স্কুলে পুষ্টিকর টিফিন শিশুর সারাদিনের পুষ্টির চাহিদায় মেটায়

গরমের সময় স্কুলের খাবার তালিকায় দিতে হবে বাড়তি নজর। এই মৌসুমে শিশুর প্রতিদিনের পানি ও পুষ্টির চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। তাই খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পানীয় আর সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

গরমে শিশুর বাড়তি যত্নে বাইরের ভাজা পোড়া ও খোলা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। তাই খাবার বাছাইয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি।

গরমে রোগের সংক্রমণ বেশি হয় তাই শরীরে বাড়তি ক্যালরি ও রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদাও বাড়ে।

গরমে শিশুর স্কুলের টিফিন ও দুপুরের প্রয়োজনীয়তা ও এর সঠিক খাবার নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ গার্হস্থঅর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি  বিজ্ঞানবিভাগের বিভাগীয় প্রধান ফারাহ মাসুদা এবং শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্কবিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা বাশার।

ফারাহ মাসুদা বলেন, “দিনের বেলায় শিশুর বেশ খানিকটা সময় স্কুলে থাকে। তাই এই সময় তার দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য সঠিক টিফিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত। যতটা সম্ভব শিশুকে বাইরের খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে। এরজন্য তার স্কুল টিফিনে নতুনত্ব রাখা প্রয়োজন।

শিশুরা দিনের প্রায় তিন ভাগের একভাগ সময় স্কুলেই কাটায়। তাই স্কুলের টিফিন হওয়া চাই স্বাস্থ্যসম্মত। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবারটি শিশুর পছন্দেরও হয়। যেন সে আগ্রহ নিয়ে টিফিন খায়।

স্কুলের টিফিনে শিশুকে শক্তি যোগায় এমন খাবার দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ফারাহ মাসুদাকারণ, শিশুরা স্কুলে পড়াশুনার পাশাপাশি অনেক ছোটাছুটিও করে থাকে। এতে তাদের ক্যালরির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এই সময় শিশুর মস্তিষ্ক অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে তাই ভিটামিন ও পানি শিশুর জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন।

শিশুর জন্য টিফিন পরিকল্পনার জন্য কিছু বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন ফারাহ মাসুদা। 

* যেহেতু শিশু দিনের অনেকটা সময় বাইরে থাকে তাই শিশুকে পরিষ্কার পাত্রে ফুটানো পানি দিতে হবে।

* শিশুর টিফিন তার পছন্দ অনুসারে করতে হবে।

* শিশুর শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য টিফিনে তাকে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া প্রয়োজন। যেমন- রুটি ভাজি, পাউরুটি জেলি/জ্যাম, হালুয়া ইত্যাদি।

* পানি ও খনিজের চাহিদা পুরণের জন্য শিশুকে মৌসুমি ফল থেকে ঘরে তৈরি জুস দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে, বেল ইত্যাদি ফল বেছে নেওয়া যেতে পারে। 

* মাঝে মাঝে ডাবের পানি দিতে পারেন পানীয় হিসেবে। আগে থেকে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে দিলে ডাবের পানি একটু বেশি সময় ধরে ভালো থাকে।

* টিফিনে আপেল, কমলা, পেয়ারা, আমসহ যে কোনো মৌসুমি ফলও টুকরা করে দেওয়া যেতে পারে।

* শিশুর শাকসবজির প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য সবজি-স্যান্ডুইচ, রোল, পাকোড়া ইত্যাদি বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবারে তেলে মাত্রা কম থাকে।

* তবে তেলে ভাজা খাবার বাদ দেওয়াই ভালো।

* শিশুর খাবারে বৈচিত্র্য আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিফিন একঘেয়ে হয়ে গেলে শিশুর যেমন আকর্ষণ কমে যায় তেমনি তার বাইরের খাবারের প্রতি আকর্ষণও বাড়ে। তাই একই খাবার রোজ রোজ না দিয়ে কয়েকটি পদ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টিফিনে দিলে শিশু আগ্রহ নিয়ে তা খায় এবং শরীরে কাজে লাগে।

* শিশুকে যে খাবারই দেওয়া হোক তা যদি সুন্দর ভাবে গুছিয়ে দেওয়া হয় তবে সে আগ্রহ নিয়ে খায়। আর ছোট থেকে যদি তাকে বিভিন্ন খাবারের পুষ্টি গুণ সম্পর্কে সচেতন করা হয় তবে সে নিজে থেকেই খেতে চাইবে বলে জানান ফারাহ মাসুদা।

রুমানা বাশারের মতে, গরমের দিনে খাবারে অসাবধানতার কারণে সহজেই পেটের অসুখ, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সচেতনতা ও সঠিক অনুপাতে সুষম খাদ্য গ্রহণ এসব সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।

শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্কুল লাঞ্চগুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন রুমানা বাশার। তিনি বলেন, “স্কুল লাঞ্চ হচ্ছে স্কুলের ইউনিফর্মের মতো। স্কুলে যেমন সব শিশুদের একই পোশাক পরানো হয় সমতা বিধানের জন্য ঠিক তেমনি স্কুল লাঞ্চ দেওয়া হয় স্কুলের সকল শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য। স্কুল লাঞ্চ স্কুলের পক্ষ থেকে বা স্কুল অনুমোদিত কোনো সংগঠন থেকে সরবারহ করা হয়।

স্কুল লাঞ্চে শিশুদের পছন্দ মতো খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। যে সব স্কুল থেকে স্কুল লাঞ্চ সরবারহ করা হয় তাদের কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

* শিশুদের জন্য যে খাবারতালিকা ঠিক করা হয়েছে তা পুষ্টিকর কিনা,

* খাবার তৈরি, পরিবেশন ও বিতরণের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত।

* শিশুরা যেন সহজে খেতে পারে তাই শুকনা ও মোড়কজাত খাবার দিলে ভালো হয়।

* খাবার শিশুদের পছন্দসই হওয়া জরুরি। এতে তারা ঠিক মতো খাবার খাবে ফলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন স্কুলে স্কুল লাঞ্চয়ের ব্যবস্থা থাকলে বাসা থেকে আলাদা করে টিফিন দেওয়ার দরকার পরে না। তবে অবশ্যই শিশুকে প্রয়োজনীয় পানি দিয়ে দিতে হবে। এবং শিশুকে বাসা থেকে ভালো মতো বুঝিয়ে দিতে হবে যেন সে এই গরমে একটু পর পর পানি খায়।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি শিশুকে স্যালাইন বা গ্লুকোজের পানি দেওয়া যায়। এতে শিশুর দেহের পানির অভাব পূরণের পাশাপাশি গ্লুকোজের চাহিদাও পূরণ হবে।

সূত্রঃ Bangla.bdnews24.com


 

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল