প্রেগন্যান্ট মায়েদের জন্য অবশ্য পালনীয় ৯ টি টিপস

রুমানা বিয়ের ৬ মাস পরেই তার মা হতে যাওয়ার সুখবরটি দেয় তার স্বামীকে। এটা জানার পর তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সবাই অনেক খুশি হয় এবং রুমানার  অনেক বেশি যত্ন নেয়া শুরু করে। হ্যাঁ গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনে পূর্ণতা এনে  দেয়। তাই এই সময়ে হবু মায়ের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার সঠিক যত্নই সমস্যামুক্ত প্রেগনেন্সি এবং একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারে। তাই চলুন জেনে নিই প্রেগন্যান্ট মায়েদের জন্য অবশ্য পালনীয় ৯ টি টিপস সম্পর্কে।

১। ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করুন

আপনি গ্রেগনেন্ট হয়েছেন এটা জানার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, যাতে আপনার অনাগত সন্তানের জন্মপূর্ব যত্নের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন আপনি। শুরু থেকেই যদি আপনি সঠিক পরামর্শ অনুসরণ করেন তাহলে গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকা সম্ভব হবে। চিকিৎসক হয়তো আপনাকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও অন্যান্য টেস্ট ও করাতে দেবেন যা আপনার করানো প্রয়োজন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নিতে হবে।

২। ভালো ভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে

গর্ভবতী মায়েদের সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য খাওয়া উচিৎ। দিনে ৫-৬ বার ফল ও সবজি খান। রেজিস্টার্ড ডায়েটেশিয়ান ফ্রান্সেস লারজম্যান-রথ বলেন, “ফল যেমন- আপেল ও কলাতে যে প্রাকৃতিক চিনি থাকে তা খুব সহজেই এনার্জি  লেভেল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে”

প্রচুর শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন- রুটি, পাস্তা এবং ভাত হচ্ছে আপনার প্রধান খাবারের মূল ভিত্তি। আস্ত শস্য দানার কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করুন যাতে আপনি প্রচুর ফাইবার পেতে পারেন। এজন্য সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল ও লাল আটার রুটি গ্রহণ করুন।

গর্ভবতী নারীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন- মাছ, চর্বিহীন মাংস, ডাল, ডিম, বাদাম এবং দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

সপ্তাহে অন্তত দুইদিন মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন, যার মধ্যে একটি ফ্যাটি ফিশ থাকা জরুরী। মাছ প্রোটিন, ভিটামিন ডি, খনিজ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড গর্ভজাত সন্তানের নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গর্ভাবস্থায় আপনাকে দুইজনের খাবার একাই খেতে হবে এমনটা নয়। গর্ভাবস্থার প্রথম ৬ মাসে আপনাকে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে হবেনা। গর্ভাবস্থার শেষের ৩ মাসে আপনাকে দৈনিক অতিরিক্ত ২০০ ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। আপনার এনার্জি লেভেল ঠিক রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খেতে পারেন।

৩। সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন

প্রেগনেন্সি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট সুষম খাদ্যের বিকল্প নয়। কিন্তু আপনি যদি ঠিকমত খেতে না পারেন বা অনেক বেশি অসুস্থ থাকেন তাহলে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

আপনার সাপ্লিমেন্টে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনি বেবি নেয়ার চেষ্টা করার সময় এবং প্রেগনেন্সির প্রথম ৩ মাসে এটি আপনার প্রয়োজন। ফলিক এসিড গর্ভস্থ শিশুর নিউরাল টিউবের ত্রুটি যেমন- স্পিনা বিফিডা হওয়ার ঝুঁকি কমায়।  

আপনার সাপ্লিমেন্টে ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি থাকা উচিৎ। ভিটামিন ডি শিশুর হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন। যদি আপনি মাল্টিভিটামিন গ্রহণ না করেন তাহলে আলাদা ভাবে ফলিক এসিড ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

আপনি যদি মাছ না খান তাহলে আপনাকে ফিশ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। মাছের শরীর থেকে তৈরি সাপ্লিমেন্ট বেঁছে নিতে হবে, মাছের লিভার বা যকৃত থেকে তৈরি সাপ্লিমেন্ট নয়। কারণ মাছের লিভারের তেলে যেমন- কড লিভার ওয়েলে ভিটামিন  এ এর রেটিনল ফর্ম থাকতে পারে। যা প্রেগনেন্সির সময়ে গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়না।

৪। ফুড হাইজিনের বিষয়ে সতর্ক হোন

কিছু খাবার আছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ নয়। কারণ এই খাবারগুলো শিশু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

লিস্টেরিওসিস এক ধরণের সংক্রামক ব্যাধি যা লিস্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা হয়ে থাকে। এটি একটি বিরল রোগ এবং সাধারণত এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর কোন  বিরূপ প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এটি গর্ভাবস্থায় জন্মগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। লিস্টেরিওসিস এর কারণে গর্ভপাত ও হতে পারে।

