সাবধানঃ আপনার বাচ্চাও এই ১০টি দুর্ঘটনায় আঘাত পেতে পারে।(প্রতিরোধের টিপস সহ)

আপদ-বিপদের দৈত্যের গল্পটা জানেন তো? এক দেশে ছিল এক দৈত্য। যার ছিল বাচ্চাদের বিপদে ফেলার নানা রকম কৌশল। কখনো সেটা পানি দিয়ে কখনো আগুন বা কখনো বিছানা থেকে ফেলে দিয়ে। এই দৈত্যের সাথেই যুদ্ধ করে বাচ্চাদের নিরাপদে রাখতে হয় মা-বাবাদেরকে। 


একটি শিশুকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখার ব্যাপার তো আছেই কিন্তু ঘরের ভিতরেই মাত্র দুই মিনিটেই ঘটে যেতে পারে ভয়ানক কোনো দুর্ঘটনাহয়তো কলিংবেল বেজে উঠেছে, আপনার সোনামণি হয়তো ড্রেসিং টেবিলের সামনে খেলছে। আপনি দরজায় কে দেখতে চলে গেলেন, এক মিনিট পর এসেই দেখলেন সে তার বেবি অয়েল খেয়ে ফেলেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই ঘরের মধ্যে যেন আপনার ছোট্ট পাখিটা আপদ-বিপদ নামক দৈত্যের হাতে না পড়ে সে জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হাতের কাছে এমন কিছু রাখা যাবে না যা থেকে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। চলুন দেখে নিই ঘরে ছোট শিশুর জন্য কি কি সাবধানতা অবলম্বণ করা উচিত।

শিশুরা প্রথম প্রথম যা দেখে তাতেই বিস্ময় কাজ করে তাদের। আগুন দেখার পর শিশুরা চায় সেটা স্পর্শ করে দেখতে। এতে হাত লাগলে হাত পুড়ে যাবে তা তো আর তারা জানে না! জ্বলজ্বল করে জ্বলছে এটা দেখেই সে আগুন ধরার জন্য আকুল হয়ে যায়। রান্না ঘরের চুলার কাছে যেন শিশু না যেতে পারে সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। এছাড়া যেকোনো ধরণের ম্যাচ বা লাইটারও উঁচু স্থানে রাখতে হবে যেন সে স্পর্শ করতে না পারে।
সবার ঘরেই কিছু না কিছু ওষুধ রাখতে হয়। এই মাথা ব্যথাটা এই জ্বরটা এসব এর চিকিৎসায় কে আর ডাক্তারবাড়ি যায়। প্যারাসিটামল, অ্যামোডিস ধরণের ওষুধ আমাদের সবার বাসাতেই থাকে। আর কারো যদি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হয় কোনো রোগের কারনে তাহলে তো কথাই নেই। অনেক ওষুধ রাখতে হয় তাহলে ঘরে। এই ওষুধ যদি শিশুর নাগালের মধ্যে থাকে তাহলে ঘটতে পারে অনেক বড় দূর্ঘটনা। তাই ওষুধ যেখানে সেখানে না রেখে একটা বক্সে রাখুন। সেই বক্সটিও কখনো শিশুর নাগালের মধ্যে রাখবেন না। আলমারির উপরে বা ওয়ার্ডরোবের উপরে রাখতে পারেন। বা তালা আছে এমন কোনো ড্রয়ারে রেখে তালা দিয়ে রাখতে পারেন। অনেক ওষুধ আছে যেগুলো হয়তো বাচ্চারা খেলে ক্ষতি হবে না, যেমন সিভিট জাতীয় ওষুধ। কিন্তু সেটাও বেশী খেয়ে ফেললে শরীরের ক্ষতি হয়। তাই ওষুধ সব সময় শিশুর চোখের আড়ালে রাখা, নাগালের বাইরে রাখা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
একটি শিশুর হাসিমুখের চেয়ে দামী কিছুই হতে পারে না মা-বাবার কাছে। সেই হাসিটা অক্ষুন্ন রাখতে এমন কিছু সাবধানতা তো অবলম্বন করতেই হবে আপনাদের। এক মুহুর্তের একটা ভুলে আপদ-বিপদ নামের দৈত্যের খপ্পড়ে পড়ে যেতে পারে আপনার শিশু। দায়িত্বটা কিন্তু পুরোটাই আপনার। আগে থেকেই এই সাবধানতাগুলো অবলম্বন করলে ঘরে শিশুটিকে ছেড়ে দিয়েও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন। শিশুটিও ঘরের মাঝে হেসে খেলে সময় কাটাতে পারবে। প্রতিটা ঘরই হোক শিশুবান্ধব।

