বাচ্চাদের জাঙ্কফুড ছাড়িয়ে ভাল খাবার অভ্যাস গড়ে তোলার টিপস

দোকানে রংবেরঙের প্যাকেটে কত রকম খাবার যে পাওয়া যায় বাচ্চাদের জন্যসেইসাথে টেলিভিশনে চলে এসবের বিজ্ঞাপণ বাচ্চারা খুব সহজেই প্রভাবিত হয় এসব খাবার খাওয়ার জন্য খাবারগুলো এমনভাবেই প্রসেস করা হয় যা খেতেও মুখরোচকদোকান থেকে কিনে নিয়ে প্যাকেট খুলেই খাওয়া যায় তাই এই খাবারগুলো খাওয়াও খুব সহজ কিন্তু এই জাঙ্কফুডগুলো বাচ্চাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কারন এইসব খাবারে অত্যধিক চিনি এবং চর্বি থাকে যা বাচ্চাদের শরীরে প্রবেশ করে অব্যবহৃত থেকে যায় 

জাঙ্কফুডে চিনি বা চর্বির আধিক্যর কারণে বাচ্চাদের ভিতরে ক্ষুদামন্দাও তৈরি হয়
 যখন তখন জাঙ্কফুড খেলে প্রতিদিনকার খাওয়ার অভ্যাস নষ্ট হয়ে যায় অনেক মা-বাবা ডাক্তারের কাছে যান এই অভিযোগ নিয়ে যে তাদের বাচ্চা খায় না কিন্তু খোজ নিলেই বুঝতে পারা যায় যেচিপস বা চকলেট এমন কোনো খাবার খেয়ে ক্ষুদা নষ্ট হয়ে যায় বলেই শিশুটি খাচ্ছে না জাঙ্কফুড খাওয়ার কারণে শিশুর শারীরিকমানসিক এবং আবেগিয় গঠন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং বড় হওয়ার পর তার ডায়াবেটিসহার্ট ডিজিজহাড়ের ক্ষয়রোগ ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবণা বেড়ে যায় বহু গুণে তাই প্যারেন্টিং এর একটা বড় ধাপ হলো বাচ্চাদের জাঙ্কফুড থেকে দূরে রাখা সত্যি বলতে প্যারেন্টিং বা বাচ্চা পালা কিন্তু সহজ কোনো কাজ নয় আর যখন এ কথা কোনো প্যারেন্ট এর মনে হবেতখনই বুঝতে পারবেন আপনি ঠিক প্যারেন্টিং করছেন!

জাঙ্কফুডের অভ্যাস বাচ্চাদের যেন না হয় এবং হয়ে গিয়ে থাকলে সেটা থেকে কীভাবে তাকে বের করা যায় সেটা পরিকল্পনা মাফিক করা ছাড়া উপায় নেই বাচ্চাকে ধমক দিয়ে বা তার সাথে হুট করে একদিন রাগারাগি করে তার পছন্দের খাবার দেয়া বন্ধ করে দেয়া মোটেই ভালো কোনো কাজ হবে না এতে সে ভালো মন্দের ফারাক বুঝতে পারবে না এবং তার মনেও রাগ জমা হবে কেন সে যা চাচ্ছে তা পাচ্ছে না তাই অন্য অনেক বিষয়ের মতো এক্ষেত্রেও বাচ্চাকে এমনভাবে ভালো অভ্যাস করিয়ে দিতে হবে যেন সে নিজে থেকেই সেটা মেনে নিতে পারে বাচ্চাদের জাঙ্কফুডের অভ্যাস ছাড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রথমে আপনাকেই মনস্থির করতে হবে যে আপনি এটা করতে যাচ্ছেন এবং এটা আপনি ম্যানেজ করতে পারবেন এরপর কিছু কাজ করতে পারলে অবশ্যই বাচ্চার স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস গড়ে উঠবে

 

বাচ্চার সাথে আলোচনা করা 
জাঙ্কফুড নিয়ে হোক আর বাচ্চার ভালোর জন্য অন্য কোনো বিষয়ই হোক তা নিয়ে বাচ্চার সাথে গঠনমূলক আলোচনা করতে হবে। জাঙ্কফুড যে আসলে রেগুলার খাওয়ার কোনো খাদ্য না এটা তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এগুলো বেশী খেলে তার শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে তা খোলাখুলি আলোচনা করে নেয়াই ভালো। প্রতিদিনের খাবারের প্ল্যান করে তা একটি কাগজে লিখে খাবার টেবিলের পাশের দেয়ালে লাগিয়ে দিতে পারেন। যেন বাচ্চারা বুঝতে পারে তারা কী খেতে পারবে কী পারবে না! অনেক বাবা-মা আবার বাচ্চাদের কোনো ভালো কাজের পুরষ্কার হিসাবে জাঙ্কফুড অফার করেন। এটাও ঠিক না। তুমি এটা করলে আমি তোমাকে কটা চিপস খেতে দেব এমন ডিল বাচ্চাদেরকে ভুল ম্যাসেজ দেয়। সে ভাবতে পারে ঐ খাবারগুলোই মহা মূল্যবান। বাচ্চারাও এভাবে চাইতে পারে, আমি এটা করব যদি আমাকে চিপস দাও। এই ডিল যে পসিবল না সেটা তাকে কথা বলে বুঝিয়ে দিন।

 