নিম্নলিখিত খাবারগুলো লিস্টেরিয়া পোষণ করে, তাই গর্ভাবস্থায় এদের এড়িয়ে যাওয়াই ভালো –

-   যে কোন ধরণের মগজ (Pate)

-   অপাস্তুরিত দুধ

-   ভালোকরে রান্না না করা খাবার

-   নরম ও চিতি পড়া পনির

লিস্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়া তাপে ধ্বংস হয়ে যায়। তাই উচ্চমাত্রার তাপে আপনার খাবার রান্না করুন।

সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ফুড পয়জনিং সৃষ্টি করতে পারে। কাঁচা বা অসিদ্ধ মাংস, কাঁচা ডিমে, কাঁচা খোলসযুক্ত মাছে সালমোনেলা থাকে। তাই খোলসযুক্ত মাছ ও মাংস ভালোভাবে উচ্চতাপে রান্না করুন এবং ডিম ভালো করে সিদ্ধ করে খান। 

মাছ, মুরগী কাটার পরে আপনার হাত, ছুরি বা বটি, বোর্ড ইত্যাদি জিনিসগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। ফল ও সবজি খুব ভালো করে ধুয়ে ময়লা ও মাটি দূর করে নিন। পোষা প্রাণীর যত্নের সময় ও বাগানের কাজ করার সময় গ্লাবস ব্যবহার করুন।

৫। নিয়মিত ব্যায়াম করুন

হবু মায়েদের নিয়মিত ব্যায়াম করাটা অনেক উপকারী যেমন-

-   ব্যায়ামের ফলে শক্তি ও সহ্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা প্রেগনেন্সির সময়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন বহন করা এবং প্রসবের শ্রম সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য।

-   বিষণ্ণতা তাড়িয়ে প্রফুল্ল থাকতে সাহায্য করে।

-   বাচ্চার জন্মের পড়ে দেহের আকৃতি পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে পেতে সাহায্য করে।

-   হাঁটা, সাঁতার কাটা, ইয়োগা করা ইত্যাদি ব্যায়ামগুলো গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ।

৬। ক্ষতিকর অভ্যাস ত্যাগ করুন

অ্যালকোহল খুব সহজেই প্লাসেন্টা বা নাড়ি ও রক্তস্রোতের মাধ্যমে শিশুর শরীরে পৌঁছাতে পারে। এর ফলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে এবং মিসক্যারেজ ও হতে পারে।

অন্যদিকে প্রেগনেন্সির সময়ে ধূমপান করলে আপনার ও গর্ভের শিশুর মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি করতে পারে। ধূমপানের অভ্যাসের কারণে মিসক্যারেজ হওয়া, কম ওজনের শিশু জন্ম গ্রহণ করা, প্রিম্যাচিউর বার্থ, গর্ভের শিশুর মৃত্যু বা জন্মের সময় শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

 

 

৭। ক্যাফেইন গ্রহণ কমান

চা, কফি, কোলা এবং এনার্জি ড্রিংক মধ্যম মাণের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। অনেক বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও অনেক বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করে।

 বিশ্রাম নিন

গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েকমাসে হবু মা বেশ ক্লান্তি অনুভব করেন, এটি হয়ে থাকে উচ্চ মাত্রার প্রেগনেন্সি হরমোনের কারণে। যদি রাতে ভালো ঘুম না হয় তাহলে দিনের মাঝামাঝি সময়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন। এটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনার পা দুটো একটু উঁচু স্থানে রেখে আধাঘন্টা বিশ্রাম নিন।

যদি পিঠের ব্যথার কারণে আপনার ঘুমের ব্যঘাত ঘটে তাহলে বাম কাঁত হয়ে ও হাঁটু বাঁকা করে শোন এবং কোমরের কাছে একটি বালিশ বা কুশন দিয়ে রাখুন।

কখন ডাক্তারের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন

গর্ভাবস্থা বিভ্রান্তিকর হতে পারে, বিশেষ করে প্রথমবার মা হওয়ার সময়টা। কোন লক্ষণটি স্বাভাবিক আর কোন লক্ষণটি স্বাভাবিক নয় এটা বুঝা মুশকিল হয়। যে লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে –

  • -   যে কোন ধরণের ব্যথা অনুভব করলে
  • -   খিঁচুনি আসলে
  • -   রক্তপাত হলে বা তরল নিঃসৃত হলে
  • -   মাথা ঘোরালে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে
  • -   শ্বাসকষ্ট হলে
  • -   হৃদস্পন্দন বেশি হলে বা বুক ধড়ফড় করলে
  • -   ঘন ঘন বমি বমি ভাব থাকলে বা বমি হলে 
  • -   হাঁটতে অসুবিধা হলে
  • -   জয়েন্ট ফুলে গেলে
  • -   শিশুর নড়াচড়া কমে গেলে।

 

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০