জ্বী! আমাদের এই ৮টি ভুলের জন্যই এখনকার বাচ্চারা মোটা হবার সমস্যায় ভুগছে।

রহমান সাহেবের মেয়ে তানিয়া ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। বাড়ির খাবার তার ভালোই লাগেনা। টিফিনে তার চাই চিপস, বার্গার বা পেস্ট্রি। তার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। অল্পতেই হাঁপিয়ে যায় সে। প্রায়ই মাথা ঘাড় ব্যথা হয় বলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার জানালেন ১৩ বছরের তানিয়া উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। বরতমানের শিশুদের মধ্যে এমন ঘটনা এখন অনেকটাই সাধারণ হয়ে গেছে। শুধু উচ্চ রক্তচাপ নয়, ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ এমনকি হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছে অনেক বাচ্চারা। বাবা-মায়েরা তাদের নিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন। কিন্তু শিশু-কিশোরদের অত্যধিক মোটা হওয়ার সমস্যাটির জন্য বাবা-মায়ের ভুলকেই দায়ী করা হয়। ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা (UNC) স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকেরা বলেন যে, “শিশুদের সাথে আমরা যা করি তার কারণেই শিশুরা মোটা হচ্ছে সাধারণত বাবা-মায়েরা যে ভুলগুলো করে থাকেন তা  হল :

১। শিশুদের ঘুমের সময় বোতলের মাধ্যমে খাওয়ানো

প্রায় ৪৩ শতাংশ পিতামাতাই শিশুদের ঘুমের সময় বোতলের মাধ্যমে খাওয়ানোর অভ্যাস করেন। এর ফলে শিশুর প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া হয় এবং দাঁতে ছিদ্র হওয়া বা কানের ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়

২। চারমাস বয়সের আগেই শক্ত খাবার দেয়া

অনেকেই মনে করেন যে, শিশুকে সিরিয়াল খাওয়ালে তাদের ঘুম ভালো হবে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, যেসব শিশুদের চারমাস বয়সের আগেই শক্ত খাবার দেয়া হয় তাদের বছর বয়সের মধ্যেই মোটা হওয়ার সম্ভাবনা গুণ বৃদ্ধি পায়। জন্মানোর পড়ে যত তাড়াতাড়ি শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করা হয় তা আমাদের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর ধরে আমাদের ওজন বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। প্রায় ১২% পিতামাতাই এই কাজটি করেন বলে  UNC  এর করা গবেষণায় জানা যায়।

সুত্রঃ টাইম ম্যাগাজিন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক

মিষ্টি খাবারের লোভ দেখানো

শিশুকে শাকসবজি খাওয়ানোটা বেশ কঠিন কাজ। এজন্য অধিকাংশ অভিভাবকই যে ভুলটি করে থাকেন তা হল- শিশুকে মিষ্টি খাবার দেয়ার প্রলোভন দেখান। তারা বলেন, তুমি যদি গাজর খাও তাহলে তোমাকে আইসক্রিম দিব দুর্ভাগ্যবশত এই কৌশলটির ফলে শিশু গাজর বা অন্য কোন সবজির তুলনায় পুরষ্কারটির প্রতিই আগ্রহী হয়ে উঠে বেশি। এই আচরণের ফলে মিষ্টি জাতীয় ধরণের খাবারকেই বেশি মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করতে শেখে শিশু-কিশোররা। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শিশুকে খাওয়ার জন্য পুরস্কৃত করা হলে শিশুর মূল খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়।  

বেশি বেশি স্ন্যাক্স খেতে দেওয়া

সারাদিনে বাচ্চাদের বেশি বেশি স্ন্যাক্স খেতে দিলে তাদের শরীরে ক্যালরি জমা হতে থাকে। এছাড়াও পুষ্টিকর খাবার যেমন- শাকসবজি, ফলমূল, মুরগী ইত্যাদি খাবারের  প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের সকাল, দুপুর রাতের খাবার সময় মত খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন এবং মূল খাবার স্ন্যাক্সের মধ্যে ঘন্টার বিরতি যেন থাকে সেভাবেই খেতে দিন। দিনে - বারের বেশি স্ন্যক্স খেতে দেবেন না এবং ১৫০ ক্যালরির মধ্যে সীমিত রাখুন।  

