বাচ্চার প্রথম সলিড খাবারের পুষ্টিগুণ আর স্বাদ নিয়ে টেনশন?এই সহজ ৫টি রেসিপি ওর জন্য পারফেক্ট!

জানেনই তো, বাচ্চার জন্মের পর প্রথম ছয়মাস পর্যন্ত ওর সব পুষ্টিচাহিদা মেটাতে মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। তবে ৭ মাস
এর শুরু থেকে
বাচ্চাকে
বিভিন্ন
খাবারে
অভ্যস্ত
করতে
হবে। কারন ৭
মাস
থেকে
শুধু
মায়ের
দুধ
বাচ্চার
সকল
চাহিদা
পূরণ
করতে
পারে
না। এই সময়
সব ধরণের পুষ্টি
উপাদান
যেন
শিশু
পায়
সেদিকে
লক্ষ্য
রেখে
শিশুর
জন্য
খাবার
তৈরি
করতে
হবে। তবে আরও
লক্ষ্য
রাখতে
হবে
খাবার
যেন
সহজপাচ্য, কম মশলা
ও ঘনত্ব কম
হয়, যাতে শিশু
সহজে
তা খেতে পারে
এবং
হজম
করতে
পারে।
বাচ্চাকে সলিড খাবার খাওয়ানো শুরু করা নিয়ে অনেক মায়েরাই (হয়তো আপনিও) কনফিউশনে থাকেন। তাই আপনার বেবির প্রথম সলিড খাবার হিসেবে আদর্শ তিনটি রেসিপি আমরা দিচ্ছি যা ও খেতে পছন্দ করবেঃ
সবজি খিচুরীঃ
এই সময়ের
একটি
আদর্শ
খাবার
হতে
পারে
খিচুড়ি। খুবই সাধারন
একটি
খাবার
হলেও
এর পুষ্টিগুণ অনেকটা
বাড়িয়ে
নেয়া
যায়। তাই ৭
মাস
থেকে
বাচ্চাকে
দেয়ার
মত খিচুড়ির রেসিপি
দেয়া
হলো। মনে রাখবেন বাচ্চাদের খিচুড়িতে চাল এবং ডাল এর পরিমাণ যেন সমান থাকে।
উপকরনঃ
·
পোলাও-এর চালঃ ১ কাপ
·
মুসরির ডালঃ ১ কাপ
·
ডিমঃ সাদা অংশ ১টি
·
বড় মাছের টুকরোঃ ১ পিস
·
তেলঃ অল্প পরিমাণ
·
সবজিঃ আলু ১টি, গাজর, পেপে, মিস্টি কুমড়া ইত্যাদি
·
অন্যান্যঃ পিঁয়াজ, আদা ও রসুন বাটা এবং পানি পরিমাণ মত
তৈরি পদ্ধতিঃ
প্রথমে মাছ ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা ছাড়িয়ে নিন। ১টি হাড়িতে ১ চা চামচ তেল দিয়ে তাতে পিঁয়াজ কুচি, আদা ও রসুন বাটা দিয়ে একটু ভেজে নিন। অল্প একটু লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। একটু লাল লাল হয়ে আসলে তাতে ধুয়ে রাখা চাল, এবং ডাল হাড়িতে ঢেলে দিন। একসাথে কিছুক্ষন ভেজে নিন। তারপর এতে ধাপে ধাপে সব ধরণের সবজি গুলো ছোট করে কেটে মিশিয়ে নিন। একটু নেড়ে তাতে পানি দিয়ে দিন। বাচ্চার খিচুড়ি হবে পাতলা। তাই সে পরিমান পানি দিন। চাল কিছুটা সেদ্ধ হয়ে আসলে তাতে মাছ এবং ডিমের সাদা অংশ দিতে আরও কিছুক্ষন রান্না করে নিন। খিচুড়ি হয়ে আসলে নামিয়ে নিন।
