বাচ্চাকে গোসল করাবার নিয়ম

গোসল আমাদের প্রতিদিনকার
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার একটি অংশ । গোসলের মাধ্যমে একদিকে আমরা যেমন পরিস্কার
পরিচ্ছন্ন থাকতে পারি তেমনই অন্যদিকে গোসল এর মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের
তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পারি ।
কিন্তু শিশুদের আর বড়দের
গোসল করার পদ্ধতি আলাদা । চলুন দেখে আসি শিশুদের গোসল করাবার কয়েকটি কার্যকরী ধাপ
সম্পর্কে । যেগুলো অনুসরন করে খুব সহজেই আপনি আপনার শিশুকে নিরাপদভাবে গোসল করাতে
পারেন ।
গোসলের পূর্ব প্রস্তুতি এবং করনীয়
১। গোসল করাবার জন্য
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন । এতে করে গোসল করার সময় সম্পর্কে শিশুর
মধ্যে একটি ধারনা তৈরী হবে এবং প্রতিদিন শিশু একই সময়ে গোসল করার জন্য মানসিকভাবে
প্রস্তুত থাকবে । এতে তার মধ্যে শৃঙ্খলাবোধের একটি ধারনাও গড়ে উঠবে ।
২। শিশুকে গোসলখানায়
নিয়ে যাওয়ার আগেই শিশুর গোসলের সমস্ত সরঞ্জাম সেখানে গুছিয়ে রাখাটা জরূরী কারন
গোসলের সময় শিশুকে একা রেখে একটু পর পর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনতে যাওয়াটা মোটামুটি
অসম্ভব এবং অনিরাপদ । তাই গোসলের আগেই সেগুলোকে গোসলখানায় গুছিয়ে রাখুন ।
সরঞ্জামগুলো হল:-
মৃদু গরম পানি ( ৯২
ডিগ্রী ফারেনহাইট), টাওয়েল, শিশুদের উপযোগী মৃদুমাত্রার সাবান এবং শ্যাম্পু, পানি
ঢালার মগ, গোসলের গামলা বা টাব ( শিশু যেন ডুবে না যায় এমন মাপের), কটনবল, কিছু
খেলনা (আবশ্যক নয়)যাতে শিশু খেলনা নিয়ে খেলতে পারে এবং আনন্দের সাথে গোসল সম্পন্ন
করতে পারে ।
৩। গোসলের গামলা বা টাবে মৃদু গরম পানি রাখুন । সাধারনত বলা হয়ে থাকে পানির তাপমাত্রা ৯২ ডিগ্রী ফারেনহাইট রাখতে
। যদি কেউ এই তাপমাত্রা বুঝতে না পারে তবে এতটুকু খেয়াল রাখলেই
হবে যে পানি থেকে শুধু ঠান্ডাটা ছাড়িয়ে নিলেই হবে । কারন সরাসরি ঠাণ্ডা পানি শিশুর ঠাণ্ডা লাগার কারন হতে পারে । তাই হালকা কুসুম গরম
পানি প্রস্তুত করে নেয়া এবং তা নিজের হাত ডুবিয়ে পরীক্ষা করে নেয়া যে পানির উষ্ণতা
ঠিক আছে কিনা । গামলা বা টাবে ৩ ইঞ্চি
বা ৭ সেন্টিমিটার পানি নিয়ে নিতে হবে । কেউ যদি এই হিসাব না
বোঝে তবে এতটুকু মনে রাখলেই হবে যে এমনভাবে পানি নিতে হবে যে, তাতে শিশু যেন ডুবে না যায় অর্থাৎ শিশুর পেট
পর্যন্ত পানি নেয়া যেতে পারে ।
৪।ঘরে খাটে গোসলের পর
শিশুর ত্বকের যত্ন নেবার জন্য এবং পরিধান করানোর জন্য সাজিয়ে রাখুন শিশুর শুকনো
জামা,প্যান্ট বা ডায়াপার, তেল বা বেবী পাউডার, চুল আঁচড়ানোর জন্য নরম মসৃণ দাঁতের
চিরুনী ইত্যাদি ।
৫। এরপর নিজের হাতের আংটি, চুড়ি বা অন্য
কোন অলংকার যদি থাকে তবে সেসব খুলে রাখুন কারন গোসল করানোর সময় ওগুলো দ্বারা শিশু
আঘাত পেতে পারে । নিজের হাতের আঙুল কেটে সবসময় ছোট রাখুন কারন শিশুর ত্বক খুব নরম
থাকে বিধায় আপনার হাতের নখ দ্বারা শিশুর নরম ত্বকে আঁচড় লাগতে পারে । এমন কাপড় পড়ে
নিন যেটা ভিজে গেলে সহজেই বদলে ফেলতে পারবেন । আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখুন আপনার
কাপড়ে যেন কোন সেফটিপিন,হুক বা আঁচড় লাগার মত কোন জিনিস না থাকে যা দ্বারা শিশু
