শিশুর ত্বকের যত্নে আপনিও এই ৫টি ভুল করছেন না তো?

আপনার সোনামণির যত্নে আপনার চেষ্টার কোথাও কমতি থাকেনা। মায়ের মন বলে কথা!
তবে বাচ্চাদের ত্বকের যত্নে না জেনে আমরা বেশকিছু ভুল করে ফেলি। এর প্রভাবে
বাচ্চাদের ত্বকে রুক্ষতা, র্যাশ সহ নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাই আজ আমরা জানাব
বাচ্চাদের ত্বকের যত্নে কমন ৫টি ভুলের কথা
১) বেশি গোসল করানো অথবা
পরিষ্কার করা
বাচ্চা একটু হয়তো ধুলো লাগল, বা হয়তো প্যান্টেই হিসু করে
দিয়েছে। আর আপনি সাথে সাথে বাচ্চার গা ধুইয়ে ফেললেন।
ভাবলেন, যাক! জীবাণুর হাত থেকে বাঁচানো গেল!
কিন্তু বাচ্চার ত্বক সংবেদনশীল। বার বার ধোয়া হলে এটি আপনার
বেবির ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ করে ফেলবে। তাই প্রয়োজন ছাড়া বার বার বাচ্চার ত্বক
পরিষ্কার করার অভ্যাস বাদ দিন। প্রতিদিন একবার গোসল করানোই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে
যথেষ্ট।
২) ঠান্ডা লেগে যাবার ভয়ে
গোসল/পরিষ্কার কম করানো
অনেকের ধারণা বাচ্চাদের নিয়মিত গোসল করাবার দরকার নেই। দেখা
যাচ্ছে দু-তিন দিন পর পর একবার গোসল করাচ্ছেন। বাকি সময় বড়জোর গা মুছে দিচ্ছেন।
এটাও ভুল!
বাচ্চা সারাদিন ঘরে থাকলেও ঘাম ময়লা তো জমবেই। তাই গোসল
নিয়মিত বাচ্চাকে গোসল করান। ঠান্ডার দিনে বাচ্চাকে হাল্কা গরম পানি দিয়ে গোসল
করাবেন। তবে এটা অবেলায় করাবেন না। রোদ উঠে যাবার পর থেকে দুপুর হবার আগ পর্যন্ত
(অর্থাৎ সকাল ১০ টা থেকে ১২টা)হচ্ছে বেস্ট টাইম।
৩) বড়দের
সাবান ব্যবহার
আমরা অনেকেই বাচ্চাকে প্রতিদিন বাচ্চাকে সাবান দিয়ে গোসল
করাই। আপনি কি জানেন যে বড়দের সাবানে থাকে অতিরিক্ত ক্ষারীয় উপাদান?
শিশুদের ত্বক বড়দের তুলনায় ৫ গুণ পাতলা। বেবির সংবেদনশীল
ত্বকে বড়দের সাবান ব্যবহারে শিশুর ত্বকে র্যাশ, রুক্ষ, অ্যালার্জি দেখা দিতে
পারে। শিশুর ত্বকে উপযোগী সাবান (যা অবশ্যই ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হতে হবে) ব্যবহার
করুন।
৪) বড়দের প্রোডাক্ট ব্যবহার
করানো
বাসায় লোশন আছে একটাই। সেটা হয়তো আপনার (মায়ের) জন্য কেনা।
আর এটাই ব্যবহার করে যাচ্ছেন বাচ্চার জন্য।
আপনি হয়তো জানেন না, বড়দের প্রসাধন সামগ্রীতে চড়া মাত্রায়
প্রিজারভেটিভ, পারফিউম, এবং এলারজেন উপাদান থাকে। যা আপনার বাচ্চার কোমল ত্বকের জন্য
কোন অবস্থাতেই উপযোগী নয়।
এছাড়া বাচ্চাদের ত্বক বড়দের তুলনায় দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়ে তাই
ওর দরকার এমন বেবি লোশন যা কয়েকগুণ বেশি ময়েশ্চারাইজিং।
তবে বাসায় যদি একটাই লোশন রাখতে হয় তাহলে সেটা বেবি লোশনই
যেন হয়। কারণ, বেবি লোশন আপনিও ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু বাচ্চা তো আর বড়দেরটা
ব্যবহার করতে পারবেনা।
৫) অপরিশোধিত তেল মাখানো
সরিষার তেল, তিলের তেল ইত্যাদি আগের দিনে বাচ্চাদের মাখিয়ে
তারপর গোসল করানো হত।
আমরা বাচ্চাদের ত্বকে তেল ব্যবহার করার বিপক্ষে নই। কারন,
গোসলের আগে তেল ম্যাসাজ করা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্বাভাবিক গ্রোথের
জন্য উপকারী।
কিন্তু আমাদের দেশের এই তেল গুলো অপরিশোধিত [RAW] এবং ক্ষেত্রবিশেষে ফিল্টারড ও নয়।
এসব তেলে থাকতে পারে ঝাঁজালো উপাদান এবং উচ্চমাত্রায় এসিড
ভ্যালু যা বাচ্চার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই ব্যবহার করুন এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
অলিভ অয়েল। এতে কোন ঝাঁজালো বা সংবেদনশীল উপাদান নেই। বিশ্বজুড়ে ডাক্তাররা
এক্সট্রা ভার্জিন গ্রেড অলিভ ওয়েলকেই বাচ্চাদের জন্য বেস্ট ম্যাসাজ ওয়েল বলে
রেকমেন্ড করেন।
পরিশিষ্টঃ
বাচ্চাদের ত্বকের যত্নে শুধু একটা জিনিস মনে রাখলেই আপনার
জন্য এটি করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।আর সেটি হল এই যে আপনার এবং আপনার বেবির ত্বক এক
নয়। তাই যা কিছু আপনি নিজের জন্য করছেন, বাচ্চার জন্য তাই করবেন এমন না।
কোমল ত্বকের যত্ন কোমলভাবেই নিন। আর এড়িয়ে চলুন বড়দের পণ্য,
বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত।