এবার আপনিও আপনার সন্তানের ভদ্র আচরণ নিয়ে গর্ব করতে পারবেন

অনেক পিতা-মাতাই তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেন। সেটা হতে পারে কোথাও বেড়াতে গেলে বা বাসায় মেহমানের সামনেআপনার সন্তানটি যে  কাজটি কখনোই করেনা সেটাই হয়তো করে বসে অন্য কারো সামনে! যার ফলে আপনার প্রেস্টিজের বারোটা বেজে যায়। স্কুল থেকে বা অন্য অভিভাবকদের থেকেও হয়তো শুনতে হয় নালিশ।

শিশুকে শৃঙ্খলা শেখানো অসম্ভব কোন কাজ নয়। Raising a Self-Disciplined Child”  বইটির সহ লেখক রবার্ট ব্রুকস বলেন, যদি আপনি শিশুর ২ বছর বয়স থেকেই তার প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ রাখেন তাহলে আপনার সন্তান দ্রুত শিখতে পারবে, কম বিরোধিতা করবে এবং পরিণামে ভালো আচরণ করবে। এমন চারটি নিয়ম আছে যা শিশুকে নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। সেগুলো হচ্ছে :

১। নিয়ম তৈরি করুন

আপনার সন্তান যদি বুঝতে পারে যে সে যা চায় তাই করতে পারে তাহলে সে কান্নাকাটি করে বা জিনিস ছুড়ে ফেলে অস্থির পরিবেশ তৈরি করে তার ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করবে। কিন্তু আপনি যদি তাকে তার সীমা সম্পর্কে সচেতন করে দেন তাহলে সে এমন করবেনা। এটি গড়ে তোলার জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল :

ক) কারণ বুঝিয়ে বলুন

আপনার সন্তানের কাছ থেকে আপনি কেমন আচরণ আশা  করেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কোন একটি নিয়ম তাকে কেন মানতে বলছেন তা যদি আপনি আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে পারেন তাহলে সে সেই নিয়মটি মেনে চলার চেষ্টা করবেযেমন- আপনি আপনার সন্তানকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার জন্য বলতে পারেন যে, “রাত ৮ টায় তোমার ঘুমাতে  যাওয়া উচিৎ কারণ তোমার শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য প্রচুর ঘুম প্রয়োজন”। অথবা বলতে পারেন, “তোমার খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখো যাতে পরের  দিন তুমি খেলার জন্য এগুলো খুব সহজেই খুঁজে পাও”।

খ) প্রশংসা করুন

আপনার সন্তানের বিছানা গুছানোর সময় বা টেবিলটি গুছিয়ে রাখার সময় আপনাকে সাহায্য করার জন্য অথবা ছোট বোনের সাথে খেলার জন্য তার প্রশংসা করুনআমি তোমাকে নিয়ে গর্ব বোধ করি”, “বাহ! তুমিতো বড় হয়ে গেছো”! ইত্যাদি প্রশংসা সূচক বাক্য তাকে উৎসাহিত করবে ভালো কাজ করতে।

গ) নিজে নিয়ম মানুন

আপনি নিজে সারাক্ষন চেঁচামেচি করলে আপনার সন্তান তাই করতে শিখবে। বা আপনি নিজে অগোছালো থাকলে আপনার সন্তান কখনই গুছিয়ে রাখা শিখবেনা। আর আপনি নিজে ভালো আচরণ করলে আপনার সন্তানও সেটাই শিখবে। আপনি নিজে নিয়ম মেনে চললে আপনার সন্তানও নিয়ম মানতে উদ্বুদ্ধ হবে।

ঘ) বিবেক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন

আপনার সন্তান যদি কোন একটি নিয়ম না মানতে পারার কারণে খারাপ অনুভব করে তাহলে তার সে অনুভূতিকে খুব তাড়াতাড়ি দূর করার চেষ্টা করবেন না। অপরাধবোধ ভুল থেকে সঠিক কাজটি নির্ধারণ করতে শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটাকে শেখানোর একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান। তাকে বলুন- “এটা করে [বা এমন হওয়ায়] তোমার খারাপ লাগছে না বেবি? আর এমন করবেনা ঠিক আছে?” উত্তরে আপনার বেবি হ্যাঁ বললে তাকে বলুন “গুড বয়” বা এমন কিছু।

২। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করুন

শিশুর খারাপ আচরণের প্রধান কারণ হচ্ছে হতাশা ও ক্ষমতাহীনতা। এজন্য পিতা-মাতার যা করা উচিৎ তা হল :

