বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মানবজাতির স্বাভাবিক প্রজননের হার অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে অনেক কম। জনসংখ্যা বিসেফারণের দেশে বাস করে এ কথা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি এটিই যে ১০০ জন দম্পতি যাদের কোথাও কোনো সমস্যা নেই তারা তাদের প্রজনন সময় একত্রে বসবাস করলেও মাসে গর্ভসঞ্চার হবে মাত্র ২০ জনেরস্ত্রীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ হার আরো কমতে থাকে। সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে স্বামী-স্ত্রীর কোথাও না কোথাও সমস্যা বিদ্যমান থাকা স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা করে প্রজননের হার স্বাভাবিক হারের চেয়ে কম বই বেশি করা দুরূহ ব্যাপার। আর সে জন্যই বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা হলো ধাপে ধাপে চিকিৎসা। বিভিন্ন ধাপের কোনো এক ধাপে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। এই ধাপে ধাপে চিকিৎসার জন্যই চিকিৎসার সময় দীর্ঘায়িত হয়। অন্য কোনো অসুস্থতার মতো চট করে এটির সমাধান দেখা যায় না। তবে অবশ্যই স্ত্রীর বয়সের দিকে এবং বন্ধ্যাত্বের কারণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বন্ধ্যাত্বের স্বপ্ন পূরণে টেস্টটিউব বেবি:


বর্তমানে অনেক দম্পতি টেস্টটিউব বেবির মাধ্যমে সন্তান গ্রহণ করছেন। টেস্টটিউব পদ্ধতিতে দুটি ভাগ আছে। একটি আইভিএফ (IVF), অন্যটি ইকসি (ICSI)আইভিএফে স্বামী-স্ত্রীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুকে প্রকৃতিগত পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে একটি গ্লাসের পাত্রে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ পাত্রটি একটি বিশেষ ইনকিউবেটরে রাখা হয় এবং সেখানেই নিষেক হয়ে ভ্রূণের সৃষ্টি হয়। এ পদ্ধতিতে একাধিক ডিম্বাণু তৈরি করা সম্ভব বলে একাধিক ভ্রূণ তৈরি হয়ে থাকে। তা থেকে সবচেয়ে ভালো মানসম্পন্ন তিনটি ভ্রূণকে স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করা হয়, যা পরে স্বাভাবিক গর্ভসঞ্চালনের মতোই বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু হয়। পদ্ধতিটির প্রসারিত নাম ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন। ভিট্রো একটি ল্যাটিন শব্দ যার ইংরেজি পরিভাষা গ্লাস। এই গ্লাসের পাত্রে নিষেক হয় বলেই এর নামকরণ হয়েছে টেস্টটিউব বেবি। ইকসি টেস্টটিউব পদ্ধতির আর একটি ভাগ। এ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু সংগ্রহের পর একটি ডিম্বাণুর ভেতরে একটি শুক্রাণুকে ইনজেক্ট করে দেয়া হয়।

আইভিএফে একটি পাত্রে একটি ডিম্বাণুর সাথে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ শুক্রাণু ছেড়ে দেয়া হয়। তা থেকে একটি শুক্রাণু নিজ ক্ষমতাবলে ডিম্বাণুর ভেতরে প্রবেশ করে। যখন শুক্রাণুর পরিমাণ অতি মাত্রায় কম থাকে কিংবা মোটেই থাকে না, তখন ইকসি করা হয়। বীর্যে শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকলে অণ্ডকোষ থেকে ছোট্ট অপারেশনের মাধ্যমে শুক্রাণু পরিপক্ব কিংবা অপরিপক্ব পর্যায়ে বের করে একটি বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ডিম্বাণুর ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। পরে ইনকিউবেটরে রাখা হয় এবং বাকি পর্যায় আইভিএফের মতোই।