খিচুড়িতে কেউ কেউ শাক ব্যবহার করতে চাইলে করতে পারেন তবে অনেক বাচ্চাদের বদহজম হতে পারে।
পুষ্টিগুণঃ
৬ মাস এর শিশুর জন্য এটি ১ টি আদর্শ খাবার। কারন পুষ্টির সকল উপাদানই কম বেশি এতে উপস্থিত থাকে। এতে ব্যবহৃত চাল শিশুর শর্করার অভাব পূরণ করবে,
যা শিশুর কর্ম
শক্তি
বৃদ্ধি
ও শক্তি সঞ্চয়
করতে
সাহায্য
করবে। মাছ ও ডিম প্রোটিন এর যোগান দেবে। প্রোটিন বাচ্চার স্মৃতি
শক্তি
বৃদ্ধি
করতে
সাহায্য
করে, তাছাড়া বাচ্চার
বিভিন্ন
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বৃদ্ধিতেও
প্রোটিন লাগে। সবজি তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন আর মিনারেলস। ভিটামিন
শিশুর
রোগ
প্রতিরোধ
এ সক্রিয় ভুমিকা
রাখে। এই সবজি
শিশুর
সকল
রকম
ভিটামিন
এর চাহিদা পূরণ
করতে
সক্ষম।
ওটস দই কলার মিক্সঃ
ওটস
১/৩ কাপ
দই
১কাপ
দুধ
১ কাপ
কলা
১ টা বড়
আপেল
১/২
পদ্ধতিঃ
প্রথমে
১টি
পাত্রে
দুধ
নিয়ে
তাতে
ওটস
দিয়ে
দিন। এমন ভাবে
সেদ্ধ
করেন
যাতে
ওটস
ভালো
ভাবে
সেদ্ধ
হয় কিন্তু যেন
দুধ
অবশিষ্ট
না থাকে। এবার অন্য
একটি
পাত্রে
আপেল
কেটে
ভাপে
সেদ্ধ
করে
নিন। সেদ্ধ হয়ে
এলে
চালুনিতে
ঘষে
চামড়া
ছাড়িয়ে
নিয়ে
আপেল
ম্যাশ
করে
নিন। এবার খাবার
পাত্রে
দই নিতে তাতে
ওটস, আপেল,
কলা
ভালো
করে
মিশিয়ে
নিন। এবার ফ্রিজে
রেখে
বাচ্চাকে
২৪ ঘণ্টার মধ্যে
খাওয়াতে
পারবেন।
পুষ্টিগুণ
দই
একটি
মজাদার
খাদ্য
হতে
পারে
যখন
আপনার
বাচ্চাটি
নতুন
খাবার
খেতে
শিখবে। দই রোগ
প্রতিরোধ
ক্ষমতা
বাড়ায়
এবং
ব্রেইন
এবং
হার্ট
এর স্বাস্থ্য ভালো
রাখে। এটি ক্যালসিয়াম এবংভিটামিন ডি এর ১
টি চমৎকার উৎস
যা শিশুর হাড়
এবং
দাঁত
ঠিক
রাখে। তাছাড়া তা
খাদ্য
নালীতে
উপকারী
অনুজীব
সৃষ্টি
করে
যা খাদ্য হজমে
সহায়তা
করে।
ওটস
১টি
সিরিয়াল
জাতীয়
খাবার।এতে রয়েছে
প্রচুর
পরিমান
এ ফাইবার রয়েছে
যা শিশুর অনেক্ষন
শিশুর
পেট ভরা রাখতে
সাহায্য
করে। সেই সাথে
পেট
ঠাণ্ডা
রাখে, হজম শক্তি
বাড়ায়
এবং
কোস্থ্যকাঠিন্য
দূর
করতে
সহায়তা
করে।
সুজির হালুয়াঃ
অনেক বাচ্চারাই
সহজে
দুধ
ডিম
খেতে
চায়
না। অথবা প্রতিদিন
এক রকমের খিচুরী
দিলে
বাচ্চারা
বিরক্ত
হয়। তাই মাঝে
মাঝে
বাচ্চাকে
দিতে
পারেন
ভিন্ন
রকমের
খাবার। এর মধ্যে
সহজ
১ টি খাবার
হল সুজি। সুজির সাথে
১টা
ডিম
আর ১টা কলা
মিশিয়ে