 

বিদ্যুৎ

ঘরে ছোট শিশু থাকলে অবশ্যই বিদ্যুতের লাইন নিয়ে সচেতন হতে হবে। শক করে এমন তারে একটি মাত্র মাত্র স্পর্শ সারা জীবনের কান্নার কারণ হতে পারে। নড়বড়ে সুইচ বোর্ড, ভাঙা সুইচ, বিদ্যুতের ছেড়া তার এসব অবশ্যই সারাই করে ফেলতে হবে। এ থেকে বড়দেরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, আর শিশুদের তো সেই জ্ঞান নেই যে বিদ্যুতের স্পর্শে কী ঘটে যেতে পারে! মাল্টিপ্লাগ কখনই শিশুর নাগালের মধ্যে রাখবেন না। লাইন অন থাকলে মাল্টিপ্লাগের লালবাতি জ্বলতে দেখলে পাগলের মতো সেদিকে ছুটতে থাকে বাচ্চারা একটু হাটা শিখলেই। বাসার ফ্রিজ টেলিভিশনের লাইন যেন বাচ্চার নাগালে না থালে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এই ইলেকট্রিক সামগ্রী চালানোর জন্য কোনো কোনো বাসায় প্লাগ নীচে দেয়া থাকে। শিশু যেন প্লাগের কাছে যেন না যেতে পারে সেজন্য তার যাওয়ার পথে ব্লক দিতে হবে। একটা কাঠের চেয়ার বা টুল দিয়ে পথটা আটকে দিলে শিশু আর সেই প্লাগের কাছে যেতে পারবে না।

 

ধারালো জিনিস

ঘরের কাজে ধারালো বহু কিছুই আমরা ব্যবহার করি, ব্লেড, কেচি, পেপার কাটার, বটি, ছুড়ি এ ধরণের জিনিসগুলো শিশুর আশেপাশে রাখা যাবে না। ব্লেড কেচি, পেপার কাটার এসব ড্রয়ারে তালা দিয়ে রাখুন। রান্নাঘরের ধারালো জিনিসপত্র উচু তাঁকে রাখতে পারেন যেন শিশুটি হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে সেগুলো না ধরতে পারে। শিশুরা তো ধার আছে কি নাই বুঝতে পারে না, এটা বোঝে না কীভাবে ধারালো জিনিস ধরতে হয়।

  

আগুন

 

পানি

পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু মাঝে মাঝে এই পানিই মৃত্যুর কারন হতে পারে। ঘরের ছোট্ট শিশুর জন্য তাই পানিকে একটু ভয়ও পেতে হবে। পুকুর বা নদীতে পড়ে গেলেই কেউ সাঁতার না জানার কারনে মারা যায় ব্যাপারটা শুধু এমন নয়। বড় বাল্টি বা টাব ভর্তি পানিতে কোনোভাবে শিশু যদি পড়ে যায় তাহলে সেটা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। শিশুরা পানি নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করে। বাথরুমে গিয়ে অহেতুক পানি ধরাও তাদের কাছে লোভনীয় খেলা। একটু অসাবধানতা করুণ পরিণতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে রাখুন সব সময়, যেন শিশুটি চাইলেই বাথরুমে ঢুকে পানি ধরতে না পারে। প্রয়োজন না পড়লে টাব বা বালতি ভর্তি করে রাখারও দরকার নেই।

 

ওষুধ


 

গরম জিনিস

গরম জিনিস সেটা গরম সুপের বাটিই হোক আর গরম চা। বাচ্চার গায়ে পড়লে ফোস্কা পড়ে খুব খারাপ অবস্থা হয়ে যেতে পারে চোখের পলকেই। অনেক দুর্ঘটনাই এমন ঘটে প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে শুধুমাত্র গরম জিনিস থেকে। সেটা গরম পানিও হতে পারে কিন্তু। বাচ্চাদের গোসল করানোর গরম পানির পাতিলে ধরে বা পানি বাচ্চার গায়ে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে এমন ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনি। বাচ্চার গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার করতে হলে ঠাণ্ডা পানিতে গরম পানি মিশিয়ে তবেই তাঁকে গোসলের জায়গায় নিন। গরম পানির আশেপাশে যেন বাচ্চা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন সব সময়