আঘাত পেতে পারে । যদি একা গোসল করাতে না পারেন তবে বাসার কারও সাহায্য নিন এবং
তাকেও এই সতর্কতাগুলো অবলম্বন করতে বলুন ।
গোসলের সময় করনীয়:
১। সকল প্রস্তুতি নেয়া শেষ হলে শিশুকে এনে গামলায় বা
টাবে প্রথমে তার পা নামিয়ে দিন ।এরপর এক হাত দিয়ে তার পেছনে তার ঘাড় এবং মাথাকে ধরে রেখে
ধীরে ধীরে গামলা বা টাবে বসিয়ে দিন । পুরো সময়টাতেই এভাবে একটা হাত দিয়ে তার মাথা এবং ঘাড় ধরে
রাখতে হবে যেন সে পানিতে পড়ে না যায় ।এরপর পানি ঢালার মগ দিয়ে ধীরে ধীরে মাথায় পানি ঢালুন ।
খেয়াল রাখুন যেন কানের ভেতরে পানি প্রবেশ না করে ।
২। এরপর শিশুর চোখ এবং
কানের বাইরের অংশ কটনবল দিয়ে আস্তে আস্তে পরিস্কার করে দিন । তার গলা পরিস্কার করে
দিন কারন অনেক শিশুর মুখমণ্ডল বুকের সাথে লেগে থাকে তাই সেখানে ময়লা জমে যায় এবং
ঘা হয়ে যেতে পারে ।তাই গোসলের সময় তা পরিস্কার করে দিন । শিশুর যোনিপথের ভেতরে এবং
বাইরে পরিস্কার করে দিন । শিশুর পায়ুপথ এবং তার চারপাশে ভাল করে পানি দিয়ে পরিস্কার
করে দিন । কারন অনেক মায়েরা তখনও শিশুর পায়খানার পর কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে দেয়
। তাই ঐ যায়গায় ময়লা জমে বা চিটচিটে হয়ে চুলকাতে পারে। তাই গোসলের সময় তা পানি দিয়ে
ভালভাবে পরিস্কার করে দিন ।মাথার চুলে পানি দিয়ে ভালভাবে চুল এবং মাথার তালু
পরিস্কার করে দিন ।
৩। সাবান এবং শ্যাম্পু
প্রতিদিন ব্যবহার না করাই ভাল । কারন এগুলো মৃদুমাত্রার হলেও তা প্রতিনিয়ত
ব্যবহারের ফলে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে ।
গোসলের পর করনীয়:
১। এরপর গোসল শেষ হলে শিশুকে শুকনো
টাওয়েল দিয়ে জড়িয়ে গামলা বা টাব থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে । এরপর সাবধানে তার
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ভালভাবে শুকনো করে মুছে দিতে হবে । বিশেষ করে কানের পানি
তাড়াতাড়ি মুছে দিতে হবে যেন তা কানের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে ।
২। শুকনো করে মুছে ফেলার
পর শিশুর শরীরে তেল বা লোশন বা পাউডার লাগাতে পারেন । এতে শিশুর ত্বক ভাল থাকবে ।
৩। তেল বা পাউডার বা
লোশন লাগানোর পর শিশুকে আরামদায়ক পোশাক যা আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন তা পরিধান
করিয়ে দিন ।
লেখিকা : শারমীন আক্তার
আমাদের কেয়ার লাইনে
ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত
সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা
নিয়ে। আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০ ।
সর্বাধিক জনপ্রিয় আর্টিকেল
-
শিশুর টিকা
-
কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের যত্ন
-
জ্বরে আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যার টিপস
-
নবজাতকের ত্বকের ৫টি কমন সমস্যা
-
আপনার বেবি কী প্রায়ই ফ্লু বা সর্দিজ্বরে ভোগে?
-
এই ৭টি টিপস আপনার বেবিকে পরিচ্ছন্ন আর সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করবে
-
প্রিম্যাচিউরড বেবির যত্ন
-
বাচ্চার স্বাভাবিক গ্রোথ এর জন্য পুষ্টির এই ৭টি বিষয় খেয়াল করুন