নিলেই
কিন্তু
সেটি
হয়ে
যাবে
আপনার
বাচ্চার
জন্য
পুষ্টিকর
খাবার।
উপকরনঃ
সুজি ৩
টেবিল
চামচ
ডিম ১টি
কলা ১টি/ ফলের রস
দুধ
তৈরি পদ্ধতিঃ
১.৫ কাপ
দুধ
বানিয়ে নিয়ে এর
সাথে
৩ চামচ সুজি
মিশিয়ে
কম আঁচে ১০
থেকে
১৫ মিনিট চুলায়
রান্না
করুন। সুজি ঘন
হয়ে
আসলে
তাতে
ডিম
এর সাদা অংশ
মিশিয়ে
ভালো
করে
সেদ্ধ
করে
নিন। হয়ে এলে
উঠিয়ে
নিন। লক্ষ্য রাখতে
হবে
যেন
হাড়িতে
না লেগে যায়। ঠাণ্ডা করে
নিন। বাচ্চাকে খাওানোর
সময়
দরকার
হলে
আরো
একটু
দুধ
দিয়ে
পাতলা
করে
নিতে
পারেন। সাথে কলা
চটকিয়ে
অথবা
কোন
মিষ্টি
ফলের
রস মিশিয়ে নিন।হয়ে গেল
বাচ্চার
জন্য
একটু
ভিন্ন
রকমের
খাবার।
পুস্টিগুণঃ
সুজি শর্করা
জাতীয়
খাবার। এটি আপনার বেবিকে সারাদিনের জন্য এনার্জি দেবে। আর ডিম
হচ্ছে উচ্চ বায়োলোজিক্যল
ভ্যালুসম্পন্ন
খাবার। এতে সব
ধরণের
পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত
পরিমান
থাকে। তবে ১
বছরের
আগে
শিশুকে
ডিমের
কুসুম
না দেয়ায় ভালো। দুধ আরো
১টি
উচ্চ
পুষ্টিগুণে ভরা খাবার। আর কলাতে ভিটামিনের সাথে আছে প্রয়োজনীয় আয়রন।
বার্লি সিরিয়াল
অনেক বাচ্চাই
আছে
যারা
মূলত
খিচুরী
খেতে
চায়
না। তাদের কে
অন্যান্য
খাদ্যে
অভ্যস্ত
করার
দরকার
হতে
পারে। তাই বাচ্চাকে
সুজি, বার্লি এই
খাবার
গুলোতে
অভ্যস্ত
করানো
যেতে
পারে।
উপকরনঃ
বার্লি-
৩/১ কাপ
পানি-
১/২ কাপ
দুধ-
পরিমান
মত
চিনি
ফলের রস/ কলা
পদ্ধতিঃ
পাত্রে পানি
নিয়ে
ফুটিয়ে
নিন।কয়েক চামচ
বার্লি
নিয়ে
নাড়তে
থাকুন। লক্ষ্য রাখবেন
চুলার
আঁচ
যেন
কম হয়। আঠালো ভাব
হয়ে
এলে
সামান্য
একটু
চিনি
ব্যবহার
করতে
পারেন। নামিয়ে নিয়ে
খাওয়ানোর
আগে
দুধ
ও ফলের রস
মিশিয়ে
নিন।
পুস্টিগুনঃ
এটি এক
ধরণের
সিরিয়াল
জাতীয়
খাবার। বারলিতে রয়েছে
ফাইবার
যা অন্ত্র সঞ্চালন
বজায়
রাখে। সাথে রয়েছে
শর্করার
প্রাচুরয্য। এছারাও বার্লি
তে রয়েছে বিভিন্ন
রকম
ভিটামিন
এবং
মিনারেলস
যা শরীরের রোগ
প্রতিরোধ
করতে
সাহায্য
করে
থাকে। ফলের রস
বাচ্চা
খাবারের
স্বাদ
ও ভিটামিন এর
অপূরণীয়
চাহিদা
পূরণ
করতে
সক্ষম।
ডিমের পুডিং
পাতলা ডিমের
পুডিং
ও কিন্তু হতে
পারে
শিশুর
জন্য
১টি
মজাদার
খাবার। তাই ঝটপট
করে
নিতে
পারেন
পাতলা
পুডিং।
উপকরনঃ
ডিম ১টি
দুধ ১
কাপ
চিনিঃ ১
চামচ
তেলঃ সামান্য
পরিমান