প্রসাধনী ও পরিষ্কারক

নিত্য ব্যবহার্য প্রসাধনী বা পরিষ্কারক বাচ্চার নাগালের বাইরে রাখুন। কারন অধিকাংশ কসমেটিকস-এই রয়েছে রাসায়নিক উপাদান। বাচ্চাদের সব কিছু মুখে দেয়ার অভ্যাস থাকে একটা বয়সে। কোনো কিছু মুখে দিয়ে দিলে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে! লেখার সূচনাতেই লিখেছিলাম বেবি অয়েলের কথা। কিছু কিছু বেবী অয়েলে তরল হাইড্রো কার্বন ব্যবহার করা হয়। যা একটি শিশু খেয়ে ফেললে তার লাংস ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। স্যাভলন ডেটল বা হারপিক ধরণের এন্টি সেপ্টিক বা ঘর পরিষ্কারের জিনিসগুলো যেখানে সেখানে রাখবেন না। যার যে কাজ শেষ হয়ে গেলে উঁচুস্থানে বা লকারে রাখুন।

 

দরজা লাগানোর পদ্ধতি  

ভিতর থেকে ছিটকিনি আটকে দিয়ে বাচ্চারা আটকে গেছে এমন প্রায়ই আমরা শুনি। বাচ্চারা একটা বয়সে ছিটকিনি লাগাতে পারলেও খুলতে পারে না। এটা শিখতে আরো কিছু সময় লাগে তাদেরসেই সময়ই এমন ঘটনা ঘটে। তখন সে ভয় পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। দরজা ভাঙতে হয়। বাচ্চাটি ঘরের ভিতরে থাকা বিপদজনক কিছু ধরলে ব্যথাও পেটে পারে। দরজা নিয়ে যেন এমন না হয় সেজন্য যাদের বাচ্চা আছে তারা একটা কাজ করতে পারেন— বাসার ভিতরের প্রতিটি দরজার ছিটকিনির হুকে একটা দড়ি বেঁধে ফেলুন। যেন চাইলেই সেটা বাচ্চা না লাগাতে পারে। আপনাদের প্রয়োজনে সে দড়ি খুলে আবার ছিটকিনি লাগাতে পারবেন। আর দরজা যদি অটো লকের হয় তাহলে সব সময় চাবিগুলো এমন জায়গায় রাখুন যেখানে যাওয়ার জন্য কোনো দরজা পেরুতে হয় না। হতে পারে সেটা ডাইনিং রুম। সাধারণত ডাইনিং থেকে সব ঘরেই যাতায়াত করা যায়।

 

মশা নিধনের পদ্ধতি

মশার কামড় থকে শিশুকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। মশার কামড় থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এ ধরণের ভয়ানক রোগ হতে পারে। এ জন্য মশারিই সবচেয়ে ভালো। কিন্তু অনেকেই স্প্রে বা কয়েল ব্যবহার করেন। স্প্রের বোতল কখনই বিছানায় ফেলে রাখবেন না। স্প্রে করা হয়ে গেলে বোতলটি শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন। কয়েল জ্বালিয়ে এমন জায়গায় রাখবেন না যেখানে হাটতে পারে শিশুর পা পড়তে পারে। অসাবধানতায় পায়ে কয়েল লেগে পা পুড়ে যেতে পারে। এমন জায়গাতে রাখা যাবে না যেখানে হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে কয়েল খেয়ে ফেলতে পারে শিশু। এগুলোতে থাকে বিষ যা মশা মারে কিন্তু মানুষের শরীরের জন্যও এগুলো খারাপ, এটা মনে রাখতে হবে।

 

খেলার জিনিস

খেলার জিনিস থেকেও একটি শিশু বিপদে পড়তে পারে। অনেক খেলনার গায়ে লেখা থাকে কোন বয়সের উপযোগী সেসব খেলনা। সেই নির্দেশনা মেনে চলুন। ৬ মাসের শিশুকে শক্ত কোনো খেলনা দিলে সে নিজেই সেটা দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করতে পারে, তাই সাবধান। খেলনা নির্বাচন বুঝেশুনে করুন। বেলুন দিয়ে খেলা করা বাচ্চাদের খুব পছন্দ কিন্তু বেলুন ফেটে গেলে সেটা যদি বাচ্চা চিবোয় বা গিলে ফেলে তার থেকেও চরম একটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গলায় আটকে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে শিশুর নিঃশ্বাস। তাই খেলনা দেয়ার সময় ভাবুন, কোন খেলনাটি দেবেন। আর খেলার সময় আপনার খুবই নজর রাখতে হবে বাচ্চাটির দিকে।  

 

পরিশিষ্ট

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০