ধূমপান করলে বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রে কি সমস্যা হতে পারে

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবুও যারা এতে অভ্যস্ত তারা এটা ছাড়তে পারেন না। আজকাল অনেক নারীও ধূমপান করেন। এক্ষেত্রে তিনি যদি হন সন্তান সম্ভবা, তবে ধূমপান তার নিজের ও গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, "গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারণ গুলোর মাঝে শীর্ষে থাকবে ধূমপান।" ধূমপানের ফলে প্রি-ম্যাচিউরড শিশু জন্ম নেয়, শিশুর আকৃতি অনেক ছোট হয় অথবা শিশু মারাও যেতে পারে।

কেন গর্ভাবস্থায় ধূমপান করা অনেক বেশি বিপজ্জনক?

একটি সিগারেটে প্রায় ৪০০০ রকমের ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান থাকে। এদের মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে সায়ানাইড, লেড বা সীসা এবং আরো ৬০ ধরণের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। একজন মা যখন ধূমপান করেন, তখন এ উপাদান গুলো তার রক্তের সাথে মিশে যায়। আর গর্ভস্থ শিশুর অক্সিজেন ও পুষ্টির একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই রক্ত, যা কিনা মায়ের ধূমপানের জন্য দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এই ৪ হাজার উপাদানের মধ্যে দুটি খুবই ক্ষতিকর, নিকোটিন ও কার্বন মনোঅক্সাইড। গর্ভাবস্থায় ধূমপান জনিত প্রায় সব রকমের জটিলতার জন্য এ দুটি উপাদান দায়ী। 


গর্ভবতী মায়েরা ধূমপান করলে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তা হচ্ছে- নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুর জন্ম হওয়া ( অপূর্ণাংগ বা প্রি-ম্যাচিউরড বেবি), ওজন কম হওয়া বা মৃত শিশু জন্ম হওয়া। সিগারেটে থাকা

নিকোটিন ও কার্বন মনোঅক্সাইড গর্ভস্থ্য শিশুর দেহে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। নিকোটিন রক্তনালীকে সংকুচিত করে দেয়। এছাড়া নাভিরজ্জু বা আম্বিলিক্যাল কর্ডো সংকুচিত হয়ে যায়। এছাড়া যে রক্তকণিকা অক্সিজেন বহন করার কথা সেগুলো কার্বন মনোঅক্সাইড বহন করে।ফলে গর্ভস্থ শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যহত হয় ও মৃত্যু ঘটে।

আসুন জেনে নিই ধূমপান করলে শিশুর কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে

১) শিশুর আকৃতি ও  ওজন

এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে যেসব নারী ১ প্যাকেট সিগারেট খান, তাদের সন্তানদের ওজন আধা পাউন্ড কমে যায়। আর কোন মা যদি তার গর্ভাবস্থার পুরো সময় দিনে দুই প্যাকেট সিগারেট খান, তবে সন্তানের ওজন ১ পাউন্ড বা তার বেশি পরিমাণ কমে যেতে পারে।

২) শিশুর শরীর ও ফুসফুস

কম ওজনের শিশুর দেহের আকৃতিও ছোট হয়। শিশুর ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করে না। এর ফলে শিশুরা জন্মের পর থেকেই শ্বাস কষ্টে ভুগতে থাকে। এটা মূলত হয়ে থাকে ফুসুফুস দেরীতে গঠিত হওয়ার কারণে অথবা নিকোটিনের জন্য। যেসব শিশু গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে তাদের মায়েরা ধূমপান করেন, সেসব শিশুদের এজমা/ হাঁপানি বেশি হয় এবং infant death syndrome (SIDS)এ আক্রান্ত হবার হাত দুই-তিন গুণ বেশি হয়।

৩) হৃদযন্ত্রে সমস্যা

ধূমপায়ী নারীদের শিশুরা জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। গবেষণা বলছে, অধূমপায়ী মায়েদের সন্তানদের তুলনায় ধূমপায়ী মায়েদের সন্তানদের হার্টের অসুখ হওয়ার হার ২০-৭০ ভাগ বেশি। এ ধরণের সমস্যাগুলোতে হার্টের ডান দিক থেকে ফুসফুসে এবং হার্টের উপরের প্রকোষ্ঠের সম্মুখভাগে ( openings) রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয়। 

৪) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস

মায়ের ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব শিশুকে সারা জীবন ধরে বহন করতে হতে পারে। এ ধরণের শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কম হয়, আচরণগত সমস্যা থাকতে পারে, যে কোন কিছু শেখার ক্ষমতা কম হয় এবং আইকিউ এর মানও কম হয়।

করণীয় কি?

উপরে এতক্ষণ আমরা যা বললাম, তার সবই আশঙ্কাজনক। কিন্তু কিছু আশার আলোও আছে। ধূমপান ছেড়ে দিন, এটাই হবে আপনার অনাগত সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। 

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে। আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০