কেন মানসিক চাপ গর্ভধারণের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়

কোন
নারীর গর্ভধারণের ওপরে তার জীবনযাত্রার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।কর্ম ব্যস্তমূখর এই
জীবনে অনেক নারীই সমাজের বিভিন্ন কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। প্রাত্যহিক জীবনের অতিরিক্ত
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ একজন নারীর সন্তানধারণে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
(১) স্বামী-স্ত্রীর রোমান্টিক সম্পর্কের
অনুপস্থিতি:
স্বামী-স্ত্রীর কর্মমূখর জীবন-যাপন, নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে
ব্যস্ত থাকা এবং
অস্বাভাবিক চাপের কারনে জীবনযাপনে পরিবর্তন যেমন ছুটি কাটাতে যাওয়ার অভাব, বহুদিন ধরে
একইভাবে পানাহার, ধূমপান ও একঘেয়েভাবে কাজ করে যাওয়ার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে
পূর্বের সেই রোমান্টিসিজম আর কাজ করে না।ফলশ্রুতিতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক
অনেক সময় শিথিল হয়ে পড়ে। নিভৃতে সময় কাটানো, ঘুরে বেড়ানো,
পরস্পরের প্রতি ভালা লাগার কিছু মুহূর্ত কাটানোর সময় থাকে না। এতে করে সেসব
দম্পতিদের যৌন জীবনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
(২) যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া:
মানসিক চাপের ফলে দম্পতিদের মধ্যকার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক
জীবন,সামাজিক জীবন, যৌনজীবন ও সাধারণ শান্তির বিঘ্ন ঘটে।এর ফলস্বরূপ,পুরুষ বা নারী
উভয়ের যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে আসে। বলা বাহুল্য,
এর ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।
অন্যদিকে দীর্ঘ
কর্মঘণ্টা ও কর্ম পরিবেশের
কারণে মানুষ কর্মস্থলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কাজের চাপে ও নানা ধরনের প্রতিযোগাতিার কারণে
মানুষের মন থেকে যৌনতার বিষয়টি দূরে সরে যায়। এতে তাদের যৌনতার আগ্রহ আর থাকে না। এটি
স্থগিত হয়ে যায়।
(৩) সঙ্গমে
আনন্দ না পাওয়া
বহু দম্পতিই
অভিযোগ করেন যে তাদের বিবাহিত জীবনে বছরেরও বেশি সময় ধরে যৌনতার
কোনো রেশ নেই। আর এ বিষয়টিতে তারা এমনকি কথাও বলেন না। অধিক মানসিক চাপের কারণে পূর্বাপেক্ষা
সঙ্গমে সুখ কমে যায়। যার
ফলে এটা বাড়তি চাপ হিসেবে যুক্ত হয়;
যা
গর্ভধারনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা।
(৪) অনিয়মিত ঋতুচক্র
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও
ঋতুচক্র সাইকেলের প্রথম দিকে গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন তৈরি করে মহিলাদের রিপ্রোডাক্টিভ
সাইকেলের সেক্স হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে।মানসিক
চাপের ফলে অনেক সময় নারীর ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এর ফলে ভ্যাজাইনার সংক্রমণও বৃদ্ধি
পায়।
(৫) মেনস্ট্রুয়েশন ও
ওভ্যুলেশনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়া:
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু স্ট্রেস থাকে। স্ট্রেসে
সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা কিংবা স্ট্রেস হরমোন উৎপাদন মাত্রা মানুষ ভেদে আলাদা। কোনও মহিলার
শরীরে অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হলে, তা যৌন বা সেক্স হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে কোনো কোনো মহিলার মেনস্ট্রুয়েশন ও ওভ্যুলেশনে
বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যা গর্ভসঞ্চারে অসুবিধা ঘটায়।
(৬)
সেক্স হরমোনের নিঃসরণ কমে যাওয়া:
