শিশু স্কুলে যাবে

শুরু হয়েছে নতুন বছর। এ সময়ে অনেক শিশুরই
শুরু হবে নতুন জীবন স্কুলজীবন। তারা ভর্তি হবে স্কুলে। আবার অনেক শিশুই নতুন কাসে উঠবে। এখন
চলছে তারই প্রস্তুতি। স্কুলের ড্রেস, ব্যাগ কিংবা বইখাতা কেনাকাটা চলছে
পুরোদমে। শিশুদের নতুন জীবন গুছিয়ে দেওয়ার পুরো
দায়িত্বই বাবা-মায়ের। তাই তাদের ব্যস্ততাও কম নয়। শিশুর নতুন জীবনের এ আয়োজনে আপনার
করণীয়র জন্য থাকছে বিশেজ্ঞদের
পরামর্শ। লিখেছেন শাহীতাজ আখতার
ছোট্ট দ্রিবেলা, পুরো নাম মুনতাহা কামরান দ্রিবেলা। বয়স মাত্র ৪
বছর। হাঁটি হাঁটি পা পা করে কখন যেন ও বড় হয়ে গেল টেরই পেলাম না। বড় বোন আদ্রিতার সঙ্গে সঙ্গে
ও এখন বই নিয়ে পড়তে বসে। নতুন স্কুল ড্রেস পরে আয়নার
সামনে ঘুরে ঘুরে নাচে। সবাইকে আগ্রহ নিয়ে দেখাচ্ছে। ছড়ার বই, ছবির বই, কবিতার বই, স্কুলের নতুন পোশাক, পেন্সিল, খাতা, কলম, কার্টুনের
ব্যাগ, টিফিন বক্স, কত্ত কিছু কেনা হয়েছে ওর জন্য। এসবই যেন ওর খেলার সঙ্গী। সামনে পেলেই ছবি আঁকতে বসে
যায়। আবার লিখতে বললে হাতব্যথা করে।
এভাবেই বর্ণনা করছিলেন গৃহিণী নিলুফার আক্তার। সংসার সামলে দুই মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া কিছুটা
ঝামেলার মনে করেন তিনি, যদি স্বামী সাহায্য না করেন। মাঝে মাঝে মেয়েকে
স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করা আর আনা-নেওয়ার কাজে সাহায্য করেন দ্রিবেলার বাবা। এতে
অনেকটাই কাজে সুবিধা হয় বলে মনে করেন তিনি। আগে তো স্কুলে একজনকে আনা-নেওয়া করা
লাগত এখন দুজনকেই
আনা-নেওয়া করা মুশকিল। সময়ের সমন্বয় করা মুশকিল।
তার থেকেও বড় সমস্যা হলো ছোট মেয়ে নতুন কাসে যাবে তাকে সকালে ঘুম থেকে উঠানো, স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা, ওদের টিফিন গোছানো। মেয়েদের তো সব
কাজই করতে হবে কিন্তু ঘরের লোকরা যদি একটু সাহায্য
করেন তাহলে সব কাজই অনেকটা সহজ হয়ে যায়। তারপরও ভালো লাগছে যে, নতুন স্কুলে যাওয়ার জন্য ওর আগ্রহ
দেখে। মেয়েটা খুব উত্তেজিত তার স্কুলের নতুন বন্ধু
পাওয়ার আশায়। স্কুলে গেলে অনেক খেলতে পারবে, বেড়াতে পারবে
বলে মনে করে দ্রিবেলা। বড় বোন আদ্রিতার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে সে অনেক কিছু কল্পনা করতে
শিখেছে। তারপরও স্কুলে গিয়ে যাতে ওর কোনো কিছু জানতে বা শিখতে কষ্ট না হয় সে
জন্য বাসা থেকে দ্রিবেলাকে আমি বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা শিখিয়েছি।’ নিজের সন্তান সম্পর্কে এভাবেই বললেন
গৃহিণী নিলুফার আক্তার।
এটা শুধু একটি
পরিবারের নয়, অনেক পরিবারের দৃশ্যই একই রকম। সংসার সামলে সন্তানদের আনা-নেওয়া, সকালে তাদের স্কুলের জন্য তৈরি করা, স্কুলের জন্য টিফিন রেডি করা এসবই তো
মাকে করতে হয়। আর তাই সংসারের হাজারো কাজের মাঝেও মার যেন চিন্তার শেষ নেইÑ শিশু স্কুলে কী করল, ঠিকমতো টিফিন খেল কি না ইত্যাদি। সংসারের সব কাজ
সামলে কীভাবে শিশুকে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করবেন এ বিষয়ে মা-বাবাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন
ধানম-ির অরণী বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহীনূর আখতার
দিবা।
তিনি বলেন, ‘সব বাবা-মায়ের জন্যই সন্তানের প্রথম স্কুলে যাওয়া
যেমন আনন্দের ঠিক তেমনি চিন্তারও। শিশুটি কান্নাকাটি করবে কি না, ঘুম থেকে উঠতে পারবে কি না, সময়মতো আবার স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে
কি না এ নিয়ে যেন বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। শিশুকে প্রস্তুত করার জন্য
বাবা-মাকে প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হলো শিশুর মনে স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে
ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে হবে।
স্কুলে গেলে সে অনেক বন্ধু পাবে, খেলতে পারবে, মজার মজার গল্প, কবিতা শিখতে পারবে এগুলো সম্পর্কে
তাকে ধারণা দিতে হবে।
স্কুলে আসার আগে অবশ্যই শিশুকে তাড়াতাড়ি খাওয়া ও
ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে, তাকে রাতে দাঁত ব্রাশ করানোর অভ্যাস করতে হবে, সকালে একদম খালি পেটে যেন সে স্কুলে
না যায় সেদিকে বাবা-মাকে অবশ্যই খেয়াল
রাখতে হবে। সকালে টিফিন দেওয়ার সময় জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার
চেষ্টা করতে হবে। এর বাইরে শিশু যেন
বাসায় কম্পিউটারে খেলা, টেলিভিশনে কার্টুন বেশি না দেখে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এগুলোতে
বেশি আসক্ত হলে শিশু স্কুলে পড়াশোনায় মন দেবে না।
শিশুক
কম্পিউটার, টেলিভিশন এগুলো থেকে দূরে রাখার জন্য রঙিন ছবির বই, বাংলা ও ইংরেজি ছড়ার বই, পাজল ইত্যাদি শিক্ষামূলক খেলনা কিনে দেওয়া যেতে পারে। শিশুর মানসিক
বিকাশের জন্য বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো থাকা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন, তারা যেন শিশুর
মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই একই ধরনের মতামত গ্রহণ করেন।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়