বাচ্চার স্বাভাবিক গ্রোথ এর জন্য পুষ্টির এই ৭টি বিষয় খেয়াল করুন

শিশুর জন্মের ছয়মাস সে তার মায়ের দুধ থেকেই শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুন পেয়ে থাকে।  তারপর সে যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তখন তার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পুষ্টিমান প্রয়োজন হয়।

এছাড়াও  শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। এজন্য পরিবারের সবাইকে ওর পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কিত ৭ টি বিষয় জেনে নেয়া আবশ্যক।

১. প্রোটিন

শিশুর শরীর গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার শরীরের তাপ উৎপাদন, দেহের হজমক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, কোষের ক্ষতিপূরণ ও শরীরস্থ উপাদানসমূহ নির্মাণ করে থাকে।  তা ছাড়া শরীরের বৃদ্ধি, দেহের পুষ্টি এবং মেধা বাড়ানোর জন্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

আমাদের নাগালেই অনেক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে- ছোট মাছ, ডাল, সিমের বিচি , ডিম, মাছ, মাংস, পনির, সয়াবিন, চিনাবাদাম, ডাল, দুধজাতীয় খাদ্য , ছানা ইত্যাদি থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়।         

২. কার্বোহাইড্রেট

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য বাচ্চার শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।  শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকর্ম যেমনঃ শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া, হৃৎপিন্ড ও অন্যান্য দেহ যন্ত্রের ক্রিয়া, পরিপাক ক্রিয়া, মলমূত্র নিষ্কাণ ক্রিয়া এবং  দৈনন্দিন জীবনে সকল কাজকর্ম শর্করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চাল, চিনি, আটা, ময়দা, মিষ্টি, মধু, আম, আলু, মিছরি, গুড়, চিড়া, মুড়কি, সাগু, বার্লি ইত্যাদিতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। শিশুর দৈনিক খাদ্য তালিকায় শতকরা ৫০-৬০ ভাগ শর্করা জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে।

৩.  ফ্যাট বা চর্বি:

দেহের কোষ গঠন, শক্তি সঞ্চার, মস্তিষ্কের কাজ ভালোভাবে পরিচালনার জন্য চর্বি যুক্ত খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এছাড়া আপনার বাচ্চার দেহের কমনীয়তা রক্ষা ও দেহ লাবণ্যের জন্য চর্বিযুক্ত খাবারের খুব প্রয়োজন। মাছে ও মাংসের চর্বি, মাখন, বাদাম, তেল, ঘি, নারকেল প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি রয়েছে।

৪. মিনারেলস :

ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম আপনার সন্তানের হাড় ও দাঁতের শক্ত ও মজবুত গঠনে সহায়তা করে। স্নায়ু ভালোভাবে সচল রাখে, পেশী গঠনে সহায়তা করে এবং খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরে সহায়তা করে। দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ,কচু শাক, কাঁচ কলা, কলিজা, নানান রকম ডাল থেকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

ফসফরাস: ফসফরাস ক্যালসিয়ামের সাথে মিলিত হয়ে হাঁড় ও দাঁতের তন্তু তৈরী এবং তা মজবুত করে। এছাড়া শর্করা এবং চর্বি বিপাকে সাহায্য করে শরীরে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে। বাদাম, ডাল, দুধ , ডিম, পনির ও মাছে  প্রচুর ফসফরাস পাওয়া যায়।

আয়রন: রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরীর জন্য, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখার জন্য আয়রনের গুরুত্ব অপরিসীম। কলিজা, সবুজ শাকসবজি, মাংস ইত্যাদি খাবার থেকে আপনি মেটাতে পারেন প্রয়োজনীয় আয়রনের চাহিদা।

পটাশিয়ামঃ শরীরে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করতে, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পটাশিয়াম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেশী গঠনেও সহায়তা করে। পটাশিয়ামের পুষ্টিগুণ যেসব খাবার থেকে পেতে পারেন, তা হলো- মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, কলা, আলু, গাজর, আপেল প্রভৃতি খাবার।