কোন মহিলার মানসিক চাপ বেড়ে গেলে ভাল লাগার অনুভূতি সৃষ্টিকারী বা ফিল গুড ডোপামিন হরমোনের
মাত্রা কমে যায়। ফলে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে
প্রোল্যাকটিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় যা যৌন হরমোনকে স্বাভাবিক মাত্রা রক্ষা করতে
না দিয়ে নিঃসরণ কমাতে বাধ্য করে। এর ফলে সেক্স হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। এই কারনে যৌন চাহিদা
কমে যায় যা গর্ভসঞ্চারে বাধা সৃষ্টি করে।
(৭)
ডিম্ব নি:সরনে বাধা:
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস সেক্স হরমোন নিয়ন্ত্রন করে যা ডিম্বাশয়
থেকে ডিম্ব নি:সরণে সহায়তা করে।মানসিক চাপের কারনে সেক্স হরমোনের কার্যক্ষমতা কমে যায়,
ফলে ডিম্বাশয় থেকে পরিপক্ক ডিম্ব নি:সরণ বাধা প্রাপ্ত হয়। ফলে গর্ভধারনে সমস্যা দেখা
দেয়।
(৮)
সার্ভিক্যাল মিউকাসে সমস্যা:
মানসিক চাপের কারনে মহিলাদের সার্ভিক্যাল মিউকাসে সমস্যা দেখা
দেয়। সময়মত সার্ভিক্যাল মিউকাস হতে রস নি:সরণ না হওয়ায় পরিপক্ক ডিম্বানু ডিম্বাশয় হতে
বের হয়ে আসতে পারে না, এরফলে গর্ভসঞ্চার হতে পারে না্ ।
(৯)
প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া:
পিটুইটারি গ্রন্থি ফলিকল স্টিমেলেটিং হরমোন (এফ এস এইচ) নিঃসরণের
সঙ্কেত পাঠায়। ফলে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের একটি বিশেষ সময়ে পর্যায়ক্রমে ইস্ট্রোজেন,
লুটিনাইজিং হরমোন (এল এইচ) ও প্রোজেস্টেরন হরমোন
সৃষ্টিতে উদ্দীপকের কাজ করে। চূড়ান্ত স্ট্রেস চলাকালীন কিংবা কোনও মহিলা ক্রনিক
মানসিক উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকলে প্রোজেস্টেরন হরমোন নিজে স্ট্রেস হরমোন কটিসলে পাল্টে যায়। কটিসল উৎপাদন সেক্স হরমোন উৎপাদনের জৈব রাসায়নিক পথটিকে অনুসরণ করে। এর ফলে
শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়।
(১০)
শুক্রানুর মান ও সংখ্যা কমে যাওয়া :
অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে পুরুষদের মধ্যে শারীরিক অবসাদগ্রস্ততা
দেখা দেয়। টেস্টোস্ট্রোন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। ফলশ্রুতিতে, পরিণত ডিম্বানুর সাথে
নিষিক্ত হওয়ার জন্য গুণগত মানের যে শুক্রানুর প্রয়োজন অনেকক্ষেত্রে তা বাধাগ্রস্ত হয়।তাছাড়া
শুক্রানুর সংখ্যাও অনেকাংশে কমে যায়।
পরিশিষ্ট:
মনের গতি
পরিবর্তন, হরমোনের ভারসাম্য ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চাপমুক্ত জীবনযাপন করতে
হবে। হেলদি লাইফস্টাইল বা ভারসাম্যের জীবন, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম আহার, নিয়মিত
এক্সারসাইজ ও কিছু রিল্যাক্সেশন বা শরীর শিথিল করার টেকনিক অভ্যেস করে স্ট্রেসকে
দূরে রাখা সম্ভব।
আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে
বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ
করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে।
আমাদের টোল
ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০
সর্বাধিক জনপ্রিয় আর্টিকেল
-
অধিক মাত্রায় সহবাস কি কনসিভ করার সম্ভাবনাতে প্রভাব ফেলে
-
কেন মানসিক চাপ গর্ভধারণের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়
-
আরেকটা বেবি নিতে চান? এই ৪টি বিষয় খেয়াল রাখুন
-
বন্ধ্যাত্বের বিকল্প চিকিৎসাঃ টেস্ট টিউব বেবি
-
এই ১২টি খাবার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়
-
সন্তান নেবার মত আর্থিক অবস্থা কি আপনার হয়েছে? যাচাই করুন সহজেই!
-
গর্ভধারণের জন্য কত সময়ের প্রয়োজন
-
ধূমপান করলে বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রে কি সমস্যা হতে পারে