি শিশু না পায়, তবে বার বার স্তন টান দিবে কিন্তু ঢোক গিলবে না। দীর্ঘসময় ধরে সে স্তন মুখে নিয়ে রাখবে। অনেক সময় শিশু ক্লান্ত হয়ে স্তন মুখে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
২। শিশুটি সন্তুষ্ট
আপনার শিশু দুধ পান করে সন্তুষ্ট হলে তাকে খুশি খুশি দেখাবে। যদি শিশু অনাবরত কান্না করতে থাকে, এর অর্থে শিশু ক্ষুধার্ত। এর অর্থ এই নয় যে সে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পাচ্ছে না। প্রথম ছয় মাস সে ২-৩ ঘন্টা পর পর খেতে চাইবে। যদি এক ঘন্টা অথবা তারচেয়ে কম সময়ে আবার খেতে চায়, তবে বুঝতে হবে শিশুটি পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পাচ্ছে না।
৩। শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ
একজন শিশু চব্বিশ ঘণ্টায় ছয়বার প্রস্রাব করে থাকে। যদি এর চেয়ে কম প্রস্রাব করে, তবে বুঝতে পারবেন শিশুটি দুধ পানে সন্তুষ্ট নয়। শুধুমাত্র প্রস্রাব নয় পায়খানার রংও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত একজন সুস্থ শিশু দিনে চারবার পায়খানা করে থাকে। প্রথমদিন কিছুটা কালো আঠালো পায়খানা করে। তৃতীয় অথবা চুর্থতদিন পর পায়খানার রং সবুজ এবং পঞ্চম দিনে সেটি হলুদ রং ধারণ করে থাকে।
৪। ওজন বৃদ্ধি
প্রতিটি মায়ই সন্তানের ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন। প্রথম সপ্তাহ শিশুর ওজন উঠানামা করাটা স্বাভাবিক। নবজাতক শিশু জন্মের পরে তৃতীয় চুর্থত দিনে ৫% থেকে ৭% পর্যন্ত ওজন হ্রাস করতে পারে। তাই বলে ভয় পাবেন না। জন্মের প্রথম কয়দিন ওজন কমলেও, ১০ দিনের মধ্যে শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। কিন্তু যদি ওজন হ্রাসের পরিমাণ ১০% অথবা তার বেশি হয়, তবে তা চিন্তার বিষয়।
অনেকে মা আছেন শিশু কান্না করলে মনে করেন শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পাচ্ছে না। এই ধারণা ঠিক নয়। অনেক সময় মা বুকে আদর করে জড়িয়ে ধরলে শিশুর কান্না বন্ধ হয়ে যায়। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য রাখবেন, শিশুটি স্তনের বোঁটা এবং কালো অংশ বড় হা করে ধরছে কিনা।
কতবার শিশুকে দুধ খাওয়ানো উচিত:
বিভিন্ন শিশুর ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন হয়ে থাকে। জন্মের পর প্রথম এক ঘন্টার মধ্যে একবার অব্যশই দুধ দেওয়া উচিত। এরপর শিশুর দুধের প্রয়োজন হলে, সে বিভিন্নভাবে তা বুঝিয়ে দেয়। এসময় যত ঘনঘন শিশুকে মায়ের বুকে ধরে রাখা যায়, ততই ভালো। মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে এসে সে শান্ত থাকে আর এতে শিশুর দুধ টেনে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। আর বার বার টানার কারণে মায়ের দুধ বেশি করে নামতে শুরু করে। সাধারণত প্রথম ছয়মাস দিনে ৮ থেকে ১০ বার শিশু দুধ খেতে চায়। জন্মের তৃতীয় মাসে সে দিনে ১০ থেকে ১২ বার খেতে পারে। জন্মের পর শিশু একটু বেশি ঘুমিয়ে থাকে। ঘুমিয়ে থাকলেও দুই ঘন্টার বেশি শিশু যেন না খেয়ে থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
প্রতিবার কতক্ষণ দুধ খাওয়ানো উচিত:
নবজাতক শিশুর পাকস্থলী ছোট হয়ে থাকে। তাই তাদেরকে অল্প করে বার বার খেতে দিতে হয়। অনেক সময় একবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর শিশু আবার ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তে পারে। তখন তাকে আবার খেতে দিন। শিশু প্রথম একটি স্তনের দুধ খাওয়া শেষ করলে, পরেরবার অপর স্তনের দুধ দিন। এভাবে স্তন পরিবর্তন করে শিশুকে দুধ পান করান।
কতদিন পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত:
জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এই ছয় মাস অন্যকোন খাবার শিশুকে দেওয়া উচিত নয়। ছয়মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য খাবার খেতে দেওয়া হয়। সাধারণত দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশুকে যত বেশি সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন ততই আপনার শিশুর জন্য ভাল। বুকের দুধে মিনারেল, আয়রনসহ সব রকমের ভিটামিন রয়েছে যা আপনার শিশুর চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে হ্যাঁ দুই বছর বয়স হয়ে গেলে বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
একজন শিশুর জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার হল মায়ের বুকের দুধ। কিছুটা সর্তকতা অবলম্বন করলে একজন শিশু পরিপূর্ণভাবে পেতে পারে এই অমূল্য খাবারে স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ।
আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের
সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে। আমাদের নাম্বার
০৮০০০-৮৮৮-০০০
সর্বাধিক জনপ্রিয় আর্টিকেল
-
বাচ্চার প্রথম সলিড খাবারের পুষ্টিগুণ আর স্বাদ নিয়ে টেনশন?এই সহজ ৫টি রেসিপি ওর জন্য পারফেক্ট!
-
ঈদে কী বাচ্চারাও পোলাও-মাংস খেয়েই থাকবে, নাকি ওর পছন্দের এই ৩টি রেসিপি ট্রাই করবেন?
-
জেনে নিন বাচ্চার প্রথম বছরে পুষ্টি উপাদান কি কি দরকার
-
আপনার বেবি কি যথেষ্ট পরিমাণ বুকের দুধ পাচ্ছে? বুঝে নিন সহজেই
-
বাচ্চাকে শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করা নিয়ে টেনশন? এই ৬টি টিপস আপনার জন্যই!