তৈরি পদ্ধতিঃ
১টি ছোট
পাত্রে
সব উপকরণ একসাথে
মিশিয়ে
নিন। ১টি বড়
পাত্রে
পানি
নিয়ে
তাতে
পুডিং
এর পাত্রটি ডুবিয়ে
নিন। লক্ষ্য রাখবেন
পুডিং
এর পাত্রটি যেন
পুরো
পুরি
ডুবে
না যায়।
পাত্রের
মুখ
ভালো
করে
বন্ধ
করে
নিন। এতে করে
খুব
দ্রুত
পুডিং
তৈরি
হয়ে
যাবে। কিছুক্ষন পরে
ঢাকনা
উথিয়ে
দেখুন
যে পুডিং হয়েছে
কিনা। এখানে জানা
প্রয়োজন
যে বাচ্চাদের পুডিং
বড়দের
মত শক্ত বা
থকথকে
হবে
না। এটি হবে
পাতলা। অর্থাৎ পুডিং
জমে
যাওয়ার
আগেই
চুলা
থেকে
উঠিয়ে
ফেলতে
হবে।একটু ঠান্ডা
হলে
১টি
পরিষ্কার
চামচ
দিয়ে
নেড়ে নিন। এই পুডিং
এ কোন রঙ
বা ফ্লেভার ব্যবহার
করার
দরকার
নেই। শিশুকে এবার
পুডিং
টি খাওয়ানোর জন্য
তৈরি।
পুষ্টিগুণঃ
বুঝতেই পারছেন যে এটি প্রোটিন এবং ক্যালরিতে ভরপুর একটি খাবার। এতে রয়েছে
ডিম, দুধ এবং
চিনি
যা খাবার এর
পুষ্টিগুণ
বহুমাত্রায়
বাড়িয়ে
তুলে। প্রতিদিন এর
এক ঘেয়ে খাবার
থেকে
বাচ্চাকে
মুক্তি
দিতে
বেছে
নিতে
পারেন
এই মজাদার পুডিং
রেসিপি
টি, যা স্বাদ
এর দিক দিয়ে
মজাদার
হবার
সাথে
সাথে
পুষ্টির
দিক
থেকেও
অনন্য।
কিছু টিপসঃ
সাত মাস
বয়স
থেকে
২ বছর পর্যন্ত
শিশুকে
এই খাবার গুলো
দেয়া
যেতে
পারে। তবে বয়স
বাড়ার
সাথে
সাথে
বাচ্চার
খাবারের
পরিমান
বাড়াতে
থাকুন। এবং বাচ্চাকে আস্তে আস্তে বড়দের খাবারে অভ্যস্ত করে তুলুন।
বাচ্চার খাবার তৈরি করার আগে সবার আগে আপনার হাত ধুয়ে জীবানুমুক্ত করা চাই। এর জন্য জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। আর রান্নায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র ডিশওয়াসিং লিকুইড বা বার দিয়ে ধুয়ে নিন। এসব করার কারণ একটাই, জীবাণুর সংক্রমণ হওয়া থেকে বেবিকে বাচিয়ে রাখা।
সর্বাধিক জনপ্রিয় আর্টিকেল
-
বাচ্চার প্রথম সলিড খাবারের পুষ্টিগুণ আর স্বাদ নিয়ে টেনশন?এই সহজ ৫টি রেসিপি ওর জন্য পারফেক্ট!
-
ঈদে কী বাচ্চারাও পোলাও-মাংস খেয়েই থাকবে, নাকি ওর পছন্দের এই ৩টি রেসিপি ট্রাই করবেন?
-
জেনে নিন বাচ্চার প্রথম বছরে পুষ্টি উপাদান কি কি দরকার
-
আপনার বেবি কি যথেষ্ট পরিমাণ বুকের দুধ পাচ্ছে? বুঝে নিন সহজেই
-
বাচ্চাকে শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করা নিয়ে টেনশন? এই ৬টি টিপস আপনার জন্যই!