ঘরে জাঙ্কফুড না রাখা

বাচ্চাদের শুধু বুঝিয়েই তো আর কাজ হবে না। ঘরে যদি জাঙ্কফুড কিনে নিয়ে এসে রাখা হয় তাহলে তারা সেটা খাবেই। সবচেয়ে ভালো এই খাবারগুলো একেবারেই এভয়েড করা। নিজেদেরও এই খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া বাসায় এসব খাবার না থাকলেও, বা নিজেরা না কিনলেও এসব জাঙ্কফুড খাওয়ার অনেক সুযোগ হয় বাচ্চাদের। বিশেষ করে কোথাও বেড়াতে গেলে বা স্কুলে বাচ্চারা এসব খাওয়ার ব্যনা করলে অনেক সময় সেটা না করাটা অসম্ভব হয়ে যায়। তাই ঘরে যেন কোনোভাবেই জাঙ্কফুড যেমন, চিপস, কুকিস, ক্যান্ডি, চকলেট বার এসব ঘরে ঢুকতে না পারে। এ খাবারগুলো একেবারেই নিষিদ্ধ করে ফেলার প্রয়োজন নেই তবে ঘরের খাবার কেনার সময় বাজার করার সময় এসব কেনা যাবে না। এবং ঘরে এসব স্টক করা যাবে না।


ঘরে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা

ঘরে জাঙ্কফুড না রাখার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর খাবারের মজুদ থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে। ফ্রিজ খুললে বাচ্চারা যেন ভালো কোনো খাবার পায়। বা কিচেনের শুকনো খাবারের পটেও যেন ভালো কিছু থাকে। স্বাস্থ্যকর খাবার মানেই দামী কোনো খাবার না। ঘরে রাখতে পারেন বাদাম, খেজুর, হাতে বানানো মজার কোনো আচার, চিঁড়া ভাজা ইত্যাদি। চাল ভাজা গুড়ো করে নারকেল কোরা আর গুঁড় মিশিয়ে সুস্বাদু নাশতাও বানিয়ে রাখতে পারেন ঘরে। যেন এ খাবারগুলো বাচ্চার হালকা খিদে মেটাতে পারে। ফ্রিজে রাখতে পারেন ফলমূল। রাখতে পারেন টকদই, যা দিয়ে সহজেই লাচ্ছি বা লাবাং বানিয়ে দেয়া যেতে পারে। শরীরের জন্য খুবই ভালো এ তরলগুলো। লেবুর শরবত বানিয়ে রাখতে পারেন বোতলে। মন চাইলেই যেন বের করে খেতে পারে বাচ্চারা। বাচ্চারা কিছু খেতে চাইলে ফল কেটে সাজিয়ে পরিবেশ করলে ওরা খেতে উৎসাহী হবে। এমনকি শশা গাজর সুন্দর করে কেটে দিলেও বাচ্চারা খেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আর বিকালে নাশতা বানানোর সময় থাকলে নিজেরাই আলুর চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানিয়ে দিতে পারেন। আরো নানা রকম সুস্বাদু স্বাস্থ্যকর নাশতার রেসিপি শিখে নিয়ে সেগুলো বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। জাঙ্কফুডের কাছে যাওয়ার ইচ্ছাই হবে না বাচ্চার! 

 

টেলিভিশন দেখা কমানো

অনেকে ভাবতে পারেন এটা অপ্রাসঙ্গিক, ইন্তু এটা সত্যি যে বাচ্চারা বেশীক্ষণ টেলিভিশন দেখলে সে জাঙ্কফুডের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এছাড়া টেলিভিশন বেশী সময় ধরে দেখলে তার শারীরিক কাজ কমে যায়, ফলে সে ক্ষুদামন্দায় ভোগে। তখন খেতে চাইলে এসব মুখরোচক প্যাকেটজাত খাবারই সে খেতে চায়। টেলিভিশনে এসব জাঙ্কফুডের বিজ্ঞাপনগুলোও অভিনব হয় বাচ্চারা সহজেই প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে এসব খাওয়ার জন্য। বাচ্চার টেলিভিশন দেখা কন্ট্রোল করতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত টেলিভিশন বাচ্চাদের মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এত ক্ষতির দিক যেহেতু আছে একবার কন্টোল করেই দেখুন না!

 

একসঙ্গে আনন্দ করে খাবার খাওয়া

খাবার খাওয়া যে আমাদের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন চর্চার ভিতরেও পড়ে এটা বাচ্চাদের শেখাতে হবে। ঈদে-পার্বণে একসঙ্গে উতসব করে আমরা বিভিন্ন খাবার খাই সেটার আনন্দের মধ্য দিয়ে বাচ্চাদের বুঝিয়ে দিতে হবে এখানে কোনটা মূল্যবান। টেলিভিশনের সামনে বসে এক গাদা চিকেন নাগেট খাওয়ার চেয়ে সবাই মিলে একসঙ্গে মুড়ি মাখা খাওয়ার ভিতরেও একটা আনন্দ আছে জীবনের এ সহজ আনন্দের স্বাদ নিতে বাচ্চাকে উৎসাহ দিতে হবে। নিজেদের ভিতরেও সেই চর্চাটা রাখতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে পরিচয় করি দেয়াটাও তাকে জাঙ্কফুড বা প্যাকেটজাত খাবারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

 

বাচ্চারা যা দেখে তাই শেখে। নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন করে তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে অবশ্যই সে ভালো কিছু শিখবে। জাঙ্কফুড শরীরের জন্য ক্ষতিকর, সেই ক্ষতিকর খাবার মহা সমারোহে বাচ্চাদের হাতে তুলে দেয়ার মাঝে আনন্দ পাওয়াটা ঠিক না। স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে বাচ্চারা জাঙ্কফুড খাচ্ছে এটা কাম্য নয়। চেষ্টা করলে অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব। চেষ্টাটা সদিচ্ছার সাথে করেই দেখুন না!