ক) সিদ্ধান্ত নিতে দিন

যখন থেকে শিশু বুঝতে শেখে তখন থেকে তাকে পছন্দ করার সুযোগ করে দিন। স্কুলের টিফিনে কি নিতে চায় তা তার পছন্দ অনুযায়ী দিন অথবা রাতে ঘুমানোর সময় কোন পোশাকটি পড়তে চায় তা তাকে ঠিক করতে দিন ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সে আস্তে আস্তে ম্যাচিউরড হয়ে উঠবে। আপনার ছোট দুটি সন্তান যখন পরস্পর মারামারি করে বা ঝগড়া করে তখন তাদেরকে না থামিয়ে দিয়ে লক্ষ করুন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন নিজেরাই একটা সমঝোতায় আসবে।

খ) চেষ্টা করতে বলুন

শিশুর নিজের কাজগুলো নিজেকে করতে বলুন, যেমন- নিজে নিজে স্কুল ড্রেস পরা, জুতা-মোজা পরা ও খুলে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা, খেলা শেষে নিজের খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি। একবারে না পারলে আবার চেষ্টা করতে বলুন। তাহলে সে শিখবে।

গ) চিন্তা করতে শেখান

শিশুর জ্ঞানীয় দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য তাকে নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে দিন। যেমন- সে যদি কোন কাজ করার ব্যাপারে আপনাকে প্রশ্ন করে তাহলে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করুন “কীভাবে এই কাজটি করা উচিৎ বলে তুমি মনে কর”? এর ফলে সে নিজের প্রতি সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।

৩। ধৈর্য ধারণ করতে শেখান

কেউই অপেক্ষা করতে পছন্দ করেনা, বিশেষ করে ছোট শিশুরা বেশ অধৈর্য হয়ে থাকে। তারা চায় তাদের প্রয়োজনীয়তা খুব তাড়াতাড়ি পূরণ হোক। এজন্য শিশুকাল থেকেই সন্তানকে ধৈর্য ধারণ করতে শেখানোর দায়িত্ব বাবা-মায়ের। শিশুর মধ্যে সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে হবে যাতে সে ভবিষ্যতে অন্যায় আচরণ বা ঝোঁকের বশে কোন কাজ না করে ফেলে। এজন্য পিতা-মাতার যা করা উচিৎ তা হল :

) অপেক্ষা করতে শেখান

সন্তান কোন জিনিস চাওয়া মাত্রই তাকে তা দিয়ে দেবেন না। তাকে অপেক্ষা করতে বলুন এবং সঠিক সময়ে তা দিন। এর ফলে সে ধৈর্যশীল হতে শিখবে।

খ) তার অনুভূতির কথা জানুন

দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার ফলে শিশুর মধ্যে হতাশার জন্ম নিতে পারে যা তারা প্রকাশ করতে পারেনা। কিন্তু আপনি তার আবেগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাতে পারেন। সে ধৈর্যধারণ করলে তার প্রশংসা করুন, তাকে বলুন, “আমি জানি এতক্ষণ অপেক্ষা করে থাকাটা খুব কঠিন, তুমি খুবই চমৎকার কাজ করেছো, তুমি ধৈর্যশীল!” আপনি যখন তার কাজকে মূল্যায়ন করবেন তখন সে আরো বেশি ধৈর্যশীল হওয়ার চেষ্টা করবে।

গ) ধৈর্য বৃদ্ধি করে এমন কাজে যুক্ত করুন

আপনার সন্তানকে ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য তাকে এমন কাজ করতে শেখান যেখানে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায়না, যেমন – ধাঁধার সমাধান করতে শেখান, বাগান করতে বা গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করুন।

৪। সহানুভূতিশীল হতে শেখান

অন্যদের প্রতি সহমর্মী হতে শেখান আপনার সন্তানকে। ছোটবেলা থেকেই এই শিক্ষাটি দেয়া উচিৎ। সে যদি নিজের খেলনা অন্যদের ধরতে না দেয় তাহলে তাকে বলুন যে, “তোমাকে যদি তোমার বন্ধু তার খেলনা দিয়ে খেলতে না দেয় তাহলে তোমার  কেমন লাগবে?” এতে সে নিজের ও অন্যের অনুভূতির বিষয়ে বুঝতে পারবে এবং তার মধ্যে সামাজিকতা গড়ে উঠবে।

পরিশিষ্ট

এই বিষয়গুলো এক বারেই শিশুকে শিখিয়ে ফেলা সম্ভব নয়ধৈর্য ধরে আস্তে আস্তে শিশুর মধ্যে এই বিষয়গুলো জাগ্রত করতে হবে। এক সময় দেখবেন আপনি সফল হয়েছেন। তখন আপনিও আপনার সন্তানের আচরণ নিয়ে গর্ব করতে পারবেন

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০

 

           

 

অনুসন্ধান এর বিষয়

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল