এই ১৪টি ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট মেয়েরা জার্নি করতে পারবেন না

এই ১৪টি ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট মেয়েরা জার্নি করতে পারবেন না

এই ১৪টি ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট মেয়েরা জার্নি করতে পারবেন না

একজন গর্ভবতী নারীর তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ যত্নবান হওয়া একান্ত কর্তব্য। ভ্রমণ অনেকের জন্য আনন্দদায়ক হলেও সকল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তা সুখকর নাও হতে পারে।অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরই অভিমত, গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।গর্ভবতী হবার পর প্রথম তিন মাস সময়টা খুব ঝুঁকিপূর্ণ । এসময়ে ভ্রমণ করলে গর্ভপাত ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

যেসব ক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী নারীর জন্য জার্নি নিরাপদ নয়:     

 (১) গর্ভপাতের কোন পূর্ব ইতিহাস থাকলে:

যেসব গর্ভবতী নারীর পূর্বে কোন গর্ভপাতের ইতিহাস থাকলে বা বার বার গর্ভের বাচ্চা মরে যাওয়া বা মৃত বাচ্চা প্রসব করার কোনো অতীত ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকগণ সেসব মহিলাদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেন। কারণ ভ্রমণের কারণে অনেক সময় গর্ভপাত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

(২) গর্ভে যদি একাধিক সন্তান থাকে

যমজ সন্তান হওয়া স্বাভাবিক একটি ঘটনা হলেও যমজ সন্তান ধারন করলে গর্ভবতী মাকে একটু বাড়তি সাবধানতা গ্রহন করতে হয়। এসকল মায়ের এনিমিয়া, এক্লাম্পসিয়া, এন্টিপারটাম হেমোরেজ, ম্যাল প্রেজেন্টেশন, প্রিটার্ম লেবার সহ নানাবিধ সমস্যা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। তাই গর্ভে এক বা একাধিক সন্তান থাকলে কোন ধরনের জার্নি করা নিরাপদ নয়।

(৩) অপরিণত শিশু জন্মদানের ইতহাস:

যেসব গর্ভবতী নারী প্রিম্যাচুয়েরড বেবির জন্ম দেয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় জার্নি করা ঝুঁকিপূর্ণ। একটা অপরিণত শিশুর জন্মের পরবর্তীতেও একই ধরনের শিশু জন্মের ঝুঁকি দেখা দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলারা পূর্বে  অপরিণত শিশুর জন্ম দিয়েছেন, তাদের আবারো একই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব নারীদের ক্ষেত্রে ভ্রমণ বিপদজনক।

(৪) বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে:

যেসব মহিলারা বেশি বয়সে গর্ভধারণ করেন তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি।বয়সের কারনে মহিলাদের নানারকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,জরায়ুর সমস্যা, ইত্যাদি দেখা দেয়।তাই বেশি বয়সে গর্ভধারণকারী মহিলাদের ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই উচিত।

(৫) যেসব গর্ভবতী মহিলার উচ্চ রক্তচাপ থাকে

গর্ভাবস্থায় কারো কারো উচ্চ রক্তচাপ হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পরে এ সমস্যা দেখা দেয়। এ ধরনের উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় প্রেগনেন্সি ইনডিউজ হাইপারটেনশন। উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বেশী থাকলে গর্ভবতী নারীর দেহে নানা সমস্যা তৈরি হয়। এর ফলে গর্ভধারণে ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এই অবস্থায় সেসব গর্ভবতী নারীদের ভ্রমণ করা উচিত নয়।

(৬) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস:

গর্ভাবস্থায় অনেকেরই ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়। আবার অনেকে গর্ভধারণের পূর্বেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যেটাই হোক না কেন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা মা ও শিশু উভয়ের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ওজনের মায়ের শেষের দিকে ১০ থেকে ১১ কেজি ওজন বাড়ে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে ওজন আরো বেড়ে যাবে। বাচ্চাও বেশি বড় হয়ে যাবে। যেহেতু একটি ভারী শিশুকে মা বহন করছে তাই পানি ভেঙে যেতে পারে। যদি কোনো কারণে পানি ভেঙে যায় তবে শিশুর ক্ষতি হওয়ার একটি আশঙ্কা থাকে। একারণে এসময়টা জার্নি একদমই নিরাপদ নয়।

(৭) গর্ভাবস্থায় এক্লাম্পশিয়ার ইতিহাস

গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের-ই খিচুনি হতে দেখা যায়, বিশেষ করে প্রসবের আগে এমন খিচুনি উঠার কারণে অনেক মা এবং শিশুকেও অঘোরে প্রাণ হারাতে হয়। এক্লাম্পসিয়া গর্ভবতী মায়ের এমনই একটি খিচুনি জাতীয় রোগ। কোন গর্ভবতী নারীর গর্ভাবস্থায় এক্লাম্পশিয়ার পূর্ব ইতিহাস যদি থাকে সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররা জার্নি করতে নিরুৎসাহিত করেন।