ম্যাগনেশিয়াম: বাচ্চার হাড় শক্তিশালী রাখা এবং হার্টের রিদম স্বাভাবিক রাখা ও পেশী এবং স্নায়ু কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখার জন্য ম্যাগনেশিয়াম খুবই জরুরী। টাটকা শাকসবজি, চিনাবাদাম, সামুদ্রিক খাদ্য, শস্যজাতীয় খাবারে ম্যাগনেশিয়াম থাকে।

জিংক : জিংক আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান।  সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, মাংস, সিরিয়াল, চিংড়ি, সামুদ্রিক খাদ্যে জিংক প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যা বাচ্চার শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

আয়োডিন: বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য এবং থাইরক্সিন নামক হরমোন তৈরীর জন্য  আয়োডিন অপরিহার্য। সামুদ্রিক মাছ, শুটকি, আয়োডিন মিশ্রিত খাবার লবণে আয়োডিন পাওয়া যায়।

৫. ফাইবার: 

ফাইবার আপনার বাচ্চার শরীরের অভ্যন্তরের অন্ত্রসমূহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া হৃদরোগ ও পরবর্তী জীবনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাদাম, মসুর ডাল, দানাদার শস্য, মটরশুটিতে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।

৬.ভিটামিন:
ভিটামিন এঃ ভিটামিন-'এ' দেহের কোষ বিভাজন এবং বৃদ্ধিতে, দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে, দেহের টিস্যুর কার্যকলাপ সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-'এ' সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। পাকা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, আম, ছোট মাছ ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন- বিদ্যমান।

ভিটামিন বি: শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন-'বি' অপরিহার্য। ভিটামিন-'বি' বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। মাংস, সামুদ্রিক মাছ এবং শর্করা জাতীয় খাবারে ভিটামিন-'বি' থাকে।

ভিটামিন সিঃ ভিটামিন-'সি' শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন-'সি' লৌহ কণিকা শোষণ করে রক্তের চর্বি বা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, ত্বক সুন্দর রাখে এবং বাচ্চার ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন টক ফল যেমন আমলকী, তেতুল, লেবু, আমলকি, কমলা, জলপাই, কামরাঙ্গা, পেয়ারা ও জাম্বুরা ইত্যাদি ফলে প্রচুর ভিটামিন 'সি' পাওয়া যায়।

ভিটামিন ডিঃ  ক্যলসিয়ামের মত ভিটামিন- ‘ডি ও হাড় ও দাঁতের শক্ত ও মজবুত গঠনে কাজ করে। হরমোনের সঠিক বৃদ্ধিতেও ভিটামিন- ডি কাজ করে থাকে। পনির, মাখন, ঘি, সামদ্রিক মাছ , দুধ-ডিম, কলিজা, দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাদ্যে এবং সূর্যের আলোতে ভিটামিন- ডি পাওয়া যায়।

ভিটামিন-'ই' এবং ভিটামিন-'কে' :  ভিটামিন-'ই' এবং ভিটামিন-'কে'  শিশুর মাংসপেশি শক্তিশালী করে, লৌহ কণিকার ভারসাম্য রক্ষা করে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম, মাংস, চিনা বাদাম, বিভিন্ন ধরণের সবুজ ও হলুদ শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদিতে ভিটামিন-'ই' এবং ভিটামিন-'কে' পাওয়া যায় ।

৭. পানি:

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যেসব বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণ হাইড্রেশন পায় না, সেসব বাচ্চার শারীরিক, মানসিক এবং অনুভূতিগত ভাবে দুর্বল থাকে।  পানি দেহের তাপমাত্রা রক্ষা করে, শরীরের এক স্থান হতে অন্য স্থানে পুষ্টি উপাদান পৌঁছিয়ে দেয়, শরীরের জোড়া অংশ নড়াচড়ায় সাহায্য করে  এবং দেহের যে কোন রাসায়নিক পরিবর্তনে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  এছাড়া  গ্রহণকৃত খাবার হজম, আত্মীকরণ, শোষণ এবং শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে দিতে বাচ্চাকে প্রতিদিন পানি পান করাতে উৎসাহিত করতে হবে।

 

পরিশিষ্ট:

৭টি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার আপনার সন্তানের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট হোন। এটি আপনার শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশের জন্য অতীব জরুরী। বাচ্চাকে আপনার পরিবার এবং দেশের একজন ভবিষ্যৎ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনারই হাতে।

রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০