কোমল পানীয় পান করতে দেয়া

পেডিয়াট্রিক্স নামক জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় যে, বর্তমানের যুবকরা তাদের  দৈনিক ক্যালরির ১০-১৫% চিনিযুক্ত কোমল পানীয় (স্পোর্টস ড্রিংক বা ফ্রুট ড্রিংক) থেকে গ্রহণ করে। গত ১০ বছরে শিশুদের মধ্যে এই ধরণের পানীয় গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে তাদের দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ২৪২ থেকে ২৭০ ক্যালরির বেশি হয়ে যায়। এই ধরণের পানীয়তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে এবং পুষ্টি উপাদান কম থাকে। তাই আপনার সন্তান যেন এই ধরণের ধরণের পানীয় বেশি বেশি গ্রহণ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাকে পানি, লো ফ্যাট মিল্ক ঘরে তৈরি ফলের জুস খেতে উদ্বুদ্ধ করুন।

বাচ্চার  দাবীর কাছে নতিস্বীকার করা

খাওয়ার সময় আপনার সন্তান যদি পিজা, চিকেন নাগেটস, বার্গার, পাস্তা বা ফ্রাই খেতে চায় তাহলে আপনার উচিৎ নয় এই অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর আবদার মেটানো। সকাল, দুপুর রাতের প্রধান খাবারগুলো যেন পুষ্টিকর হয় সেদিকে খেয়াল  রাখতে হবে বাবামায়েরই। শিশুর পছন্দের দিকেও অবশ্যই নজর দিতে হবে। এজন্য ঘরেই তৈরি করে দিতে পারেন তার পছন্দের খাবারটি। এগুলো তৈরিতে ব্যবহার করুন চর্বিহীন মাংস, লো ফ্যাট এর দুধ, পনির, দই ইত্যাদি।

দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া  

কম ঘুম যেমন শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি অধিক ঘুম ভালো নয়। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। আপনার সন্তানকে রাতের বেলায় তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে বলুন যাতে সে সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারে। সকালের নাশতা খেতে দেরি হলে তা দিনের অন্যান্য সময়ের উপর প্রভাব ফেলবে। সকালে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধাও কম পায় বলে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়ার আবদার করেনা শিশু। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ঘুম থেকে জাগার সময়টি নির্ধারণ করে দিন এবং সে অনুযায়ী তাকে প্রস্তুত করুন

বাচ্চাদের খেলাধুলার সুযোগ করে না দেয়া 

এমনিতেই এখনকার বাচ্চাদের খেলাধুলার সময় কমে আসছে। বাসা থেকে স্কুল যাচ্ছে তাও রিকশা বা গাড়িতে চড়েই। তার সাথে যোগ হয়েছে একের পর এক জাংকফুড। তাই বাচ্চাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। তবে আপনি যদি অপরের উল্লেখ করা ভুলগুলো এড়িয়ে চলেন, আর তার সাথে বাচ্চার জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছু খেলা বা হাটার সুযোগ করে দেন, তাহলে আপনার বাচ্চা সুস্থ্য এবং হাসিখুশি থাকবে।

ধরুন, স্কুলে নিয়ে যাবার পথে গাড়ি/রিকশা ছেড়ে কিছুটা সময় হেটে যান। অথবা দিনের কোন একসময়ে হয়তো বাসার কাছে ছাদে বা পার্কিং লটে বাচ্চাকে একটু খেলতে দিন। চেষ্টা করুন মাঝে মাঝে বাসার কাছে কোন মাঠ বা পার্কে নিয়ে যেতে। এর ফলে আপনার বাচ্চার সাথে আপনার সময় কাটানোও হবে।

পরিশিষ্টঃ

বাচ্চার স্বাস্থ্য ভাল হলে মা-বাবা এবং নানি-দাদি তো ভীষণ খুশি। কিন্তু মনে রাখবেন মোটা হয়ে যাওয়া আর স্বাস্থ্য ভাল থাকা এক বিষয় না। ছোট বেলা থেকেই বাড়তি ওজন বাচ্চার অ্যাজমা, টাইপ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মোটা হবার কারনে সামাজিকভাবে হেয় হবার বিষয় তো আছেই।

তাই বাচ্চার ভালর জন্য ওর বাড়তি ওজন তৈরি হবার কারণগুলো এড়িয়ে চলা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই।

তো আপনার বাচ্চাকে ফিট এন্ড হ্যাপি করে তুলতে আপনি আজ থেকেই কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

আমাদের কল সেন্টারে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার ০৯৬১২-২২২-৩৩৩