(৮) গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লাম্পশিয়ার

গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর প্রিএক্লাম্পসিয়া রোগটি দেখা দেয়। প্রিএক্লাম্পসিয়া  হলে ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ তো বেড়ে যায়-ই সেই সাথে পায়ে পানি আসতে শুরু করে, অস্বাভাবিক হারে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। সাথে মাথা ব্যথা করা, ঘুম না আসা, উপরের পেটে ব্যথা করা, বমি করা বা বমি বমি ভাব লাগা, প্রসাবের পরিমাণ কমে আসা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। এ অবস্থায় ভ্রমণ কোন অবস্থাতেই নিরাপদ নয়।

 

(৯) হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম  

অনেক গর্ভবতী মহিলাকে দেখা যায় গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি করতে। এধরনের উপসর্গকে বলে হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম।হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম স্বল্পমাত্রার বা তীব্র মাত্রার হতে পারে। এক্ষেত্রে মায়ের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি হতে দেখা যায় । এধরনের উপসর্গ থাকলে ভ্রমণ করা একদমই উপযুক্ত নয়।

(১০) প্ল্যাসেন্টাল অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে:

গর্ভাবস্থায় কোন নারীর গর্ভের ফুল বা প্লাসেন্টা যদি জরায়ুর একদম নীচের দিকে বা জরায়ু মুখে লেগে থাকে তাহলে অনেক সময় প্রসবের রাস্তায় রক্ত যেতে পারে। এর নামই প্লাসেন্টা প্রিভিয়া। এমনটি হলে হঠাৎ করেই রক্তপাত শুরু হয়। এক্ষেত্রে রক্তপাতের সময় কোনো ব্যথা অনুভুত হয় না। প্লাসেন্টা প্রেভিয়া হলে বাচ্চার মাথা সাধারণত সঠিক অবস্থানে থাকেনা, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মাথা উপরের দিকে বা আড়াআড়ি থাকতে দেখা যায়। রোগী অনেক সময়ই রক্তশূন্যতায় ভোগে এবং অনেক সময় শকেও চলে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা জার্নি করতে নিষেধ করেন।

(১১) জরায়ুতে  যদি কোন সমস্যা থাকে :

গর্ভাবস্থায় কোন গর্ভবতী নারীর জরায়ুতে যদি কোন সমস্যা থাকে, যেমন: জরায়ুর ভিতরে সন্তানে নড়াচড়া অনুভব করতে না পারা, জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হয়ে এর আশে-পাশের লিগামেন্টে টান পড়ার জন্য তলপেট ও কুঁচকিতে ব্যথা হওয়া,জরায়ুর মুখের কোনো সমস্যার জন্যও গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে সেসব গর্ভবতী নারীর ভ্রমণ করা উপযুক্ত নয়।

(১২) এব্রাপ্সিওপ্লাসেন্টির সমস্যা থাকলে

প্লাসেন্টা বা গর্ভের ফুলটি যদি জরায়ুর গা থেকে ছুটে আসে বা আলগা হয়ে যায় তাহলে জরায়ু মুখ বা যোনিপথ দিয়ে যে রক্তপাত হয় তাকে এব্রাপ্সিওপ্লাসেন্টি বলা হয়। গর্ভে একাধিক সন্তান থাকলে, মায়ের বয়স বেশী হলে, এক্লাম্পসিয়া থাকলে, তলপেটে আঘাত পেলে বা পলিহাইড্রমনিয়স জাতীয় সমস্যা থাকলে এমন সমস্যা হবার প্রবণতা বেশী থাকে।  এ ধরনের সমস্যায় ভ্রমণে ঝুঁকি নেয়া উচিত নয়।

(১৩) একটোপিক প্রেগনেন্সি :

অনেক সময় জরায়ু ছাড়া পেটের ভেতরে অন্য কোনো জায়গায় (যেমন টিউব, ডিম্বাশয়) ভ্রুণ স্থাপিত হতে পারে। এ অবস্থাকে বলে একটোপিক প্রেগনেন্সি। মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পেট ব্যথার সঙ্গে অল্প রক্তপাত এর প্রধান লক্ষণ। এ লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এবং ভ্রমণ করা যাবেনা।

(১৪) রক্তক্ষরণের ইতিহাস:

নানা কারণে গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। পুরো গর্ভাবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করলে প্রথম তিন মাস, মাঝের তিন মাস ও শেষের তিন মাসের যে কোনো সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেসব গর্ভবতী মহিলার পূর্বে গর্ভধারণে এ সমস্যা ছিল  তাদের জন্য ভ্রমণ করা একদমই উচিত নয়।

পরিশিষ্ট:

অনাগত সন্তানের মঙ্গলের জন্য নিজেকে সব ধরণের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই গর্ভাবস্থায় ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিজে না নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন  হউন।

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে। আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০